দু’টি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ শ্রীমঙ্গল।

দু’টি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ শ্রীমঙ্গল।

পাহাড়, অরণ্য, হাওর আর সবুজ চা বাগান ঘেরা নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য আর অপূর্ব সৌন্দর্যমন্ডিত নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি শ্রীমঙ্গল। প্রকৃতির সুরম্য নিকেতন শ্রীমঙ্গলে দেখার আছে চা বাগানের পর চা বাগান, চা প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র, লাউয়াছড়া রেইনফরেস্ট, মাগুরছড়া গ্যাসকূপ, চা গবেষণা কেন্দ্র, লাউয়াছড়া ইন্সপেকশন বাংলো, খাসিয়াপুঞ্জি, মণিপুরীপাড়া, ডিনস্টন সিমেট্রি, হিন্দুধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান নির্মাই শিববাড়ি, টি-রিসোর্ট, ভাড়াউড়া লেক, পাহাড়ি ঝর্ণা, চারদিকে প্রকৃতির নজরকাড়া সৌন্দর্য আর হাজারো প্রজাতির গাছ-গাছালি।

শ্রীমঙ্গলের পাদদেশে অবস্থিত এককালে বৃহত্তর সিলেটের মৎস্যভান্ডার বলে খ্যাত ‘হাইল-হাওর’ এবং শীতের শুরুতে সাত-সমুদ্র-তেরো-নদী পার হয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে আসা শীতের পাখি। শ্রীমঙ্গলের বিস্তীর্ণ পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসরত স্বতন্ত্র স্বত্বার উপজাতি জনগোষ্ঠী খাসিয়া, মণিপুরী, টিপরা ও গারোদের জীবনাচার, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের কারণেও এ অঞ্চলের নাম অনেকের কাছে সুপরিচিত। তাছাড়াও চা, রাবার, লেবু, পান, আনারস ও মূল্যবান কাঠ ইত্যাদি নানা কারণে শ্রীমঙ্গলের প্রসিদ্ধি রয়েছে সর্বত্র। প্রকৃতিই শ্রীমঙ্গলের প্রাণ।

দু’শ বছরের প্রাচীন শ্রীমঙ্গল শহরের নামকরণ নিয়ে ভিন্ন-ভিন্ন কাহিনী শোনা গেলেও রেকর্ডপত্রে লিপিবদ্ধ আছে- ‘শ্রীদাস’ ও ‘মঙ্গলদাস’ নামে দু’জন প্রথমে এসে এখানে হাইল-হাওরের তীরে বসতি স্থাপন করেছিলেন। এ দু’ভাইয়ের নামানুসারে শ্রীমঙ্গল নামকরণ করা হয় এ জনবসতির। আরেক মহল থেকে বলা হয়েছে, শ্রীমঙ্গল শহরের অদূরে ‘মঙ্গলচন্ডী’ দেবতার একটি স্থলী ছিল। তার নামানুসারে ‘শ্রীমঙ্গল’ নামকরণ করা হয়েছে।

সৌন্দর্যের লীলাভূমি শ্রীমঙ্গল
সৌন্দর্যের লীলাভূমি শ্রীমঙ্গল

শহর ঘিরে এতো চা বাগান আর কোথাওই নেই। বাংলাদেশে মোট ১৩৮টি চা বাগানের মধ্যে এখানেই রয়েছে ৩৮টি। আর পার্শ্ববর্তী এলাকাসহ এই এলাকাকে অখণ্ড জোন ধরে হিসাব কষলে চা বাগানের সংখ্যা ৬০টি। শ্রীমঙ্গল তাই চায়ের রাজধানী। সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মানের চায়ের জন্যও বিশ্বব্যাপী সুখ্যাতি কুড়িয়েছে মৌলভীবাজারের এই চা শহর।এখানে রয়েছে চা জাদুঘর ও চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই)। স্থানীয় অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তিও এই চা।

