কাপলস পেরাডাইস লাংকাউই মালয়েশিয়া

হাজার হাজার প্লান ক্যানছেল হবার পর আর একটা প্লান করলাম মালায়সিয়া যাব। ভিসা করতে দিলাম এক বন্ধুর ট্রাভেল এজেন্সিতে। সমস্যা হল খালি পাসপোর্টে নাকি ভিসা দেয়ানা। যাইহোক দেখা যাক কি হয়। নতুন পাসপোর্ট, তাই

। ভিসার জন্য এন ও সি , ভিসিটিং কার্ড , ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট, সলভেন্সি দিতে হয় সাথে ২ কপি ছবি ।স্টুডেন্ট হলে, স্টুডেন্ট আইডির ফটো কপি, টিশিওন ফী স্লিপ এর ফটো কপি এবং ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট, সলভেন্সি দিতে হয়, আর ছবি তো লাগবেই ।

খুব এক্সসাইটেড আমি, ভিসা করতে দিয়ে শপিং টপিং করলাম। হাল্কা পাতলা গোছগাছ যা যা সাথে নিতে হবে। সময় মত কল দিলাম বন্ধুকে ভিসার খবর জানতে , বন্ধু কল ধরে বলল ভিসা হয়নাই করায়দিতে পারলামনা সরি, সন্ধ্যায় এসে পাসপোর্ট নিই যেতে । মনটাই খারাপ হয়ে গেল । গেলাম সন্ধ্যায় ওর কাছ থেকে পাসপোর্ট নিয়ে পকেটে ভরে ফেললাম কিছু না দেখে, বন্ধু বলে আরে খুলে দেখ, খুলে দেখি ভিসার স্টিকার। খুশি হয়ে গেলাম আবার ।

আমার সিটি টুর ভালো লাগেনা তাই সরাসরি লাংকাউই ফ্লাইট এর টিকেট কাটি। কাছাকাছি দিনে কাটার কারণে দাম অনেক বেশি পরে আমার । এমনিতে ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুর বিমান টিকেট ১৮-২২ হাজারের মধ্যে পাওয়া যায়। কুয়ালালামপুর থেকে লাংকাউই বাসে এবং বিমানে যাওয়া যায় । কুয়ালালামপুর ট্রানযিট নিয়ে পউছালাম লাংকাউই। এয়ারপোর্ট থেকে ডলার ভাঙ্গিয়ে সিম কিনে গাড়ি ঠিক করলাম টয়োটা ইয়ারিস প্রতি দিন ২৪০০ টাকা, নিজের চালাতে হবে আর তেলও নিজের। গাড়ি বা বাইক নেবার আগে ছবি তুলে রাখবেন যাতে আগের কোন ডেমেজ দেখিয়ে ক্ষতি পূরণ না চাইতে পারে। ১০০০ টাকার প্রোটন থেকে শুরু করে অনেক ধরনের গাড়ি এবং বাইক ভাড়া পাওয়া যায়। বাইক ৩০০-৫০০ টাকা প্রতি দিন। গাড়ি ভাড়া নিতে লাইসেন্স দেখাতে হয় বাইকে এর জন্য লাগেনা তবে থাকলে ভালো, কোন দুর্ঘটনা ঘটলে পুলিশ ঝামেলা করবে না থাকার কারণে। ব্র্যান্ড নিউ গাড়ি, নতুন গাড়ির গন্ধটা তখনো যায়নি। গুগল ম্যাপ চালু করে বের হয়ে গেলাম এয়ারপোর্ট থেকে, রাস্তা কি সুন্দর পরিষ্কার!ঢাকার জ্যামে গাড়ি চালানর পর ওইখানে গাড়ি চালিয়ে মনে হবে খালি মাঠে গাড়ি চালাচ্ছেন।

