ঘুরে আসুন মেঘের দেশ দার্জিলিং থেকে

ঘুড়তে ভালোবাসে কিন্তু দার্জিলিং এর নাম শুনিনি এমন হয়তো কাউকে খুঁজে পাওয়াই মুশকিল হবে। পাহাড়ের সাথে মেঘের একটা সম্পর্ক সবসময়ই ছিল। আর যারা ওপার বাংলার সমরেশ মজুমদারের বই পরে অভ্যাস রয়েছে তাদের কথা তো বলার কিছুই নেই। তাদের চোখে সবসময় চা বাগান ভেসে বেড়ায়। আর যারা পাহাড় ভালোবাসেন তাদেরও হতাশ হওয়ার কিছু নেই, চাইলেই হাতের কাছে ছোট্ট এই মেঘরাজ্য থেকে ঘুরে আসতে পারেন ।

কিভাবে যাবো দার্জিলিং

সহজ যাবার দুইটি রাস্তা আছে একটি বেনোপাল যশোর দিয়ে আর আরেকটি হলো পঞ্চগড়ের বাংলাবান্দা বর্ডার দিয়ে ।
যদি বেনোপাল হয়ে যান তাহলে আপনাকে কলকাতা থেকে ৫৫৮ কিমি দুরে আবার শিলিগুড়ি যেতে হবে আর যদি আপনি বাংলাবান্ধা বর্ডার দিয়ে যান তাহলে ভারতে ঢুকার পরই আপনি শিলিগুড়ি পৌছে যাবেন। বাংলাবান্ধা বর্ডারটা নতুন চালু হয়েছে যারা দার্জিলিং যাবেন তাদের জন্য বাংলাবান্ধা বর্ডার বেস্ট আর যারা দার্জিলিং এর সাথে কলকাতাও ঘুরে যেতে চান তারা বেনোপাল যশোর বর্ডার দিয়ে যাওয়া ভালো হবে ।

এমন চা বাগানের মাঝ দিয়ে রাস্তা আপনাকে মুগ্ধ করবে ,গাড়ী দাঁড় করিয়ে ছবি নিতে ভুলবেন না। শিলিগুড়ি শহর থেকে ৭৫ কিমি দুরে দার্জিলিং আপনি রিজার্ভ গাড়ী ১৫০০ রুপিতে পাবেন অথবা শেয়ার করেও যেতে পারেন প্রতিজন ১৫০ রুপি করে নিবে ।। যেটাতে ইচ্ছা সেটাতেই যেতে পারেন । একেবেকে পাহাড়ী রাস্তার অপরুপ সব দৃশ্য উপভোগ করতে করতে কখন যে দার্জিলিং শহরে পৌছে যাবেন বুঝতেই পারবেন না । পাহাড়ের কোলে অসম্ভব সুন্দর শহর দার্জিলিং ।

খরচ:
ঢাকা থেকে বাংলাবান্ধা বর্ডার দিয়ে শিলিগুড়ি যেতে এক হাজার টাকা। আমার কাছে এটাই সবচেয়ে সহজ পথ। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং পার হেড ১৫০ রুপি ভাড়া আর রিজার্ভ ১৫০০ রুপি ।দার্জিলিং এ গাড়ী রিজার্ভ প্রতিদিন ১২শ থেকে দুই হাজার রুপি । কলকাতা দিয়ে গেলে কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি ৫শ থেকে ৬শ রুপি বাসা ভাড়া নিতে পারে ।

কোথায় থাকবো ?

দার্জিলিং আসার পর প্রথম কাজ কি ? অবশ্যই থাকার জায়গা। সেক্ষেত্রে আপনি দুটি কাজ করতে পারেন। এক) বাংলাদেশ থেকে আসার আগেই হোটেল বুকিং করে আস্তে পারেন অথবা দুই) এসে দেখেশুনে একটা পছন্দ করলেন। সেক্ষেত্রে আমি অনলাইন এ হোটেল বুকিং করতেই বেশি পছন্দ করি। Booking.com থেকে আগেই হোটেলের লোকেশন, সুযোগ-সুবিধা , ছবি দেখে, বাজেট এর মাঝে হোটেল বুকিং করি।

দার্জিলিং এ আপনি সস্তা থেকে শুরু করে বিলাসী হোটেলও পাবেন । তবে আমার মতো অধিকাংশদেরই প্রথম পছন্দ মাঝারি মানের তাইনা ? বেশি দামিও না আবার একেবারে কমদামি সস্তা হোটেলও না ।

কোথায় ঘুরবো?

