ঘুরে আসুন ধূপপানি ঝর্ণা, ন-কাটা ঝর্ণা, মুপ্পোছড়া ঝর্ণা, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই লেক

ঘুরে আসুন ধূপপানি ঝর্ণা, ন-কাটা ঝর্ণা, মুপ্পোছড়া ঝর্ণা, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই লেক

লিখেছেন : Nurul Amin

ধূপপানি এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর ঝর্ণাগুলোর মধ্যে একটি, সুবিশাল উচ্চতা, শুভ্র জলরাশির ঝর্ণা আর ঝর্ণার নিচের গুহার জন্য ট্রেকারদের কাছে এই ঝর্নাটির আবেদন সবসময় অন্যরকম, ঝর্ণার স্বচ্ছ পানি এবং অনেক উচু থেকে আছড়ে পড়া জলরাশি আপনাকে একরকম পাগল করে দিবে, ঝর্ণার নিচের গুহায় চোখ বন্ধ করে বসলে মনে হবে অন্য কোন জগতে চলে গেছেন । ঝর্ণায় এখন অনেক পানি, যারা যাওয়ার প্ল্যান করছেন তারা খুব তাড়াতাড়ি প্ল্যান করে ফেলুন । গ্রূপ ছাড়া এই ধরণের ট্যুর একেবারেই সম্ভব নয়, তবে গ্রূপ-এ মেম্বার বেশি হলে সবচেয়ে ভালো, গ্রূপ মেম্বার কম হলে খরচের পরিমানটা বেড়ে যায় ….আমরা আগে থেকে ট্রলার, থাকার জায়গা, গাইড ঠিক করে নিয়েছিলাম । নিজাম ভাই – ০১৮৬০০৯৯২৯ – এর সাথে কথা বলে থাকার জায়গা (৪ জন ৫০০ টাকা, ২ জন ৩০০ টাকা), খাওয়া (ভাত ঘর) এবং গাইড সব জায়গায় ৫০০ করে ঠিক করে রাখতে পারবেন, ট্রলার – (ইউসুফ মাঝি – ০১৫৩৯৫৩০০৩৭, সুজন মাঝি – ০১৮৬১৭৯২৪৫২) ।

ধূপপানি ঝর্ণার সাথে বোনাস হিসেবে দেখতে পাবেন ন-কাটা ঝর্ণা, মুপ্পোছড়া ঝর্ণা, গাছকাটা ঝর্ণা আর রাতে ট্রলারে করে কাপ্তাই লেকের মাজখানে গিয়ে ট্রলার বন্ধ করে আকাশে তারার মেলা , সাথে নীলাভ কাপ্তাই লেক তো থাকছেই ….

যেভাবে যাবেনঃ
১ম রাত: ঢাকা থেকে নন এসি বাস-এ করে কাপ্তাই (ঢাকা থেকে বাস এর টিকিট করার সময় রিটার্ন টিকিট অবশ্যই অবশ্যই করে নিবেন ) ।

১ম দিন ও ২য় রাত : কাপ্তাই নেমে হালকা নাস্তা করে কাপ্তাই ঘাট থেকে রিসার্ভ ট্রলারে ২ ঘন্টায় বিলাইছড়ি (পথে আর্মি চেক পোস্ট পড়বে, আই ডি কার্ড এর ফটোকপি জমা দিয়ে পারমিশন নিতে হবে), সেখানে আগে থেকে ঠিক করা থাকার জায়গায় ফ্রেশ হয়ে গাইড নিয়ে ন-কাটা ঝর্ণা এবং মুপ্পোছড়া ঝর্ণার উদ্দ্যেশে যাত্রা করবেন, ৪০-৪৫ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যাবেন ন-কাটা ঝর্ণায়, এখানে কিছু সময় কাটিয়ে ৩০-৩৫ মিনিট ট্র্যাকিং করে পৌঁছে যাবেন মুপ্পোছড়া ঝর্ণায় । সময়ের ব্যবহার করতে পারলে আপনি গাছকাটা ঝর্ণা দেখে আসতে পারবেন, সময়ের অভাবে আমরা গাছকাটা ঝর্ণা দেখতে পারিনি ।