পাহাড়, অরণ্য, হাওর আর সবুজ চা বাগান ঘেরা নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য আর অপূর্ব সৌন্দর্যমন্ডিত নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি শ্রীমঙ্গল। প্রকৃতির সুরম্য নিকেতন শ্রীমঙ্গলে দেখার আছে চা বাগানের পর চা বাগান, চা প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র, লাউয়াছড়া রেইনফরেস্ট, মাগুরছড়া গ্যাসকূপ, চা গবেষণা কেন্দ্র, লাউয়াছড়া ইন্সপেকশন বাংলো, খাসিয়াপুঞ্জি, মণিপুরীপাড়া, ডিনস্টন সিমেট্রি, হিন্দুধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান নির্মাই শিববাড়ি, টি-রিসোর্ট, ভাড়াউড়া লেক, পাহাড়ি ঝর্ণা, চারদিকে প্রকৃতির নজরকাড়া সৌন্দর্য আর হাজারো প্রজাতির গাছ-গাছালি। শ্রীমঙ্গলের পাদদেশে অবস্থিত এককালে বৃহত্তর সিলেটের মৎস্যভান্ডার বলে খ্যাত ‘হাইল-হাওর’ এবং শীতের শুরুতে সাত-সমুদ্র-তেরো-নদী পার হয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে আসা শীতের পাখি। শ্রীমঙ্গলের বিস্তীর্ণ পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসরত স্বতন্ত্র স্বত্বার উপজাতি জনগোষ্ঠী খাসিয়া, মণিপুরী, টিপরা ও গারোদের জীবনাচার, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের কারণেও এ অঞ্চলের নাম অনেকের কাছে সুপরিচিত। তাছাড়াও চা, রাবার, লেবু, পান, আনারস ও মূল্যবান কাঠ ইত্যাদি নানা কারণে শ্রীমঙ্গলের প্রসিদ্ধি রয়েছে সর্বত্র। প্রকৃতিই শ্রীমঙ্গলের প্রাণ।

গ্র্যান্ড সুলতান
এই শ্রীমঙ্গল কেবল চায়ের সমৃদ্ধিতেই সীমাবদ্ধ নয়, এখানে চা বাগানের পাশাপাশি রয়েছে লেবু, আনারস, মরিচ প্রভৃতি রকমের বাগান। বাংলাদেশের লেবুর বড় রকমের একটি চাহিদায় শ্রীমঙ্গলের অবদান অস্বীকার করার কোনো জো নেই। শ্রীমঙ্গলের প্রকৃতি কেবল দেশের জনগণের কাছেই নয়, বিদেশি পর্যটকের পছন্দ তালিকার অন্যতম একটি। সুতরাং মন খারাপের দিনে অথবা সদ্য বিবাহিত দম্পতির আমোদ প্রমোদের জন্য শ্রীমঙ্গলই হতে পারে আপনার শুরুর দিকের অন্যতম পছন্দ তালিকার একটি। এক এক করে শ্রীমঙ্গলের সবকটি জায়গার বর্ণনা চলুন জেনে নেয়া যাক-

গ্রান্ড সুলতান গলফ রিসোর্ট
গ্রান্ড সুলতান গলফ রিসোর্ট

চিড়িয়াখানা
নিজ উদ্যোগে গড়ে উঠা শ্রীমঙ্গলের একমাত্র চিড়িয়াখানা সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা নামে পরিচিত। স্থানীয় ব্যক্তি বাবু সীতেশের নামানুসারেই এই চিড়িয়াখানাটির নামকরণ করা হয়। সজারু, হরিণ, উল্লুক, ধনেশ পাখি, একাধিক প্রজাতির কাঠাবিড়ালি নিয়েই গড়ে উঠে অপরুপ এই চিড়িয়াখানা। এই চিড়িয়াখানায় যেতে হলে আপনাকে শ্রীমঙ্গলের মূল চৌমুহনী থেকে রিকশা যোগে যেতে হবে। যার জন্য গুণতে হবে ভাড়াবাবদ ১৫-২০ টাকা। প্রবেশ করতে লাগবে ১০ টাকার একটি নোট।

পল্লী
উইকিপিডিয়া সূত্রে জানা যায়, দেশের প্রায় নব্বই শতাংশ চা বাগানই এই শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত। বাগানের শ্রমিকদের একটি বড় অংশই মণিপুরী এবং খাসিয়া জাতিসত্তার। ইংরেজ আমলের শুরু থেকে যখন চা বাগানের হাতেখড়ি সেই থেকেই শ্রমিকদের এই বড় অংশটি শ্রীমঙ্গলে বসবাস করে আসছেন।

 

সাত রঙের চা
সপ্তম আশ্চর্য পান এ কি জিনিস! শ্রীমঙ্গলে যারাই বেড়াতে যান তারা সাত রঙের চা পান করেননি এমন কমই শোনা যায়। এমনকি শ্রীমঙ্গলে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসি

