এক ঢিলে তিন পাখি

ল্প খরচে একদিনেই ঘুরে আসুন পাহাড় ও সমুদ্রে ঘেরা চট্টগ্রামের তিনটি দর্শনীয় স্থান।
নিচে আরেকটি প্লেস নিয়ে বিস্তারিত দেওয়া আছে।

ভ্রমণ করতে কার না ভালো লাগে!! অফিসের ব্যস্ততা কিংবা ক্লাস বা পরীক্ষার চাপে তা হয়ত অনেকের হয়ে উঠে না। শুক্রবার ও শনিবার সাধারণত অফিস / ভার্সিটি বন্ধ থাকে। তাই এই দুই দিনের যে কোন একদিন এ ঘুরে আসতে পারেন। আর তা যদি হয় পাহাড় ও সমুদ্র একই সাথে তাহলে কার না ভালো লাগবে! এরজন্য আপনাকে চলে যেতে হবে সীতাকুণ্ড। সীতাকুণ্ড বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা।

স্থানগুলো হলঃ

১. চন্দ্রনাথ পাহাড়

২.গুলিয়াখালি সী বিচ

৩. বাঁশবাড়িয়া সী বিচ

বিস্তারিত ট্যুর প্লানঃ

কিভাবে যাবেনঃ

সাধারনত দুই ভাবে যাওয়া যায় সীতাকুণ্ড। ট্রেনে এবং বাসে। মেইল ট্রেন এবং আন্তঃনগর ট্রেন দুই ধরনের ট্রেনেই যেতে পারবেন। মেইল ট্রেন অনেকটা লোকাল বাসের মত। কম ভাড়া তাই প্রচুর মানুষ যাতায়াত করে। আন্তঃনগরে রিলাক্সড। তবে আগে টিকেট কাটতে হয়। তবে আন্তঃনগর সীতাকুণ্ড থামে না। সেক্ষেত্রে ফেনী নেমে বাসে বা মেইল ট্রেনে যাওয়া যায়। বাসের ক্ষেত্রেঃ- চট্টগ্রামের সকল বাস সীতাকুণ্ড হয়ে যায়। চট্টগ্রামের বাসে উঠতে হবে, আলাদা বাস নেই।

যেভাবেই যান আপনাকে যেতে হবে সীতাকুণ্ড বাজার। সেখানে গিয়ে সেরে নিতে পারেন সকালের নাস্তা। প্রথমে যদি চন্দ্রনাথে যান তাহলে আপনার ট্যুর টা হবে অসম্ভব সুন্দর।

চন্দ্রনাথঃ

সমতল থেকে প্রায় ১১৫৬ ফুট উঁচু, মিরেরসরাই-সীতাকুণ্ড রেঞ্জের সবচেয়ে উঁচু স্থান/পাহাড়। মেঘের গায়ে হেলান দিয়ে আছে সারি সারি পাহাড়।

সীতাকুণ্ড বাজার থেকে জন প্রতি ১৫/২০ টাকা ভাড়া দিয়ে অটো/সিএনজি করে চলে যাবেন চন্দ্রনাথ পাহাড়ের গেটে।(**পাহাড়ে উঠার আগে অবশ্যই বাঁশ/লাঠি এবং পানি নিয়ে নিবেন। ব্যাগ সাথে থাকলে হালকা রাখার চেষ্টা করবেন। পাহাড়ে উঠার সময় প্রচুর পানি পান করতে হবে। আর লাঠি পাহাড়ে উঠার ক্ষেত্রে অনেক উপকার করে। লাঠি পাহাড়ে উঠার সময় দোকান গুলাতেই পাবেন। পানি চেষ্টা করবেন বাজার থেকে কিনে নিয়ে আসতে।পাহাড়ে সব কিছুর দাম বেশি। ২৫ টাকার পানিরর মূল্য ৪০ টাকা। ডাব ৭০/৮০ টাকা, লাঠি ভাড়া পাওয়া যায়, কিনেও নেওয়া যায়। ১০-১৫ টাকায় পেয়ে যাবেন লাঠি।

সেখান থেকে সামনে উঁচু রাস্তা ধরে হেঁটে গেলে পেয়ে যাবেন আরেকটি গেট।সেখান থেকে উপরে উঠতে থাকবেন। উঠা শুরু করলে আপনি নিজেকে পৃথিবীর একজন সুখী মানুষ হিসেবে আবিষ্কার করতে থাকবেন। উঁচু উঁচু পাহাড়ে ঘেরা চারপাশ আপনাকে মুগ্ধ করে দিবে। উপরে উঠতে উঠতে প্রথমে একটি ঝর্ণা পাবেন। সেখান থেকেই মূলত পাহাড়ে উঠার রাস্তা শুরু হয়েছে। ঝর্ণার দুই দিকে দুই রাস্তা গিয়েছে।আপনি ডান দিকের রাস্তা দিয়ে উঠতে চাইলে আপনাকে অনেক কষ্ট করতে হবে এইটা মাথায় নিয়ে উঠতে হবে। ডান দিকের রাস্তা অনেক উঁচু ও খাঁড়া, অবশ্য তা সিঁড়িযুক্ত, আর বাম দিকের রাস্তা পাহাড়ি মাটির রাস্তা। তবে এই রাস্তাটি সহজ মনে হবে আপনার কাছে। ৫০-৯০ মিনিটেই উঠে যেতে পারবেন (নির্ভর করে আপনার হাঁটার গতির উপরে)। সব থেকে ভালো হবে আপনি যদি বাম দিকের পথ ধরে উঠেন।এই পথে উঠলে আপনি গিয়ে পৌঁছাবেন বীরুপাক্ষ মন্দিরে। এখানে প্রতিদিন পূজা হয়। পাহাড়ে চূড়ায় দাঁড়িয়ে আপনি দেখতে পাবেন আকাশের আলোরাশির খেলা।