ঘুরোঘুরির জন্য অসম্ভব সুন্দর জায়গা হলো দার্জিলিং, সবগুলো প্লেস আরাম করে দেখার জন্য দুইদিন যথেষ্ট । চাইলে একদিনেও প্রধান প্রধান টুরিস্ট প্লেসগুলো কভার করা সম্ভব । আমরা কিন্তু একদম ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যার মাঝে একদিনেই শেষ করেছিলাম কারণ আমাদের সময় কম ছিলো । টুরিস্ট প্লেসগুলোর অধিকাংশই শহরের আশে পাশে তাই বেশি কষ্ট করতে হবে নাহ।

টাইগার হিল -১০ হাজার ফুট উচু এখানে সবাই খুব ভোরে গাড়ীতে যায়,কান্জনজজ্ঞাতে সূর্যোদয় দেখার জন্য ।
হিমালিয়ান মাউন্টরিং ইন্সটিটিউট এবং চিড়িয়াখানা
চা বাগান আর পাহাড়ের উপর দিয়ে ক্যাবল কারে ৪৫ মিনিটের ভ্রমণ /রুপওয়ে
চায়ের জন্য বিখ্যাত হ্যাপি ভ্যালি টি গার্ডেন
ছবির মতো সাজানো জাপানিজ ট্যাম্পল
টয় ট্রেন যেখানে মোড় ঘুরে সেই বাতাশিয়া লুপ
প্রার্থনা কেন্দ্র ঘুম মনেস্ট্রি
দিরদাহাম টেম্পল
গঙ্গামায়া পার্ক
রক গার্ডেন
দার্জিলিং এর গোরখা স্ট্রেডিয়াম
দড়ি ধরে পাহাড় বেয়ে উঠার জন্য টেনজিং রক ও গুম রক ,এটা ট্রাই করতে পারেন মজার একটা অভিজ্ঞতা হবে
রাজভবন
জাপানিজ ট্যাম্পেল

দার্জিলিং শহরের ভিতরে একটা চত্বর আছে নাম মল চত্বর /মল রোড এখানে বিশাল বসার স্থান।সবাই এখানে এসে আড্ডা দেয়। জায়গাটা পাহাড়ের উপরে।এখানে অবশ্যই ঘুরতে যাবেন রাতের বেলা। চমৎকার একটা জায়গা নানা ধরনের মানুষ আড্ডা দিচ্ছে গান গাচ্ছে ভালোই লাগবে। আমরা প্রতিদিন রাতে হোটেলে খেয়ে দেয়ে এখানে আড্ডা দিতাম ।

উনিস্কো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়া টয় ট্রেনে পুরো শহর ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ আছে। কয়লা চালিত ট্রেনে করে পুরো শহর দেখতে হলে একটু বেশি টাকা গুনতে হবে আপনাকে। বিদেশী টুরিস্টদের জন্য টিকিটের দাম একটু বেশি, এক হাজার রুপি প্রতিজন। আমরা দাম শুনে না ঘুরেই চলে আসছি । যদিও ট্রেনে করে না ঘুরে শুধু ট্রেনের ইঞ্জিন দেখলে আর হর্ন শুনলেও আপনার মনে ভেসে উঠবে আগেরকালের ট্রেন ভ্রমণের ছবি।

আপনারা যে প্রতিটা জায়গাতে যেতে চান সেই  লিস্টটা আপনি ড্রাইভারকে দেখাবেন। সে অনুযায়ী ভাড়া কত হয়। অবশ্যই দামাদামি করতে ভুলবেন না। যাদের হাতে বেশি সময় বা আরও  ঘুরতে চান তারা একদিনের জন্য মিরিক লেক চলে যেতে পারেন। গাড়ী রিজার্ভ করে  কালিম্পংও ঘুরে আসতে পারেন । প্রতিদিনের জন্য গাড়ী রিজার্ভ চারজন বসার মতো ১ থেকে দেড় হাজার আর আট/নয়জন বসার মতো ১৫০০ থেকে দুই হাজার রুপি সর্বোচ্চ ।

খাবার দাবার

এ অংশটা লিখতে আমি মোটামুটি এক্সাইটেড কারণটা হলো দার্জিলিং এ খাবার দাবারের একটা টিপস আপনাকে আমি জানাবো, দার্জিলিং এ সব ধরনের খাবার পাবেন তবে আমরা বাঙ্গালী মুসলিম যারা গরু ছাড়া খাবার দাবার জমেনা তাদের জন্য একটা স্প্রেশাল খাবারের দোকান আছে। দার্জিলিং এ মসজিদের পাশে মুসলিম হোটেল আছে নাম ইসলামিয়া হোটেল, এখানে আপনি সস্তায় গরুর মাংশ খেতে পারবেন গরুর প্লেট মাত্র ৩০ টাকা কলিজি ২০ টাকা !!!!!! কম দামে ধুমাইয়া সুস্বাধু খেতে এর কোন বিকল্প নেই। আমরা সকাল সন্ধ্যা রাত সব বেলা এই হোটেলেই খেয়েছি। দার্জিলিং এ যে কাউকে জিজ্ঞাসা করলেই হবে ভাই মুসলিম হোটেল কোথায় অথবা মসজিদটা কোথায়।

কেনাকাটা
কেনাকাটার জন্য দার্জিলিং খুব ভালো জায়গা বিশেষ করে শীতের কাপড় চোপড় জ্যাকেট ইত্যাদি কেনার জন্য ।। কম দামে খুব ভালো ভালো শীতের জ্যাকেট চাদর ইত্যাদি পাবেন । তবে দাম দর করে নিবেন এখানে প্রচুর দাম চায় । আমাকে একটা শীতের শাল দাম চেয়েছে ১২০০ রুপি আমি এনেছি ৩৫০ রুপি দিয়ে এবার বুঝুন অবস্থা ।