সাত রঙের চা
সাত রঙের চা

নাও ভোলেননি সাতরঙা চায়ের উদ্ভাবক রমেশের চা পান করতে। আসলেই কিন্তু বিস্মিত হওয়া ছাড়া উপায় নেই, কেননা এটি এমন এক সপ্তম আশ্চর্য যার সাত রঙের অনবদ্য সাতটি স্তর আপনাকে আরও আমেজের মাত্রা দিবে। কথা বলছিলাম বিখ্যাত সে সাত রঙের চা নিয়ে। এক গ্লাস চায়ে সাত সাতটি রঙ। প্রতিটি সাত রঙের চায়ে গুণতে হব আপনাকে ৭০-৮০ টাকা।  তবে রমেশের রহস্য ভেঙে এখন দেশের আরো দু’এক জায়গায় তৈরি হয় সাতরঙা চা। ভিন্ন সাটটি স্তরে সাজানো এ চা এখনও একটি রহস্য।স্বচ্ছ কাচের গ্লাস। চামচ দিয়ে না ঘুটে যতই নাড়াচাড়া করুন এক স্তর আরেক স্তরে মিশবে না। যিনি প্রথম বিষয়টি দেখবেন তার কাছে এটি চা ভাবতেই কষ্ট হবে। আর যিনি দেখেছেন আগেও, নিয়েছেন স্বাদ, তিনি ভাববেন এটা কীভাবে সম্ভব যদি জানতে পারতাম!

 

হাওর
সিলেট বিভাগের অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার শ্রীমঙ্গল। চা বাগান, চিড়িয়াখানার মতো এই জায়গায় আরও রয়েছে অপরুপ সৌন্দর্যের হাকালুকি হাওর। শ্রাবণের ঝরে পড়া বৃষ্টিতে হাওরের বিল যেন নদীতেই তার আপন শরীর মিশিয়ে তোলে। যার ফলে সৃষ্টি হয় সাগরের ন্যায় প্রকাণ্ড এক জলাশয়ের। বৃষ্টির দিনে হাওড়ের পার ডুবে গিয়ে তৈরি হয় মাছের আবাস্থল হিসেবে। ইঞ্জিন চালিত, হস্ত চালিত দেশীয় নৌকায় ঘুরে দেখা যায় হাওরের নৈসর্গিক রুপ। জেলেদের মাছ ধরা, গান গাওয়া মুগ্ধ করবেই আপনাকে।

চা গবেষণা ক্রেন্দ্র ও চা বাগান
আপনারা চাইলে ঘুরে দেখতে পারেন, চা বাগানের ভেতরে এবং কারখানাগুলোতে। চাইলে আরও দেখতে পারেন বাংলাদেশের একমাত্র চা গবেষণা ইনস্টিটিউট। ভ্রমণ পথে সঙ্গী করে নিতে পারেন বাগানের সাধারণ লোকজনকে। থাকার জন্য চা গবেষণা ক্রেন্দ্রেই অবস্থিত রিসোর্ট ‘টি রিসোর্ট ‘ অত্যন্ত চমৎকার একটি স্থান। বাগানের টিলায় অবস্থিত বিশাল জায়গা নিয়ে নির্মিত এই রিসোর্টে রয়েছে ১২টির মতো কটেজ।
পড়ন্ত কোনো এক বিকেলে প্রিয়জনের সাথে ঘুরে আসবার জন্য স্থানটি অতি লোভনীয়।

হামহাম ঝর্ণা
হামহাম ঝর্ণা

মাধবপুর লেক
কিভাবে, আর কখন সৃষ্টি হলো এই লেকের তার হদিস কারো জানা নেই। এখানকার অতি রঞ্জিত প্রাকৃতিক পরিবেশে এক ঢুঁ মেরেই দেখুন না মনে কত শিহরণ জাগে? সময় করে লেকের চারপাশটা ঘুরে দেখতে পারলে নিঃসন্দেহে তা হবে এক দারুণ অভিজ্ঞতা।

বধ্যভূমি
শ্রীমঙ্গল চৌমুহনী থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শ্রীমঙ্গল বধ্যভূমি। প্রতিদিন হাজারো লোকের সমাগম ঘটে এই স্থানে। পাশেই চা বাগান, মাঝে বিশাল এলাকায় লোকজনের ঢ্ল, মোটামুটি আপনাকে চাঙ্গা করে তুলবে।

নীল কন্ঠ চা কেবিন
সাত রঙের চায়ের যেখানে হাতেখড়ি। এই কেবিনে যেতে হলে আপনাকে শ্রীমংগল চৌমুহনী থেকে রিকসা যোগে যেতে হবে। ভাড়া বড়জোর ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা। আপনি চাইলে নিজ উদ্যোগেই আসতে পারেন আমাদের এই শ্রীমংগলে। ঢাকা থেকে আসতে চাইলে ট্রেন পথই সবচেয়ে সুবিধাজনক ব্যবস্থা।