তিনাপ সাইতার- THE DEATH ZONE OF BANDARBAN.
লিখেছেন : যারনাজ জাহান
ট্যুরটা এতো বেশি এ্যাডভেঞ্চারাস ছিল যে লিখা শুরু কোত্থেকে করা উচিত আর শেষ কিভাবে করবো সেটাই ডিসাইড করতে পারতেসি না। তাই ভাবলাম একদম শুরু দিয়েই শুরু করি।
২৯/০৪/২০১৮
২৯ তারিখ রাতের বাসে যখন আমাদের জার্নি শুরু হয় তখন থেকেই আমরা জানি এবারের ট্যুরটা খুব কঠিন হবে। কারণ, আমাদের মধ্যে এক মারুফ ছাড়া কারোই ট্রেকিং এর খুব একটা অভিজ্ঞতা ছিল না। ২০১৬ সালে কয়েকজনের কেওক্রাডং ট্যুর আর ২০১৭ তে খৈয়াছড়ার পরে এটাই ছিল প্রথম ট্রেকিং ট্যুর। আসিফ মনে হয় এর মাঝে তৈদুছড়া আর হাম হাম ঘুরে আসছিলো। এদিকে গ্রুপের একজন ছিল যে কিনা ট্রেকিং কি তাও ঠিকমতো জানে না। আরেকজনের ট্যুরের আগের ২ দিন থেকে জ্বর আর আরেকজনের সেদিন সকাল থেকেই মাইগ্রেনের ব্যাথা। ৩ জন আগেরদিন সারারাত জার্নি করে রাজশাহী থেকে ঢাকা আসছে। আর আমি সারাদিন ক্লাস, টিউশন করার পর বাসায় এসে বাবা মায়ের সাথে যুদ্ধ করে রওনা দিসি (কারণ, তারা কোনো এক অজানা কারণে লাস্ট মোমেন্টে যেতে মানা করতেসিলো)। তাই বলা যায় মোটামুটি ২/৩ জন ছাড়া গ্রুপের কেউই পুরাপুরি ফিট ছিলাম না ট্যুরের জন্যে। তাও মনে জোর ছিল পারবো। তো রাতের বাসে শুরু হয় আমাদের যাত্রা। ঘুমানোর অনেক চেষ্টা করে কেউ ঘুমায়ে, কেউ না ঘুমায়ে, কেউ আধো ঘুম আধো জাগরণে রাত পার করে দেই।
৩০/০৪/২০১৮
৩০ তারিখ ভোরে ফজরের নামাযের ব্রেকে যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন আমরা মাত্র সীতাকুণ্ড। এখনো অনেক রাস্তা বাকী। ক্ষুধায় সবার পেট চো চো করতেসে। আমার সবচেয়ে বেশি। ক্ষুধার চোটে মেজাজ খারাপ হয়ে আছে আমার। কি আর করা!! ক্ষুধা পেটে নিয়েই বসে আছি। ভোর ৬টায় বাস যখন কর্ণফুলী ব্রিজ পার হচ্ছে তখন মনে মনে নিজেকে এই বলে স্বান্তনা দিচ্ছিলাম, যে অনেকটাই চলে আসছি! আর তো বেশি নাই! একটু পরেই তো খেতে পারবো!!! আনোয়ার মিয়া তখন কর্ণফুলী ব্রিজের ছবি তুলায় ব্যস্ত আর বাকীরা বেঘোরে ঘুম৷ যাই হোক, এভাবে মেজাজ খারাপ করে বসে থাকতে থাকতেই সকাল ৭:৩০টা বাজে আমরা বান্দরবান শহরে নামলাম। ওদিকে বান্দরবান থেকে রোয়ানছড়ির উদ্দেশ্যে প্রথম বাস ছাড়ে সকাল ৮ টায়। প্রথম বাস ধরতে না পারলে আবার যেতে যেতে বেশি দেরী হয়ে যাবে। এদিকে এতোক্ষণে ক্ষুধাও চরমে উঠে গেসে। কি আর করা! শেষমেশ অটো নিয়ে গেলাম বাস স্ট্যান্ডে। ৮টার বাসের টিকেট কিনে এক প্যাকেট পাউরুটি আর কয়টা কলা দিয়ে পেটকে স্বান্তনা দিতে দিতে বাসে উঠে বসলাম। ঢাকা থেকেই মনে মনে বাসের ছাদে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও ক্ষুধার জ্বালায় সেই ইচ্ছাও নষ্ট হয়া গেলো। আর আমার ছাদে উঠা না হলেও আনোয়ার আর মারুফ ঠিকই এক ফাঁকে দিয়ে ছাদে উঠে গেলো। যাক এবার না পারলেও নেক্সট টাইম অবশ্যই ছাদে উঠা মিস করা যাবে না। তবে যা বুঝলাম, বাসের ছাদে উঠতে পারি আর না পারি বান্দরবান আমাকে কখনোই হতাশ করবে না। পেটে ক্ষুধা নিয়েও শুকনা পাউরুটি চিবাইতে চিবাইতে পুরাটা রাস্তা বান্দরবানের সৌন্দর্য্যে পুরা থ মেরে ছিলাম। আমি সাজেক দেখসি, সীতাকুণ্ড দেখসি কিন্তু আমি জানি না বান্দরবানের পাহাড়ে কি আছে যেটা বান্দরবানের পাহাড়কে অন্য এলাকার পাহাড় থেকে আলাদা করে। কিন্তু আমার কাছে বান্দরবানের পাহাড় সবসময়ই অন্যরকম লাগে। অন্যরকম সুন্দর। সবচেয়ে বেশি সুন্দর। যাই হোক, পাহাড় দেখে মুগ্ধ হতে হতে ১ ঘন্টার মাথায়ই পৌছে গেলাম রোয়ানছড়ি। সেখানে গিয়ে আমাদের গাইড জেমসন দাদার সাথে দেখা করেই আগে নাস্তা করতে বসলাম কারণ ক্ষুধায় তখন মাথা নষ্ট। তাড়াতাড়ি মুরগী আর ভাত দিয়ে পেটপূজা শেষ করলাম। এরপর জেমসন দাদা নিয়ে আসলো এক বিশাল ফর্ম। সবার সেটা ফিলাপ করতে হবে। সবাই করলামও ফিলাপ। এদিকে দেখা দিলো আরেক বিপত্তি। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ NID নিয়ে গেলেও NID এর ফটোকপি নিয়ে যাইনি, আবার কারো কারো ওয়াশরুমে যাওয়া দরকার, আবার ট্রেকিং এর জন্যে জুতাও তো কেনা হয়নি!!! তাই একদল গেলো NID ফটোকপি করতে, আরেকদল গেলো পরবর্তী বিশাল জার্নি শুরু করার আগের ফাইনাল প্রস্তুতি নেয়ার জন্যে ওয়াশরুম খুঁজতে 😛, আর আমিসহ কয়েকজন গেলাম ট্রেকিং এর জন্যে জুতা কিনতে। এই সবকিছু মিলায়ে বেশ ভালোই দেরি হয়ে গেলো আর দেরি হওয়াতে আসিফের মেজাজ গেলো বিশাল খারাপ হয়ে। তো যাই হোক, দেরী হলেও সবকিছু গুছায়ে নিয়া ১২:৩০টায় আমরা রওনা দিলাম আর্মি ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে। ১০ মিনিটের মত লাগলো আর্মিক্যাম্পে পৌছাতে। পৌছানোর পরে জেমসন দাদা সেই ফর্মখানা চাইলেন আর উদয় হইলো এক নতুন সমস্যা। সেই ফর্মখানা কিছুতেই পাওয়া যাচ্ছে না। কারো কাছেই নাই। আসিফ ততোক্ষণে রাগে আগুন। অনেক সার্কাজম করেও তার সে রাগ কমানো গেলো না। দিনের বাকীটা সময় সে মোটামুটি রাগ হয়েই থাকলো। তো যাই হোক, এই সমস্যার সমাধানও হলো। জেমসন দাদা আরেক খানা ফর্ম দিয়ে আমাদের উদ্ধার করলেন। এরপর আসলেন রোয়ানছড়ি ক্যাম্পের আর্মি অফিসার। উনি এসে আমাদের ১ ঘন্টা বসায়ে ওখানে গত কয়েকদিনে/মাসে কি কি দূর্ঘটনা ঘটসে, কয়জন ট্রাভেলার নিখোঁজ হইসে, কয়বার পুলিশের সাথে পাহাড়িদের গোলাগুলি হইসে, কিভাবে আমাদের মধ্যপথ থেকে কীডন্যাপ করে নিয়ে যাইতে পারে, কীভাবে উনি অসুস্থ্য হইলে উনাকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার পাঠানো হলেও আমরা মরে গেলেও আমাদের ডেডবডি নেয়ার জন্যে পাঠানো হবে না, আমাদের কতো ধরণের বিপদ-আপদ হইতে পারে কারণ আমাদের দলে মেয়েরাও আছে ইত্যাদি ইত্যাদি বলার পরেও যখন দেখলো আমরা নাছোড়বান্দা, তখন না পারতে বাধ্য হয়ে তিনাপ যাওয়ার পারমিশন খানা দিয়েই দিলেন। তারপর ফাইনালি দুপুর ১২:৩০টায় শুরু হলো রনিনপাড়ার উদ্দেশ্যে চান্দের/চাঁদের গাড়িতে যাত্রা। এই গাড়ির নাম যে রাখসে, সে একদম পারফেক্ট নাম রাখসে। আমার এখন আসলেই বিশ্বাস হয় যে এই গাড়ি যেকোনো জায়গায় যাইতে পারবে। যেইসব রাস্তা দেখে আমি ভাবতেসিলাম যে এইখানে মানুষ হাটে কেমনে সেই রাস্তায় এই গাড়ি অনায়াসে চলে যাইতেসে!!! কি আজব কাণ্ড!!! কি তেলেসমাতি রে ভাই!!! কেমনে কি!!! বিশ্বাস