ট্রলারে সেইন্ট মার্টিন ভ্রমন(পর্ব-১)

লিখছেন : Nazmul Hossain Nadim

ট্রলারে সেইন্ট মার্টিন

সেইন্ট মার্টিন নিয়ে আমরা সবাই কম বেশি শুনেছি এবং অনেকেই গিয়েছি ও ইতিমধ্যে্‌ তাই না?
তবে অফ সিজনে মনে হয় খুব অল্প কিছু মানুষ ই সেইন্ট মার্টিনের সৌন্দর্য অবলোকন করতে পেরেছেন।
এবারের লিখা টা আমাদের ৮ জন(৫ জন ছেলে ও ৩ জন মেয়ে) সদস্যের অফ সিজনে সেইন্ট মার্টিন ঘুরে বেড়ানো নিয়ে।

সাধারন নিয়ম অনুযায়ী ই আমরা কল্যানপুর থেকে হানিফ পরিবহনের টেকনাফ যাবার টিকেট(প্রতি টিকেট ৯০০ টাকা) কনফার্ম করেছিলাম ১ সপ্তাহ আগেই। কারন সময় টা ঈদের পরপর ই, তাই টিকেটের ক্রাইসিস চলছিলো।
ভ্রমনের দিন যথাসময়ে ই বাস ছেড়ে গেলো সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে। বিরতি দিয়েছিলো কুমিল্লার নূরজাহান রেষ্টুরেন্ট এ।
আমরা ৮ জন, কিন্তু ৫ টা(১টা এক জনের পক্ষে খাওয়া সম্ভব না) খিচুড়ি নিয়েছিলাম। সাথে চা বা কফি চ্ব ছিলো। মোট বিল এসেছিলো ১৩০০ টাকা।

সকাল ৮/৯ টার দিকে টেকনাফ বাজার আমরা নামি। নেমেই সকালের নাস্তা সেরে নিয়েছিলাম স্থানীয় বাজারে একটা হোটেল এ। খাবারে মান ও স্বাদ অসাধারন ছিলো। বিল এসেছিলো ৮ জনের ৪৮০ টাকা।
এরপর স্থানীয় দের কাছ থেকে ট্রলার ছেড়ে যাবার সময় জেনে নিয়েছিলাম। ট্রলার প্রতিদিন ১১/১২/১ টার দিকে ছাড়ে। ওই সময়ের কিছুটা আগে ঘাটে এসে আপনাকে টিকেট সংগ্রহ করতে হবে। টিকেট মূল্য ২২০ টাকা(২০০টাকা ভারা, ২০ টাকা ঘাটের জন্য; এটা শুধুমাত্র যাওয়ার ভাড়া। আসার সময় আবারো ঘাট থেকে ২২০ টাকায় টিকেট করতে হবে।)। এখানে একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে কারন, আপনি ট্যুরিষ্ট বুঝতে পারলে ভাড়া ৩২০টাকা চেয়ে বসবে। আমার ব্যক্তিগত পরিচয়( বাবা, চাচা সেনাবাহিনী, এক বড় ভাই নেভী তে) এবং সাথের একজন সদস্যের পরিচয়( চ্যানেল আইতে খেলাধুলা বিষয়ক রিপোর্টার) দিলে টিকেট বিক্রেতা আর কথা বাড়ায়নি।

নাস্তা করে আমরা কাছাকাছি জায়গা- টেকনাফ বিচ ও আশেপাশের জায়গা গুলো ঘুরে দেখেছি। এই ঘুরাঘুরির জন্য অটো ভারা নিয়েছিলাম ৩০০ টাকায়।
১২ টার মধ্যে ঘাটে চলে আসি, নির্দিষ্ট ট্রলারে উঠে যাই। উঠার পরপর ই তুমুল বৃষ্টি শুরু। যাক এই নিয়েই ট্রলার যাত্রা শুরু হলো। পথে নিয়মানুযায়ী বিজিবির চেক হলো, যেটা ভালোই লাগলো দেখে।
নাফ নদী তে যখন ছিলাম, সবাই ভাবছিলাম এতো শান্ত পানি, কেন যে মানুষ শুধু শুধু ভয় দেখালো। কিছুক্ষন পর মাঝির সহযোগী কে যখন জিজ্ঞেস করলাম, ভাই পৌছাতে আর কতক্ষন? বললো,
এখনো ত সাগরেই আসলাম না, অপেক্ষা করেন। আমরা ও চিল মুডে ছিলাম, ভাবটা এমন, এ আর কিসের ভয়। কিছুক্ষন পর যখন লাইফ জ্যাকেট বিতরন শুরু করলো তখন একজন সদস্য (আশিক) আমার দিকে ভয় আর উতকন্ঠা নিয়ে তাকালো। আমি তাকে আশ্বস্ত করলাম তেমন কিছু হবে না, চিল কর।