অনেক বাতাস আর খুব সুন্দর আবহাওয়া। ভিডিও গেম বা মুভির মত উঁচু নিচু রাস্তা দুইপাশ সবুজ গাছপালা কখন নীল সমুদ্র আর পাহাড় ।প্রথম বার বিদেশে আমার যেটা অবাক লাগল সেটা হল সবাই ট্রাফিক সিগ্নাল মানছে , কি আশ্চর্য লাল লাইটে থেমে যাচ্ছে আবার সবুজ জ্বল্লে চলছে আর পরে বিচের কথা বাদই দিলাম। হোটেল বুক করে গিয়েছিলাম, সমুদ্র দেখা যায় রুম থেকে। মালায়সিয়ার খাবার অনেক সুস্বাদু, যেই রেস্টুরেন্টে ভিড় দেখবেন বেশি ঢুকে যাবেন সেটাতেই, খাবার এর দাম ২৫০ থেকে ৬০০ টাকায় ভালো খাবার পাওয়া যায় ।এখানে খাবার এবং ড্রিঙ্কস খুব সস্তা। লাংকাউই ছিলাম ৬ দিন এর মধ্যে আকর্ষণীয় ছিল কেবল কার যা ২৫০০ ফিট পাহাড়ের উপড়ে নিয়ে যাবে,ওঠার পর ছবি তুলতে থাকে ফটোগ্রাফেররা তুলে চড়া দাম চেয়ে বসে ছবির জন্য। ইচ্ছা না থাকলে মানা করে দিবেন আগেই। ওইখানে স্ক্যাই ব্রিজ আছে ২৫০০ ফিট উপড়ে এক পাহাড় থেকে আর এক পাহাড়ে যাওয়া যায়। খুবি ভয়ানক ! ইগল স্কয়ার আছে, বিশাল বড় একটা ইগল সমুদ্রের পাড়ে। পুলাও পায়ার মেরিন পার্ক আছে , সেখানে আইল্যান্ড টুরে যাওয়া যায়।খুব সুন্দর ভাসমান রেস্টুরেন্টে খাওয়াদাওয়া করা য়ায়। বড় গুহা আছে বাঁদুরের ভরা , নেমে ঘুরে আসা যায়। ম্যানগ্রোভ বন আর পাহাড়ের মধ্যে দিই নৌকায় ঘোরাবে আপনাকে আর দেখাবে ইগল এর মাছ শিকার করা ।

আমার সবচে পছেন্দের ছিল জেট স্কি রাইড ৪ ঘণ্টার আইল্যান্ড হপিং পুরা সমুদ্রের বড় বড় ঢেউ এর মধ্যে মধ্যে দিয়ে চালিয়ে যাওয়া।চালান একদম সোজা, কক্সবাজার এর মত লোক থাকবেনা সাথে , নিজেরই চালাতে হবে। শুরুতেই আপনাকে টেনিং দিয়ে নিবে কিভাবে চালাতে হয় না হয়, সাথে দিবে লাইফ জ্যাকেট ওয়াটার প্রুফ বাগ।এখানে সবচে ভালো সার্ভিস দেয় মেগা ওয়াটার স্পোর্টস। এছাড়া অনন্যা কোম্পানির ছোটো রাইড ও আছে ।আপনি চাইলে এখানে স্কাই ডাইভিং করতে পারবেন, খরচ ৩২,০০০-৪০,০০০ টাকা। এখানে আরও আছে আন্ডার ওয়াটের মিউযিয়াম এবং ৩ ডি মিউযিয়াম, আছে ডিউটি ফ্রি শপ, এখানে অনেক অনেক সস্তায় অনেক কিছু পাবেন । আছে স্কুবা ডাইভিং, স্নরক্লিং করার সুযোগ। তবে এখানে নাইট লাইফ একদমই ভাল না ।

এখানে ৪-৬ দিনের বাজেট টুর করতে বিমান ভাড়া সহ সবমিলিয়ে কমপক্ষে ৪০,০০০-৫০,০০০ টাকার মত খরচ হতে পারে।
ছবিগুলো তোলা হয়েছে ফুজি এক্স ২০ ক্যামেরা দিয়ে।

যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলার অভ্যাস করি আমরা সেটা নিজের বাসা/শহর থেকেই শুরু হতে পারে, যাতে আমাদের যেখানে সেখানে ময়না না ফেলার কথা মনে করিয়ে দিতে না হয় ।

লিখেছেনঃ Rafaat Pronoy