করেন এই গাড়ি যেই রাস্তা দিয়ে গেসে সেই রাস্তা দিয়ে যাইতে যাইতে আমাদের শরীরের কিডনি, গুর্দা সব নাড়ায়ে ফেলাইসে। উচু-নিচু, wavy, curvy, ভাঙাচুরা, সরু কোনো রাস্তাই এরে ঠ্যাকাইতে পারতেসে না। যেই খাড়া ,সরু এবং ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে আমাদের চান্দের/চাঁদের গাড়ি চলতেসে তার একপাশে বিশাল খাদ। একটু এদিক-ওদিক হলেই ডিরেক্ট ওপারে চইলা যাওয়া লাগতে পারে। অথচ ড্রাইভার নির্বিকারভাবে চালায়ে যাইতেসে। বগালেকে চান্দের/চাঁদের গাড়ীতে যাওয়ার সময় শুনসি ওটা নাকি ওয়ার্ল্ডের সবচেয়ে ডেঞ্জারাস রাস্তাগুলার মধ্যে একটা (সত্য-মিথ্যা জানি না)। আমি ভাবতেসিলাম এই রনিনপাড়া পর্যন্ত রাস্তাটা কেন সবচেয়ে ডেঞ্জারাস রাস্তাগুলার একটা না!!?? যাই হোক, এইসব ভাবতে ভাবতে আর পেটে, মাজায়, কনুইতে ঠুসঠাস বারি খাইতে খাইতে ২ ঘন্টা পর রনিনপাড়ার এক পাহাড়ের চূড়ায় এসে আমাদের চান্দের/চাঁদের গাড়ির যাত্রা শেষ হলো। গাড়ি থেকে নেমেই প্রথমে যেটা চোখে পড়লো তা হলো টেবিল পাহাড়। জাস্ট একটা কথাই মাথায় আসছিল তখন, এতো সুন্দর কেন!!! এতো সুন্দর কেমনে!!! যাই হোক, বেশ কিছুক্ষণ টেবিল পাহাড়ের সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হবার পর আমরা গাইডকে জিজ্ঞাস করলাম এবার কোনদিকে? সামনে তো রাস্তা নাই!! গাইড তখন নিচের দিকে চলে যাওয়া খাড়া এবং সরু একটা রাস্তা দেখায়ে দিলো। এবার বাকী পথটুকু ট্রেক করে যাইতে হবে। এরপরে দেড় ঘন্টার একটা মিনিমাম লেভেলের ট্রেক করে আমরা রনিনপাড়ায় পৌছালাম। কিন্তু যেহেতু প্রায় এক বছর পর এইটা প্রথম ট্রেক ছিল তাই মোটামুটি হালকা-পাতলা কষ্টই হইসে। এদিকে রনিনপাড়ার এন্ট্রিটা আবার খুবই গা ছমছমে টাইপ। কারণ রনিনপাড়ায় ঢোকার আগপর্যন্ত অনেকখানি পথ রাস্তার ২ পাশ জুড়ে শুধু খ্রিস্টানদের কবর। সম্ভবত ওটা রনিনপাড়ার কবরস্থান। তারপর আমরা যখন রনিনপাড়ায় ঢুকলাম তখন শুরু হলো ঝড়ো হাওয়া। বৃষ্টি হলে তিনাপে ভালো পরিমাণ পানি পাবো ভেবে আমরাও খুশি হয়ে গেসিলাম। কিন্তু শেষপর্যন্ত রনিনপাড়ায় আর বৃষ্টি হয়নি। শুধু ধুলা ঝড়ই হইসে। যাই হোক, পাড়ায় গিয়ে কটেজে উঠে খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ করার পরে আমরা চলে গেলাম রনিনপাড়ার নিচে যে ঝিড়িটা ওখানকার পানির উৎস সেখানে। গ্রুপের সব ছেলেরা সেখানে গোসল সেড়ে ফেললো। তারপর সবাই কটেজে গিয়ে দিলাম এক ঘুম। সন্ধ্যায় ঘুম থেকে উঠে রনিনপাড়া আর্মি ক্যাম্পে গেলাম। যেহেতু আমরা বুদ্ধ পূর্ণিমার ছুটি মাঝে রেখে গেসিলাম সেহেতু আমরা সেখানে এক ভয়াবহ সুন্দর পূর্ণিমা পাইসি। পূর্ণিমার আলোয় পুরোটা পাড়া যেন জাদুর নগরী হয়ে ছিল। তো রনিনপাড়ার আর্মিক্যাম্পে যখন আমরা আর্মি অফিসারের জন্যে ওয়েট করতেসিলাম তখন পাড়ার গাইডের সাথে কথা বলতেসিলাম। আমরা তাকে জিজ্ঞাস করলাম, “তিনাপ যাইতে মাঝে মাঝে গয়াল দেখা যায় তা তো জানি। কিন্তু অন্য কোনো বন্যপ্রাণী কি দেখা যায়?” সে বললো, “তেমন কিছুই না খালি মাঝে মাঝে ভাল্লুক দেখা যায়” (বিশাল বড় একখানা চাপা)। আমরা জিজ্ঞাস করলাম, “ও আচ্ছা! তা তুমি দেখসো কখনো ভাল্লুক?” বললো যে দেখসে। তখন জিজ্ঞাস করলাম, “কয়বার দেখসো?” সে বললো, “২০-২৫ বার!!” ( মানুষ এতো নির্বিকারভাবে চাপা কেমনে মারে!!!!!)