বীরুপাক্ষ মন্দির থেকে বাম দিকে নিচু পথ ধরে আধা মাইলের মত হেঁটে গেলে আস্তে আস্তে উপরে উঠতে থাকবেন আর পেয়ে যাবেন সেই বিখ্যাত চন্দ্রনাথ মন্দির।

পাহাড়ের চূড়ায় উঠার সময় রাস্তায় আপনি দেখতে পাবেন অনেক গাছপালা। মাঝে মাঝে বানরের এক গাছ থেকে অন্য গাছে যাওয়ার দৃশ্য দেখতে পাবেন। পাহাড়ে উঠার সময় রাস্তায় কিছু দোকান দেখতে পাবেন। পাহাড়ে উঠার সময় সাবধানে পা ফেলবেন। সম্ভব হলে ট্রেকিং এর জুতা বা কেডস পরে যাবেন। পাহাড়ে উঠার পর আপনার মনে হবে পৃথিবী আসলেই অনেক সুন্দর। আপনার এতক্ষণের সব ক্লান্তি কষ্ট নিমিষেই মুছে যাবে প্রকৃতির সৌন্দর্য্যের কাছে। তারপর কিছুক্ষন শুয়ে/ বসে বিশ্রাম নিলেন। ছবি তুলতে পারেন সেখানে। তারপর সেখানে কিছুক্ষণ থেকে প্রকৃতির সৌন্দর্য্য উপভোগ করে নেমে আসুন। নামার সময় লক্ষ করে নামবেন, যে কোন সময় পড়ে গিয়ে ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা। নিচে নামার সময় ডান পাশের রাস্তাটি অনেক সহজ মনে হবে। কিন্তু আপনি যদি এই পথে উঠতেন তাহলে বীরুপাক্ষ মন্দিরে আর যাওয়ার ইচ্ছা শক্তি থাকত না। কারণ, এই পথ অনেক খাঁড়া আর কষ্টের। আপনি নামতে নামতে পৌঁছে যাবেন প্রথম দেখা সেই ঝর্ণার কাছে। নিচে নেমে এসে দেখবেন অনেকগুলো সিএনজি, অটো দাঁড়িয়ে আছে আপনাদের জন্য। এর পর আপনার গন্তব্য হবে, বাঁশবাড়িয়া সি বীচে।

বাঁশবাড়িয়া সি বীচঃ

চন্দ্রনাথ পাহাড়ের নিচে নেমে সেখানে থাকা সিএনজি দিয়ে আপনি চলে যাবেন বাঁশবাড়িয়া সি বীচে। সিএনজি তে উঠার আগে অবশ্যই দামাদামি করে উঠবেন।

চন্দ্রনাথ পাহাড় থেকে বাঁশবাড়িয়া সি বীচ টু গুলিয়াখালি সি বীচ এর জন্য রিজার্ভ সিএনজি ভাড়া নিবে ৩৫০-৪৫০ টাকা। যাওয়ার পথে সীতাকুণ্ড বাজারে সেরে নিতে পারেন দুপুরের লাঞ্চ। অনেক ভালো রেস্টুরেন্ট রয়েছে বাজারে।বাঁশবাড়িয়া যাওয়ার পথে উপভোগ করবেন গ্রাম্য রাস্তার দুপাশে হাজার হাজার গাছ, ১ ঘন্টার মত লাগবে যেতে।বাঁশবাড়িয়া পৌঁছে আপনি পাবেন সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ, আর কক্সবাজার ফিল। সমুদ্র পাড়ে রয়েছে অসংখ্য দোকান। সেখানে আপনি কাকড়া ফ্রাই থেকে শুরু করে চটপটি ফুসকা আচার সব ই পাবেন। বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত এর প্রধান আকর্ষন হল ব্রীজ। ব্রীজটি সমুদ্রের অনেকখানি পর্যন্ত গিয়েছে। জোয়ার এর সময় এটি পানিতে ডুবে থাকে। সকাল ১১-১২টা আর বিকাল ৪-৫টা জোয়ারের সময়। ব্রীজটি উঠে হাঁটার জন্য আপনাকে ৩০ টাকা দিয়ে টিকেট নিতে হবে।একবার ভাবুন আপনি সমুদ্রের অনেক খানি ভিতরে ডুবন্ত ব্রীজে হাঁটছেন, আপনার প্রিয় জনের সাথে। অন্য রকম এক অনুভুতি। সমুদ্রে রয়েছে মাছ ধরার বিশাল বিশাল ট্রলার। রয়েছে ছোট ছোট স্প্রীড বোট।সেগুলাতে করে আপনি সমুদ্র ভ্রমণ করতে পারবেন। কিছু ট্রলারও রয়েছে। যেগুলো আপনাকে সমুদ্র ঘুরে দেখাবে।

