ঝড় উঠতেই ব্যপক হারে গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়ছে, মাঝে মাঝে পুরো গাছও। সেই দুর্ঘটনায় মানুষ আহত, এমনকি নিহতও হয়েছে। কিন্তু একবার ভেবেছেন কি সেগুলো কী গাছ? কোন কোন গাছ অল্প ঝড় উঠলেই সমূলে উৎপাটিত হয়?
আমি বলে দিচ্ছি —
আমাদের অতি প্রিয় কৃষ্ণচূড়া। সে আমাদের অঞ্চলের গাছ নয়, তার ফুলের এবং ঝিরঝিরি পাতার রূপে মুগ্ধ হয়ে আমরা সেই আফ্রিকার মাদাগাস্কার দ্বীপ থেকে তাকে তুলে এনে সারা বাংলায় ছড়িয়ে দিয়েছি লাল-লাল ফুল দেখার আশায়। কিন্তু খেয়াল করে দেখেছেন কি যে সেই ফুলে কোন পাখি আসে না, পোকা আসে না, ক্ষুদে প্রাণীরাও না। এটি আমাদের পরিবেশের কোন উপকার করে না, অল্প অক্সিজেন দেওয়া ছাড়া। আর এর ডাল ঝড়ো বাতাসেই ভেঙে পড়ে! তার চেয়ে অনেক সুন্দর আমাদের দেশীয় গাছ শিমুল, পলাশ, মান্দার লাগান- পরিবেশের উপকার, প্রাণীকুলের উপকার, আমাদেরও উপকার।
‘মেহগনি” নামের গাছটি আসলো আমেরিকা থেকে,উনি আসলেন, দেখলেন, জয় করলেন, কারণ তার কাঠ দিয়ে মূল্যবান আসবাব হয়! তাই সব গাছ কেটে বাঙালি মেহগনি লাগানোই শুরু করল, যে গাছে পোকা, পাখি, প্রাণী কিছুই হয় না, বসে না, কিন্তু আমাদের আসবাব হয়,সেই আসবাব টেকসই হলেও মেহগনি গাছ সুযোগ পেলেই ভেঙ্গে পড়ে, আমাদের উপরেই!
অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা ‘ইউক্যালিপ্টাস” আর ‘অ্যাকাশিয়া’ তো গ্রাম বাংলার জাতীয় গাছ হয়ে যাবে কদিন পরে। যেখানেই একটু জায়গা, সেখানেই এই দুই গাছে, অনেক গ্রামের ধান ক্ষেতের আইলেও দেখেছি তাদের রাজত্ব! ইনারা শুধু অপকারিই না আমাদের জন্য, বরং আমাদের অঞ্চলের পরিবেশের শত্রু। শুষ্ক এলাকার গাছ বলে বিপুল পরিমাণ পানি শুষে এরা বেড়ে ওঠে। এবং আমাদের দেশের প্রাণী-পোকা-পাখিরা ইনাদের পছন্দ করেন না। অথচ অস্ট্রেলিয়ায় পশু-পাখিরা এই গাছের উপরে নির্ভর করেই টিকে থাকে। আর ঝড়ে ইনারাও বেশ চিৎপটাং হন কিন্তু!
এই তালিকা আর বাড়তেই থাকবে, কিন্তু বলুন তো শেষ কবে একটি এই অঞ্চলে গাছ – বট, পাকুড়, অশ্বত্থ শিমুল, আম, জাম- একদম উপড়ে পড়তে দেখেছেন?অবশ্যই বেশী প্রলয়ঙ্করী ঝড় হলে মহীরুহেরও পতন ঘটে, কিন্তু সামান্য ক্রান্তীয় ঝড়ে সে ভালোই টিকে থাকে।
আমাদের নগর পরিকল্পনাবিদ এবং স্থপতিদের এই ব্যপারে অনেক বেশী নজর দেওয়া উচিত। এবং সেই সাথে খেয়াল রাখা উচিত যে অন্য জায়গা থেকে শিকড়সহ উঠিয়ে বড় বড় গাছ রাস্তায় লাগালেই হবে না, কারণ সেই গাছের শিকড় মাটির গহনে প্রবেশ করে না, বরং দীর্ঘ দিনের পরিকল্পনা করে গাছকে এখানেই বড় করতে হবে, যাতে সে টিকেও থাকে, আমাদের ছায়াও দেয়, পরিবেশে- প্রাণীকুলের উপকারও হয়!
এর মাঝে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সদস্যরা একটা গবেষণায় প্রমাণ পেয়েছেন যে উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ের সময় যে সমস্ত পাখির বাসা নষ্ট হয়ে ডিম ও ছানা শেষ হয়ে যায়, তাদের অধিকাংশই (প্রায় সবগুলোরই) বাসা ছিলো এই ভিন্ন অঞ্চলের গাছগুলোতে, যাদের আমরা না বুঝে, অতি অন্যায় করে লাগিয়েছি বাংলার যত্রতত্র।
বাংলাদেশ প্রাকৃতিক ভাবে যে গাছ হয়, সেই গাছই লাগান সবখানে, তারাই রক্ষা করবে আমাদের ঝড় থেকে (যেভাবে সুন্দরবন করেছে সিডরের সময়), ঝড়ের সময় আমাদের ক্ষতির এবং ভীতির কারণ না হয়ে।
You must be logged in to post a comment.