। তো যাই হোক, এসব কথা বলতে বলতেই আর্মি অফিসার চলে আসলেন। উনি আবার আমাদের এক ঘন্টা বসায়ে বসায়ে আবারো ওখানে গত কয়েকদিনে/মাসে কি কি দূর্ঘটনা ঘটসে, কয়জন ট্রাভেলার নিখোঁজ হইসে, কয়বার পুলিশের সাথে পাহাড়িদের গোলাগুলি হইসে, কিভাবে আমাদের মধ্যপথ থেকে কীডন্যাপ করে নিয়ে যাইতে পারে, কীভাবে উনি অসুস্থ্য হইলে উনাকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার পাঠানো হলেও আমরা মরে গেলেও আমাদের ডেডবডি নেয়ার জন্যে পাঠানো হবে না, আমাদের কতো ধরণের বিপদ-আপদ হইতে পারে কারণ আমাদের দলে মেয়েরাও আছে ইত্যাদি ইত্যাদি বলার পরেও যখন দেখলো আমরা নাছোড়বান্দা তখন না পারতে বাধ্য হয়ে তিনাপ যাওয়ার পারমিশন খানা ইনিও দিয়েই দিলেন। এরপর নিজেদের নাম্বার দিয়ে যেকোনো প্রয়োজনে ফোন করতে আর সাবধানে থাকতে বলে আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিলেন। এরপর রাতের খাওয়া শেষে আরো কিছুক্ষণ আড্ডার পর বেশ কিছুক্ষণ চাঁদের আলোয় হাটলাম। চাঁদের আলোয় পাড়াটা দেখে আমার Arabian Nights এর রাজ্যের কথা মনে পড়তেসিলো। মনে হচ্ছিলো ওই রাজ্যের সবাই ঘুমায়ে গেসে আর আমরা সেই ঘুমন্ত রাজ্যে চুপচাপ ঘুরে বেড়াইতেসি। এভাবে বেশ অনেকক্ষণ সেই রাতের পূর্ণিমা উপভোগ করার পর আর বেশি দেরি না করে সবাই যার যার মতো ঘুম দিলাম। পরদিন আবার এক বিশাল জার্নি অপেক্ষা করতেসে। আল্লাহ জানে কি হবে!!
০১/০৫/২০১৮
সকাল ৬টার এলার্ম বেজে উঠার পরে as usual আইলসামী করে উঠতে উঠতে আমরা ৬:৩০টা বাজালাম। এরপর খাবার দিতে দেরী হইলো। সব মিলায়ে তিনাপের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে দিতে বেজে গেলো ৮টা। ওমা!! পাড়া দিয়ে বের হতে হতেই দেখি টায়ার্ড হয়ে যাইতেসি। বলে রাখি রনিনপাড়া অনেক বড়। এতো বড় যে পাড়া থেকে বের হতে হতেই ৮:৩০টা বেজে গেসে। যাই হোক, আসল ট্রেক তখনো শুরুও হয়নি। আরো ৪ ঘন্টা কেমনে ট্রেক করবো!!! পারি দিতে হবে যেতে ১৪ কি.মি. + আসতে ১৪ কি.মি. = টোটাল ২৮ কি.মি ( পাহাড়িরা এই হিসাবটাই দিসিলো) পাহাড়ি পথ। এখনি টায়ার্ড হয়ে গেলে কেমনে কি!! পাড়া দিয়ে বের হতে হতেই মনে মনে দ্বিধায় পড়ে গেলাম!! যাবো নাকি যাবো না। শেষমেশ দোনোমনা করতে করতে পাড়া থেকে বের হলাম। গাইড সবার হাতে হাতে একটা একটা করে বাঁশ ধরায়ে দিলো। ব্যস! শুরু হয়ে গেলো জার্নি। ঢাকায় যখন কালবৈশাখী ঝড় ওখানে তখন মাথার উপর ঠাডা পড়া রোদ। রোদের মধ্যে ১০ মিনিট ট্রেক করেই সব ঘেমে-নেয়ে একাকার হয়ে গেসি। এতো ভয়াবহ রোদ যে ২০ মিনিটের বেশি টানা হাটা যাচ্ছে না। পাহাড়ি পথে উপরের দিকে উঠতেসি তো উঠতেইসি! এক তো খাড়া রাস্তা তার উপর পুরা রাস্তাভর্তি ঝুড়া মাটি। ৩ কদম কষ্টেমষ্টে উঠতে না উঠতেই আবার পিছলায়ে ২ কদম নেমে যাই। এভাবে প্রায় আধা ঘন্টা যুদ্ধ করে এক পাহাড়ে উঠলাম। এখন