করোনাঝুঁকি গণপরিবহনে

গণপরিবহনে করোনাঝুঁকি

তাসনিমুল হাসান
২২ মার্চ ২০২০, ১৫:০৫
আপডেট: ২২ মার্চ ২০২০, ১৫:০৬

করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে সারা বিশ্ব আজ হুমকির মুখে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশে এখনো ভয়ানক আকার ধারণ করেনি করোনাভাইরাস। তবে সংক্রমণের শঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় গণপরিবহনের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার অনেক বেশি শঙ্কা রয়েছে।

গণপরিবহন মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু গণপরিবহনে যাতায়াতের সময় ভিড়ের কারণে করোনায় সংক্রমণের প্রচুর ঝুঁকি রয়েছে। বাস, ট্রেন ও লঞ্চে প্রতিদিন মানুষ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করছেন। গণপরিবহনে গাদাগাদি করে চলাফেরার কারণে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি অনেক বেশি।

বাংলাদেশ একটি ক্ষুদ্র দেশ, তবে জনসংখ্যা অনেক বেশি। এ দেশে প্রতিদিন মানুষ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলাচলের জন্য গণপরিবহনে চলাচল করে। সাধারণত চেয়ার কোচ পরিবহন ব্যতীত অন্য গণপরিবহনে প্রতিদিন মানুষ গাদাগাদি করে চলাফেরা করে। যার কারণে করোনা–সংক্রমণের প্রভাব বেশি পড়তে পারে। বাস, ট্রেন, লঞ্চ ছাড়াও রাইড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে অনেক বেশি। মোটরসাইকেলের রাইড শেয়ারিংয়ে ঝুঁকি বেশি, কারণ একই হেলমেট বহু ব্যক্তি ব্যবহার করে। বাস, ট্রেন ও লঞ্চের মধ্যে ঝুঁকি শুরু স্টেশন টার্মিনাল থেকেই।

সড়কপথে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে জেলা শহর ও মহাসড়ক কোথাও পরিচ্ছন্নতার তেমন লক্ষণ নেই। ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় গাড়িতে স্প্রে করার নির্দেশনা ছিল। সেই সিদ্ধান্ত খুব বেশি আমলে নেননি পরিবহনের মালিক ও কর্মীরা। করোনার কাছে ডেঙ্গু কিছুই নয়। এ অবস্থায় দেশের নিবন্ধিত ৪৩ লাখ ৯৪ হাজার ৩৬৫টি গাড়ির মধ্যে কতটা নিরাপদে রাস্তায় মানুষ পরিবহনে চলাচল করতে পারছে।

বাসে যাত্রীরা ঠেলাঠেলি করে উঠছেন। কারও মুখে মাস্ক লাগানো। আবার কারও মুখ খালি। যাত্রীরা বাসে উঠে খালি সিটে বসে পড়ছেন। সিট খালি না পেয়ে কেউ কেউ যাচ্ছেন দাঁড়িয়ে। মাথার ওপর মরিচা পড়া রডই তখন নিরাপত্তার ভরসা। বাসের সিট ছেঁড়া তেল–চিটচিটে। ফাঁকে ফাঁকে ছারপোকার বসবাস। জানালার কাচ ভাঙা। পাটাতনে ধুলো-ময়লা। বিচ্ছিন্নভাবে পড়ে আছে কাগজের টুকরা। ভ্যাপসা গন্ধ। ধোঁয়ামোছার বালাই নেই। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ।

বাসের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি মানুষের সমাগম হয় ট্রেনে। প্রতিদিন প্রায় ৩ লাখ মানুষ ট্রেনে ভ্রমণ করেন। বেশির ভাগ ট্রেনই চলে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে। আন্তনগর, লোকালসহ ৩৬০টি ট্রেন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করে। স্টেশন-প্ল্যাটফর্মেও প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটে।

বাস, ট্রেনের পাশাপাশি লঞ্চের মাধ্যমে দেশের মানুষ অন্যত্র যাতায়াত করেন। রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে ৬০-৭০টি লঞ্চ ঢাকা ছেড়ে যায়। আসেও প্রায় একই রকম। এর বাইরে বিভিন্ন জেলা পর্যায়ে লঞ্চ চলাচল করে। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চে যাত্রী থাকে গড়ে সহস্রাধিক, আর ঢাকার বাইরে তা কয়েক শ।

ভাইরাস সংক্রমণের পরও বাস, ট্রেন ও লঞ্চের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পদ্ধতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। এতে এগুলো থেকে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। অথচ গণপরিবহনে ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকানোর জন্য বারবার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য আমাদের সবাইকে সতর্ক হতে হবে। যাত্রীরা সচেতন হতে হবে। তার সঙ্গে মালিকপক্ষ বা কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন ব্যবস্থা রাখতে হবে।

করোনা প্রতিরোধে গণপরিবহনে নির্দিষ্ট সিট ব্যতীত অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া বন্ধ করতে হবে। বিশেষ করে একটা ট্রিপ শেষ করার পর বাসগুলোয় স্প্রে করে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার, সিটের কভার, হাতল ও ওপরের রডগুলো স্যানিটাইজার দিয়ে মুছে ফেলা যেতে পারে। এতে বাসগুলো অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত থাকবে। ট্রেন ও লঞ্চে প্রবেশপথে যাত্রীদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও থার্মাল স্ক্যানের আওতায় আনা প্রয়োজন। একই সঙ্গে যাত্রীদের মনে রাখতে হবে তারা গণপরিবহন থেকে নামার পর হাত ভালো করে না ধোয়া পর্যন্ত যেন নাকে–মুখে হাত না দেওয়া হয়। তবে সবার আগে যাত্রীদের সতর্ক হতে হবে। যাত্রীরা সর্বোচ্চ সতর্ক না হলে কোনো উদ্যোগই কাজে আসবে না।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া