কিছুক্ষন পর যখন ট্রলার সাগরে এন্ট্রি নিলো, আহা…!!!!!
আমরা ৩ তা ছেলে ছাড়া সবার ই চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিলো ভয়ে। আমি ট্রলারের পেছনের দিকে উপরে বসেছিলাম, ঢেউ এর অভিজ্ঞতা টা ভালোভাবে নেয়ার জন্য। আমার চিন্তা ছিলো, যদি সাগরে মৃত্যু লিখা থাকে তবে এখানেই মরবো। আর যদি ব্যাপার টা পাড়ি দিয়ে যেতে পারি তবে একটা লোমহর্ষক অভিজ্ঞতা থাকবে সারা জীবনভর। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমরা যাওয়ার আগের দিন পর্যন্ত সাগরে ৩ নম্বর বিপদ সংকেত চলছিলো। তো যা বলছিলাম, একেক ঢেউ আসছে আর ট্রিলার অনেক উচুতে উঠছে, নামার সাথে সাথে আবার ইয়া বড় এক ঢেউ আসছে। আমি পালা করে সবার চেহারার অভিব্যক্তি দেখছিলাম। ঝড়ো হাওয়া সাথে উত্তাল সমুদ্র, মাথার উপর মেঘলা আকাশ, ভয়টা কাটিয়ে উপভোগ করতে পারলে আপনার জীবনের অন্যতম একটা মুহূর্ত হয়ে থাকবে।

এই উত্তাল ঢেউ ৩০-৪০ মিনিট সময় জুড়ে ছিলো, এরপর সাধারন এরিয়া চলে এসেছিলো আর সেইন্ট মার্টিন ও দেখা যাচ্ছিলো হালকা করে। সেইন্ত মার্টিনে ট্রলার নোঙর ফেলার পুর্বেই কোষ্ট গার্ডের একটা ট্রলার মাঝিকে ইশারা করলো ট্রলার থামানোর জন্য। ট্রলারের কাগজপত্র চেক করলো সাথে মাথাপিছু করে লাইফ জ্যাকেট ছিলো না বলে ইচ্ছেমত বকাঝকা করলো; এটাও আমায় মুগ্ধ করলো। আইনের শাসন দেখলে কেন যেনো ভালই লাগে, ছোট বেলা থেকেই কঠোর নিয়ম আর শাসনের মাঝে বড় হয়েছি বলেই হয়তো।

কোষ্ট গার্ড ওকে দেয়ার পর ট্রলার জেটির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো, আর ১২ মিনিট পর ই আমরা পৌছে গেলাম কাংখিত দ্বীপে। আমাদের দেশের একটা অংশ, সেইন্ট মার্টিন দ্বীপ।

লিখা টা আরো বড় হলে আপনারা ধৈর্য হারিয়ে ফেলবেন। তাই আজ এইটুকু ই… আগামী পর্বে সম্পূর্ন ভ্রমন কাহিনী শেষ করে দেয়া হবে।
আশা করি পড়ে নিবেন।। 😊😊
(কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জিজ্ঞেস করতে পারেন।)

 

#যেখানেই ঘুরতে যান, পরিবেশ নষ্ট করবেন না যত্রতত্র ময়লা ফেলে। ময়লা যথাস্থানে ফেলুন, পর্যটন জায়গা গুলো পরিষ্কার রাখুন। দেশ আমাদের, এর সম্পদ ও আমাদের; তাই রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমাদের ই। #

সেইন্ট মার্টিন ভ্রমন নিয়ে ছোট্ট একটা ভিডিও বানিয়েছি, ভালো ফরমেটে দেখতে ক্লিক করুনঃ