আবার নতুন বিপদ। এবার আবার খাড়া পাহাড় নামতে হবে। ভাবলাম নামাটা আর এমন কি! কিছুই না। সমস্যা নাই। পারবো!!! কিন্তু নামা শুরু করতেই যে সমস্যাটা টের পেলাম সেটা হলো আবারও রাস্তা ভর্তি ঝুড়া মাটি আর একপাশে খাড়া পাহাড় আর অন্য পাশে বিশাল খাদ। একটু পিছলালেই ডিরেক্ট নিচে পড়ে জীবনের তরে উপরে চলে যেতে হবে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে আরো আধা ঘন্টা পারি দেয়ার পর সবাই-ই একটু একটু ক্ষুধা টের পেলাম। কিছুক্ষণের জন্যে এক জায়গায় বসে জিরিয়ে নিতে নিতে হঠাৎ সবাই খেয়াল করলাম যে আশে পাশের দৃশ্য অমানবিক সুন্দর। মাথার উপর ঠাডা পড়া রোদ নিয়ে বসে বসে বেশ কিছুক্ষণ সেই অমানবিক সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করলাম। তারপর আরো আধা ঘন্টা দুর্গম উঁচুনিচু পথ পাড়ি দেয়ার পর তিনাপ যেতে যে একমাত্র পাড়া পরে সেই পাড়ায় পৌছালাম (পাড়াটার নাম মনে নেই। তবে, খুব সম্ভবত দেবাছড়া পাড়া)। সেখানে পাহাড়ি কলা আর বিস্কিট খেয়ে বেশ কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে ১০:৩০ এর দিকে আবার যাত্রা শুরু করলাম। আমরা কিন্তু তখনও অর্ধেক পথও যাইনি। হাটতেসি তো হাটতেইসি, উঠতেসি, নামতেসি রাস্তা বা রোদ কোনোটাই কমার নাম নেই। এদিকে খাবার পানিও সব শেষ। আরো কিছুদূর নামার পর আমরা দেখা পেলাম ঝিড়ি পথের। ভাবসিলাম যাক ঝিড়িতে নামলে কষ্ট একটু কম হবে। কিন্তু হায় হায়!! গরমে ঝিড়ির অবস্থাও খারাপ। পানি একদমই কম। বড় বড় পাথর। পুরাই বন্য পরিবেশ। মাঝে মাঝে বাঁশের সাঁকো। এভাবে কিছুদূর যাওয়ার পর খাবার পানির উৎস পাওয়া গেলো। সেখান থেকে সবাই পেট আর মন ২টাই ভরে ঠান্ডা পানি খেয়ে নিলাম আর যার যার বোতল ভরে নিলাম। সেখানে অনেকক্ষণ সময় কাটানোর পর খেয়াল হলো এখনো অনেক রাস্তা বাকী। সময় তখন ১১:৩০টা। আবার হাটা শুরু। এক সময় ঝিড়ি শেষ হলো। আবার পাহাড়ের শুকনা রাস্তা। কিছুদূর সমতলে যাওয়ার পর কিছুটা রাস্তা নিচে নামলাম। নামার পর দেখলাম ওখান থেকে প্রায় ৬০ ডিগ্রী এ্যাংগেলে একটা রাস্তা নেমেই আবার ৬০ ডিগ্রী এ্যাংগেলেই উঠে গেসে। গাইডের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকায়ে জিজ্ঞাস করলাম এবার কোনদিকে? মনে মনে দোয়া করতেসিলাম যে রাস্তা চোখের সামনে দেখতেসি সেই রাস্তা যেন আমাদের গন্তব্য না হয়। কিন্তু হায় কপাল!! গাইড বললো ওই ৬০ ডিগ্রী দিয়েই নাকি নেমে আবার উঠতে হবে। শুনে আমাদের চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। কি বলে এগুলা!! এইটা সম্ভব নাকি!!! যাই হোক, নিজেকে বুঝালাম হইলো একবার নেমে উঠে গেলেই তো শেষ। তারপর না হয় রেস্ট নিবোনে কিছুক্ষণ। এই ভেবে আল্লাহর নাম নিতে নিতে নামা শুরু করলাম। নামা শুরু করতেই আবার সেই পুরানো সমস্যা টের পেলাম। রাস্তা ভর্তি ঝুড়া মাটি। তাই আস্তে আস্তে নামা শুরু করলাম। কিন্তু হুটহাট ঝুড়া মাটিতে পিছলায়ে কয়েক কদম নিচে পড়ে যাচ্ছিলাম। আমাদের দলের একজন এক দৌড়ে নামতে গিয়ে জুতা ছিড়ে ফেললো। দৌড়ের মধ্যে জুতা ছিড়ে যাওয়ার পর অনেক