এই বর্ষায় উত্তাল সমুদ্রে সেন্টমার্টিনে

এই বর্ষায় উত্তাল সমুদ্রে সেন্টমার্টিনে, নির্জন সৈকত আর পানির দামে ডাবের কয়েকটি দিন।

লিখেছেন : Sakib Mahmud

সময়টা মাসখানেক আগের। টিওবি হেল্পলাইনে একটা পোস্ট। কেউ এই বর্ষায় উত্তাল সমুদ্রে সেন্টমার্টিনে যাবে কিনা? মুহুর্তেই শ খানেক উপদেশ সম্বলিত কমেন্ট। বর্ষায় এই সময়ে সেন্টমার্টিন যাওয়া নাকি আত্মহত্যার নামান্তর। অনেকে অনেক ভাবে নিরাশ করার চেষ্টা করল।
যাই হোক, হেল্পলাইনের মাধ্যমে ২জন পরিচিত পেয়ে গেলাম আর আমরা আগে থেকেই ৩ জন, মোট ৫ জন মিলে একমত হলাম ঈদের পরের সপ্তাহেই যাব। যদিও মনের কোণে একটু ভয় কাজ করছিল এইসময়ে যাওয়াটা ঠিক হচ্ছে কিনা? বাসে উঠার আগে আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের হাফ টাইম দেখে নিলাম কাউন্টারে বসেই। বাস ছাড়ার পর আরো দুইটা গোল খেয়ে আর্জেন্টিনা হেরে গেল ৩-০ গোলে। এইদিকে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে আর টেনশন বাড়ছে।
ভোরবেলা যখন টেকনাফ নামি চারিদিকে অন্ধকার। সকালের নাস্তা সেরে চলে গেলাম ট্রলার ঘাটে।
ঘাটে গিয়ে দেখলাম অনেক মানুষ। সবাই ঘুরতে যাচ্ছে। মনে একটু সাহস পেলাম। এইদিকে ট্রলার এর লাইনম্যানের কোন খবর নাই আবার জোয়ারের পানিও নেমে যাচ্ছে।
এই করতে করতে ৯:৩০ টার দিকে টিকেট কেটে উঠে পড়লাম ট্রলারে। মানুষ আমরা ৫ জন কিন্তু লাইফ জ্যাকেট ৩ টা। যদিও ট্রলারে কিছু লাইফ জ্যাকেট ছিল যা কিছু ছিল বেশি নোংরা, আর এত মানুষের জন্য অনেক কম।

ট্রলার ঘাট থেকে বের হয়ে আবার টেকনাফের নতুন জেটিতে কয়েকজন ভিআইপি(কোস্টগার্ডের আত্মীয়) ট্যুরিস্ট এর জন্য ৩০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকল।
নাফ নদী অনেক শান্ত, স্বাভাবিক। যাত্রীরা ও হাসিখুশি আনন্দ খোশগল্পে মেতে রইল।
আসল এডভেঞ্চার শুরু হল শাহপরীর দ্বীপের একটু পর থেকে নদী আর সাগরের মোহনায় এসে ট্রলার একটু একটু দুলতে শুরু করল। এরপরই যাত্রীদের চেহারার রঙ একটু একটু বদলাতে শুরু করল।
সবাই চুপচাপ, গুরুগম্ভীর যেন অনন্ত পথের যাত্রী।
দুপাশের কূল যখন দৃশ্যের আড়ালে চলে গেল তখন শুরু হল বাতাস। আকাশে কাল মেঘ জানান দিচ্ছিল একটু পরই মুষলধারে বৃষ্টি নামবে।
ঢাকা থেকে আগত ট্যুরিস্ট দম্পতির ৬-৭ বছরের বাচ্চারা কান্না জুড়ে দিল। বড় বড় ঢেঊ ভিজিয়ে দিচ্ছিল ট্রলারের ভিতর থাকা আমাদের। নিচের পাঠাতনে অনেকে বমি করা শুরু করল। অনেকে আবার নির্বিকার চিত্তে সমুদ্রপানে চেয়ে রইল।

আরো পড়ুন

দক্ষ মাঝি তার পাকা হাতে আস্তে আস্তে ট্রলারকে এগিয়ে নিতে থাকল সেন্টমার্টিন এর দিকে। কিছুক্ষণপরই সেন্টমার্টিনের ভূখণ্ড দৃশ্যপটে গোচর হল। আর সবার কলিজায় যেন পানি ফিরে এল। বাতাস কমে যাওয়ার পর শুরু হল তুমুল বৃষ্টি। আর এর বৃষ্টিকে সঙ্গ করেই বেলা ১ টার কিছু পর সেন্টমার্টিন জেটিতে পা রাখা।
পুরো দ্বীপ ট্যুরিস্ট শুণ্য। শুধু আমাদের সাথে একই ট্রলারে আসা জনা ত্রিশেক ট্যুরিস্ট। খাবার হোটেল, থাকার হোটেল ও সব বন্ধ।
পুরো দ্বীপে ২ টা ভাত খাওয়ার হোটেল খোলা ছিল। আর মজার ব্যাপার ছিল ডাব খাওয়া। আমরা যখন ভাত খেতে বসলাম মিনারেল ওয়াটারের দাম ২০ টাকা আর একটা ডাবের দাম ১৫ টাকা। তাই মিনারেল ওয়াটারের বদলে ডাব খাওয়াকেই সমীচিন মনে করলাম।
রাতে বাজারে ৪০ টাকা টিকেট কেটে ব্রাজিলের খেলা দেখলাম। আর সারারাত সমুদ্রের সামনে বসে ঢেউ গুণলাম।
শীতকালের সেন্টমার্টিন আর বর্ষাকালের সেন্টমার্টিনের মধ্যে যোজন যোজন তফাত। বিশাল ঢেউ, গর্জনে মনে হল এই সময়েই সমুদ্রের ভরা যৌবন।
মাছ ধরার ট্রলারে করে রাতের বেলা মাছ ধরতে যাওয়ার সুযোগ এসেছিল। কিন্তু কোন অজানা কারণে সেই সুযোগ এড়িয়ে গেলাম।
যেইদিন থেকে সেন্টমার্টিন নামলাম এরপর থেকে বৃষ্টি যে শুরু হয়ছে আর থামতেই চায় না। রবিবারো যেদিন ফিরে আসব ঐদিনো ট্রলারে উঠার সময় তুমুল বৃষ্টি। আর ফেরার অভিজ্ঞতা ছিল যাওয়ার থেকে আরো ভয়াবহ।
টেকনাফ পৌঁছে মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে কক্সবাজার এসে যে যার গন্তব্যে রওনা দেয়।

সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। ময়লা ফেলে দ্বীপের সৌন্দর্য যেন নষ্ট না হয় সেদিকে সবার খেয়াল রাখা উচিত।

বিদ্রঃ এই পোস্ট এর মাধ্যমে আমি কাউকে সিগন্যাল এর সময় সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য প্রলুব্ধ/উৎসাহিত/নিরুৎসাহিত করছি না। যার যার নিরাপত্তার দায়িত্ব তার তার।
তবে দুর্বলচিত্তের মানুষদের যাওয়ার আগে একবার ভেবে দেখার পরামর্শ দিব। মাঝপথে যখন দু কূল দেখা যায় না তখন বাচ্চাদের আর্তচিৎকার, মহিলাদের গোঙ্গানি দেখা সত্যিই বেদনাদায়ক।