গুলিয়াখালি সি বীচ

বাঁশবাড়িয়া সি বীচ ঘুরে রিজার্ভ করা সিএনজি নিয়ে চলে যাবেন গুলিয়াখালি। সেখানে গিয়ে সিএনজি ভাড়া পরিশোধ করে তাকে ছেড়ে দিন। সিএনজি থেকে মিনিট দশেক হেঁটে পৌঁছে যাবেন সেই বীচ এ।জীবনে অনেক জায়গা দেখেছেন কিন্তু এমন হয়ত কখনও দেখেন নাই। সমুদ্র বলতে আপনি কি বুঝেন? এক পাশে বালি আর এক পাশে পানি। কিন্তু এই সমুদ্র সৈকতটি সম্পূর্ণ আলাদা। জল আর সবুজের খেলায় মেতে উঠেছে এখানে প্রকৃতি। জল আর সবুজের নান্দনিক রসায়ন তৈরী হয়েছে এখানে। সাগরের পাশে সবুজ ঘাসের উপর আছড়ে পরে সমুদ্রের পানি। স্থানীয়রা এইটিকে মুরাদপুর সি বীচ নামেই বলে থাকে। এক পাশে সমুদ্রের জলরাশি আরেক পাশে কেওড়া বন। একি সাথে আপনারা দেখতে পারবেন সোয়ান ফরেস্ট ও ম্যানগ্রোভ বনের মিলিত রুপ। দেখতে পাবেন মাছ ধরার ট্রলার। জোয়ারের সময় : লোকাল মানুষের মতে দুপুর ৩:৩০ – ৫টা।। সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে থেকে চলে যাবেন সীতাকুণ্ড বাজারে। জন প্রতি ৩০ টাকা বা রিজার্ভ এ গেলে ১৫০ টাকা নিবে। সীতাকুণ্ড থেকে ফেনী বা চট্টগ্রাম গিয়ে বাসে/ ট্রেনে যেভাবে খুশি সেভাবে ফিরতে পারেন।

এই তিনটি জায়গার যে কোন দুটি তে গিয়ে আপনি মহামায়া তে ঘুরে আসতে পারেন।মহামায়া কায়াকিং এর জন্য বিখ্যাত বর্তমানে।আমার সাজেশন হবে চন্দ্রনাথ পাহাড় ও গুলিয়াখালি।
মহামায়া যাওয়ার জন্য গুলিয়াখালি থেকে সীতাকুন্ড বাজার এ এসে দুপুরে খেয়ে, ব্রীজের উপর থেকে মহামায়া এর বাসে বা লেগুনায় উঠবেন।লেগুনা ভাড়া নিবে ৪০/৪৫ আর বাস ভাড়া নিবে ২০/২৫ টাকা। লেগুনা/বাস থেকে নেমে রাস্তার ওপাশে গিয়ে মহামায়া যাওয়ার সিএনজি তে উঠবেন।ভাড়া ১৫ টাকা নিবে।
মহামায়া লেকে প্রবেশ করার জন্য ১০ টাকা দিয়ে টিকিট কাটতে হবে।
মহামায়ার সব থেকে আকর্ষনীয় হল কায়াকিং।পড়ন্ত বিকেলে কায়াকিং করার ফিলিংস আপনি নিজে গিয়েই বুঝতে পারবেন।মহামায়া লেক এ আপনি গোছল ও করতে পারবেন।কায়াকিং ঘন্ঠা প্রতি ৩০০ টাকা।স্টুডেন্ট আইডি কার্ড দেখালে ২০০ টাকা।
যেখান থেকে সিএনজি তে উঠেছিলেন সেখান থেকে ঢাকা যাওয়ার বাস পাওয়া যায়।আপনি যদি ট্রেনে যেতে চান তাহলে আপনাকে চয়েজ বাসে করে চিটাগাং স্টেশনে যেতে হবে।ভাড়া নিবে ৮০ টাকা।

পরিশেষে একটাই কথা কোথাও ঘুরতে গিয়ে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলে পরিবেশ দূষণ করবেন নাহ। আমাদের পরবর্তী জেনারেশনকে এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার সুযোগ রাখবেন। সর্বোপরি স্থানীয় মানুষজনের সাথে ভালো ব্যবহার করবেন, তাদের কালচারকে সম্মান করবেন।।