কষ্টে হলেও ব্যালেন্স রাখতে পেরেছিল বলে সেদিন ও একটুর জন্যে বড় ধরণের দূর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেসিলো। আরেকজন শেষমেশ না পেরে বসে বসে ছ্যাচড়ায়ে ছ্যাচড়ায়ে নামতে লাগলো। যাই হোক, অনেক কষ্টে ওই পথটুকু আমরা নামলাম। এবার উঠার পালা। উঠা শুরু করলাম। আবার বিপদ হয়ে দেখা দিল সেই ঝুড়া মাটি। উঠতে গিয়ে বার বার পিছলায়ে পড়ে যাচ্ছিলাম। এভাবে কষ্টেশিষ্টে এটাই শেষ এই বলে বলে মনতে স্বান্তনা দিতে দিতে শেষমেশ উঠলাম। উঠার পরে একটু সামনে যেতে যেতে দলের একজন বলে উঠলো WE DID IT!!!! 😎 এই কথা বলার সাথে সাথে দেখি সামনের রাস্তাও ওইরকম। WAVY!! এইবার আমাদের চেহারা ফ্যাকাশে থেকে অন্ধকার হয়ে গেলো। সবাই গুম হয়ে গেলাম পুরাই। কেউ আর কিছু বলার ভাষা পাচ্ছিলাম না। কি আর করা! কিছুক্ষণ জিরায়ে নিয়ে আবার সেই ভয়াবহ উঠা নামা করলাম। সামনে গিয়ে দেখি আবারও ধোকা। আবার সেইম ৬০ ডিগ্রী উঠানামা। সবাই মনে মনে ভাবতেসি এই টাইপের রাস্তার কি আর শেষ নাই!!! তার চেয়েও বেশি চিন্তার ব্যাপার হচ্ছে এই রাস্তা ধরেই আবার ফিরতে হবে। কি ভয়াবহ! যাই হোক, এরকম বেশ কিছুক্ষণ উঠানামা করার পর দেখলাম সামনে পাহাড় আর বাম দিকে রাস্তা শেষ। মানে ডেড এন্ড। গাইডকে জিজ্ঞাস করলাম এইবার কোনদিকে? গাইড বলে বামদিকে। আমরা বলতেসি বাম দিকে রাস্তা কই!! বাম দিকে তো ডেড এন্ড!!! গাইড বলে রাস্তা নাকি আছে। আমরা তো কিছুই বুঝতেসিলাম না। পরে কিছু না বুঝেই সামনে আগালাম। সামনে আগায়ে ডেড এন্ডের শেষ মাথায় গিয়ে দেখি প্রায় ৭০ ডিগ্রী খাড়া একটা রাস্তা নিচে নেমে গেসে। মূলত এটাকেই বলা হয় DEATH ZONE। এখান থেকেই নাকি নামতে হবে। আমরা সবাই একটা করে ঢোক গিললাম। এরপর কিছুক্ষণ ভ্যাবাচ্যাকা খায়ে তাকায়ে রইলাম। এরপর আল্লাহর নাম নিয়ে নামা শুরু করলাম। নামতে নামতে একসময় দেখা পেলাম পাইন্দু খালের। পানি অনেক কম। বড় বড় পাথর পেরিয়ে শেষপর্যন্ত আমরা পাইন্দু খালে পৌছালাম। খালের পানিতে বেশ অনেকক্ষণ ঝাপাঝাপি করে আবার রওনা দিলাম তিনাপের দিকে। প্রায় ১৫ মিনিট ধরে বিশাল বিশাল বোল্ডারের মত পাথর পার হয়ে আমরা তিনাপের দেখা পেলাম। সাথে সাথে সমস্ত কষ্ট ধুয়েমুছে গেলো। হা করে অনেকক্ষণ তাকায়ে ছিলাম তিনাপের দিকে। খুব বেশি পানি নেই। তারপরও এতো সুন্দর!!! কতো বিশাল!!! ভরা বর্ষায় না জানি কতো সুন্দর লাগে একে!!! সত্যিই তিনাপের ভেতর একটা রাজা রাজা ভাব আছে। সত্যি-ই সে ঝর্ণার রাজা। যখন ঝর্ণার নিচে বসলাম তখন টের পেলাম পানি কম হলেও ফ্লো অনেক বেশি। গায়ের উপর দিয়ে যখন পানি পড়ছিল তখন এতোক্ষণের সমস্ত কষ্ট যেন ধুয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো। এরপর অনেকক্ষণ ছবি তুলা আর ঝর্ণার পানিতে ঝাপাঝাপি শেষে আর হালকা খাওয়া-দাওয়া করে আমরা আবার ফেরার প্রস্তুতি নিলাম। সেই DEATH ZONE আর তার পরবর্তী ৬০ ডিগ্রী WAVY পথটুকু পার হতে এবার আরো বেশি বেগ পেতে হচ্ছিলো। কারণ হালকা পাতলা যা খেয়েছি তাতে ক্ষুধা একটুও কমেনি। বরং ওই খাবার এ্যাপেটাইজারের কাজ করে ক্ষুধা আরো বাড়ায়ে দিসে। তো ক্ষুধা পেটে আর শরীরের সব জায়গায় ব্যাথা নিয়ে যাচ্ছি তো যাচ্ছি-ই! রাস্তা শেষ হবার নাম নেই। বিকাল গড়ায়ে প্রায় সন্ধ্যা হওয়ার সময় ঘনায়ে আসতেসে। ভাবলাম অন্ধকার হওয়ার আগে ঝিড়িটা পার হতে পারলেও বা কম কি! একেক জনের তখন বেহাল দশা। পা চলে তো চলে না। এর মধ্যে দেখা গেলো দলের কয়েকজনকে জোঁকে ধরসে। আমিও পায়ে কিসের যেন নড়াচড়া টের পেলাম। হাত দিয়ে দেখি জোঁক বাবাজী কামড়ে ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছে কেবল। এরপর শেষপর্যন্ত আল্লাহর রহমতে অন্ধকার হতে হতে শুধু ঝিড়ি-ই না আরো বেশ কিছুটা রাস্তাও পার করে ফেললাম। আমাদের প্রায় সবারই মনোবল তখন শূণ্যের কোঠায়। কিন্তু সবাই-ই সবার অবস্থা দেখে মনে মনে নিজেকে সাহস দিচ্ছিলাম। এর মধ্যেই অন্ধকার নেমে আসলো। আগেরদিন পূর্ণিমার আলো থাকলেও আজকে বিকাল থেকেই আকাশে মেঘের ঘনঘটা। আর মেঘের কারণে চাঁদের আলোও নেই। এরপর শুরু হলো মোবাইলের টর্চের আলোয় পথ চলা। সবার শরীর এতোটাই ক্লান্ত যে টানা ১০ মিনিটও একটানা হাটা যাচ্ছিলো না। একটু পর পর জিড়ায়ে নিচ্ছিলাম। প্রচণ্ড ক্লান্তি থাকলেও অন্ধকার নিশ্চুপ পাহাড়ের চূড়ায়ে এভাবে বসে থাকার মতো সুন্দর অনুভূতি আর কিছু হতে পারে বলে অন্তত আমার মনে হয় না। যাই হোক, এভাবে আরো ঘন্টা খানেক চলার পর সন্ধ্যা ৮টায় আমরা পাড়ায় পৌছালাম। দীর্ঘ ১২ ঘন্টার ট্রেকিং শেষ হলো। পাড়ায় গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে যে কোনোরকম রাতের খাবার খাবো সেই শক্তিও শরীরে নেই। তাও সবাই বহুকষ্টে ফ্রেশ হয়ে খেতে গেলাম। ওই রাতে দলের একেকজন ৫/৭ প্লেট করে ভাত খেয়েছে। এরপর খেয়ে ঝিমাতে ঝিমাতে হালকা আড্ডা দিয়ে সবাই যার যার মতো ঘুমাতে গেলাম। পরদিন যে এই জাদুর নগরী ছেড়ে ওই ব্যস্ত শহরে ফিরে যেতে হবে এটা ভেবেই বার বার মন খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু বেশিক্ষণ মন খারাপ করারও সুযোগ পেলাম না। কারণ, এতোই ক্লান্ত ছিলাম যে বিছানায় শোয়ার সাথে সাথেই ঘুম। শরীর এতো ব্যাথা ছিল যে ঘুমের মধ্যে একটু নড়লেও ব্যাথা টের পাওয়া যাচ্ছিলো।
০২/০৫/২০১৮
ট্যুরের শেষদিন। সবাই ইচ্ছা করেই একটু বেশি করে ঘুমিয়ে নিলাম। যদিও তাড়া থাকা উচিত ছিল কারণ রোয়ানছড়ি থেকে বান্দরবান ফিরার শেষ বাস ছাড়ে ৫টায় তাই যেকোনো ভাবে ৫টার মধ্যে রোয়ানছড়িতে থাকতেই হতো। কিন্তু আমরা একটু আস্তে ধীরে রওনা দেয়ার জন্যে আগের দিনই চান্দের/চাঁদের গাড়ি একদম বান্দরবান পর্যন্ত যাতে নিয়ে যায় সেই ব্যাপারে কথাবার্তা বলে রাখসিলাম। কিন্তু ঘুম থেকে উঠার পরে টের পেলাম কাল রাতে সমস্ত শরীরে যে ভয়াবহ ব্যাথা ছিল তা তখনও কমেনি। বরং মনে হচ্ছে আরো বেড়ে গেসে। প্রতিটা মাসেলে ব্যাথা। জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা। একটু নড়লেও ব্যাথা লাগতেসে। তারপরও সবাই খুশি। তিনাপ জয় করে ফেলসি ম্যান!! আর কি লাগে!! এরপর বাকী সময়টুকু চিল করে ছবি তুলে আর হ্যা অনেক অনেক কাঁচা আম আর ডাব খেয়ে দুপুর ২টায় কটেজ থেকে ব্যাগপ্যাক নিয়ে ফিরার পথে যাত্রা শুরু করলাম। সারা গায়ে ব্যাথা নিয়ে পাড়া থেকে চান্দের/চাঁদের গাড়ি পর্যন্ত ওই দেড় ঘন্টার ট্রেকিংটাও খুবই কষ্টকর লাগছিল। ট্রেকিং শেষ করে যখন আমরা চান্দের/চাঁদের গাড়ির জন্যে অপেক্ষা করছিলাম তখন রনিনপাড়া আমাদেরকে তার শেষ সৌন্দর্য্যটুকু দেখায়ে দিলো। আরো নতুন কিছু দেখা বাকি ছিল তখনও। যখন আমরা চান্দের/চাঁদের গাড়ির জন্যে অপেক্ষা করছি তখন হঠাৎ করেই টেবিল পাহাড়ে আকাশ কালো করে ঝড় শুরু হলো আর তার ঠিক পাশের পাহাড়েই কড়া রোদ। পাশাপাশি রোদ বৃষ্টির অপরূপ দৃশ্য দেখতে দেখতেই আমাদের চান্দের/চাঁদের গাড়ি চলে আসলো। শুরু হলো চাঁদের গাড়ির যাত্রা। এবার যখন ট্যুর শেষ হয়ে গেলো ভেবে সবার একটু একটু মন খারাপ হতে শুরু করলো তখনই আকাশে দেখা দিলো বিশাল এক রংধনু। যা বুঝলাম বান্দরবান আসলে আমাদের মন খারাপ করতে দিতেই চায় না। কারণ রংধনু মিলিয়ে যেতে যেতেই এবার দেখলাম আকাশ লাল করে সূর্যাস্ত হচ্ছে। আলো আঁধারের খেলা দেখতে দেখতেই শেষ হলো আমাদের চান্দের/চাঁদের গাড়ির যাত্রা। বাকীটা সন্ধ্যা বান্দরবান শহরে ঘুরাঘুরি করে কাটিয়ে দিলাম। এবং বাসে উঠার ঠিক আধা ঘন্টা আগে টের পেলাম বান্দরবান আমাদের জন্যে শেষমুহূর্তেও সারপ্রাইজ রেখে দিসিলো। বৃষ্টি!!! মুষলধারে এক পশলা বৃষ্টি নেমে ট্যুর শেষ হয়ে যাওয়ায় মন খারাপ ভাবটা ধুয়েমুছে নিয়ে গেলো। মনে মনে আবার কোনো এক ট্যুরে বান্দরবান আসার প্রতিজ্ঞা করতে করতেই আমরা রাত ১০টার বাসে করে ব্যস্ত জীবন আর ব্যস্ত শহরে ফিরে আসলাম।
আমাদের রুটঃ ঢাকা>বান্দরবান>রোয়ানছড়ি>রনিনপাড়া>তিনাপ>রনিনপাড়া>রোয়ানছড়ি>বান্দরবান>ঢাকা।খরচঃ
ঢাকা টু বান্দরবান বাস ভাড়া = ৬২০/- (নন-এসি)
বান্দরবান লোকাল বাস কাউন্টার পর্যন্ত অটো ভাড়া পার হেড = ১৫/-
বান্দরবান টু রোয়ানছড়ি বাস ভাড়া = ৮০/-
চান্দের/চাঁদের গাড়ি ভাড়া,
রোয়ানছড়ি টু রনিনপাড়া = ৪০০০/-
রনিনপাড়া টু বান্দরবান = ৫৫০০/-
রনিনপাড়ায় থাকা প্রতি রাত মাথাপিছু = ১৫০/-
রনিনপাড়ায় প্রতিবেলা খাওয়া,
ডিম, ডাল, আলুভর্তা, ভাত = ১৫০/-
মুরগী, ডাল, ভাত = ২০০/-
গাইড খরচ প্রতিদিন = ১০০০/-
পুনশ্চ-১ঃ বর্ষাকালে এই রুটে চান্দের/চাঁদের গাড়ি চলে না।
পুনশ্চ-২ঃ রনিনপাড়ায় কিছু কিছু জায়গায় মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় এবং সেখানে ইলেক্ট্রিসিটিও আছে তাই মোবাইল চার্জ না দিতে পারার সমস্যা নেই।
পুনশ্চ-৩ঃ লিখায় কোনো ভুল থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
বিঃদ্রঃ তিনাপের ট্রেইলটা খুবই পরিষ্কার। একটা চিপ্স বা চকলেটের প্যাকেট বা বোতলও পাইনি আমরা। তাই জন্যেও হয়তো মুগ্ধতাও একটু বেশি ছিল। তাই আমরা আমাদের সাথের সব খাবারের প্যাকেট সাথে নিয়ে আসছি। যাতে পরবর্তীতে কোনো গ্রুপ ওখানে গেলে মুগ্ধ হয়েই আসতে পারে।
দয়া করে নিজেদের ময়লা আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলবেন না। সাথে করে নিয়ে এসে যথার্থ স্থানে ফেলবেন। প্রকৃতিকে সুন্দর থাকতে দিন।
You must be logged in to post a comment.