২য় দিন ও ৩য় রাত : খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে ট্রলারে করে প্রায় ২ ঘন্টায় উলুছড়ি পৌছে যাবেন, রাতে খাওয়ার সময় সকালের নাস্তার অর্ডার দিয়ে রাখবেন, নাস্তা ট্রলারএ করে নিবেন । পথে ২টা আর্মি চেকপোস্ট পড়বে (আগে থেকে সবার আই ডি কার্ড এর কপি একজায়গায় গুছিয়ে রাখবেন) । উলুছড়ি থেকে ছোট ডিঙি নৌকা নিতে হবে, নৌকা আপনাকে যেখানে নামিয়ে দিবে সেখান থেকে আপনার ট্র্যাকিং শুরু, মোটামুটি ট্র্যাকিং জানলে আপনার ১:৪৫-২ ঘন্টার মতো সময় লাগবে কাঙ্খিত ধূপপানি ঝর্ণায় পৌঁছতে । ঝর্ণার কাছে আসার পর আমার অনুভূতি কোনো ভাবেই ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না, যাদের সম্ভব আমি বলবো একবার হলেও এই বর্সায় ঘুরে আসুন ….আপনার হাজার বছর মনে থাকবে….ট্রলার রিসার্ভ করা থাকলে দুপুর ১-১:৩০ টার মধ্যে ধূপপানির মায়া ত্যাগ করে আপনাকে ফিরে আসতে হবে, বিলাইছড়ি পৌছে দুপুরের লাঞ্চ করে আপনাকে ফিরে আসতে হবে কাপ্তাই, বোনাস হিসেবে দেখবেন নীলাভ কাপ্তাই লেক, আর সূর্য অস্ত যাওয়ার দৃশ্য দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলে আপনি সাধারণ কেউ নন ….. কি আর করার নিজেকে অসাধারণ প্রমান করে কাপ্তাই চলে আসলাম ।

খরচ: ঢাকা-কাপ্তাই -ঢাকা -১১০০ টাকা, সকালের নাস্তা – ৫০ টাকা, ২ দিনের জন্য রিজার্ভ (কাপ্তাই-বিলাইছড়ি-ন-কাটা ঝর্ণা-মুপ্পোছড়া ঝর্ণা-গাছকাটা ঝর্ণা-ধূপপানি ঝর্ণা-কাপ্তাই) ট্রলার ভাড়া – ৫৫০০ টাকা (১8 জন ৪০০ টাকা করে), গাইড – ১০০০ (ন-কাটা ঝর্ণা, মুপ্পোছড়া ঝর্ণা এবং ধূপপানির গাইড – ১8 জন ৭৫ টাকা করে ), উলুছড়ি থেকে ছোট ডিঙি নৌকা ভাড়া (১৪ জন ৭৫ টাকা করে), বিলাইছড়ি থাকা – ৫০০ টাকা (১ রাত – ৪ জন ১২৫ টাকা করে) , বিলাইছড়ি খাওয়া – ভাত, আলু ভর্তা, মুরগি/মাছ, ডাল – ১১০ টাকা (৩ বেলা), খিচুড়ি ভর্তা, ডিম —- ৮০ টাকা (২ বেলা) । আমাদের ১৪ জনের গ্রূপে জনপ্রতি প্রায় ২৫০০ টাকার মত পরেছিল ।

যা নিতে পারেন: ট্রেকিং-এর সময় পানি (অবশ্যই অবশ্যই অবশ্যই), খেজুর, স্যালাইন, কিছু শুকনা খাবার, মানসিক শক্তি, পলিথিন, আঙলেট, নি ক্যাপ এবং ট্রেক করার উপযোগী জুতা । নেটওয়ার্ক হিসেবে টেলিটক অথবা রবি/এয়ারটেল ছাড়া আর কোনো নেটওর্য়াক পাবেন না ।

যা মানতে হবে: ন্যাশনাল আই ডি কার্ড (অন্যথায় যে কোনো ফটো আই ডি কার্ড বা পাসপোর্ট এর ফটোকপি) ) – এর তিনটি ফটোকপি অবশ্যই সাথে নিয়ে যাবেন নতুবা আর্মি ক্যাম্প থেকে পারমিশন পাবেন না । স্থানীয় লোকজনদের সবসময় সম্মান করুন, এখানকার লোকজন অনেক ভালো, প্রয়োজনে তাদের কাছে পাবেন ।

বি: দ্র: প্রকৃতির অনন্য উপহার এই অপরূপ সৌন্দর্য রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের, দয়া করে পানির বোতল, বিস্কুট, কেক এর প্যাকেট এবং অন্যান্য আবর্জনা দিয়ে প্রকৃতির পরিবেশ নষ্ট করবেন না । যারা সাঁতার জানেন না নিরাপত্তা বিবেচনায় অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট পরিধান করবেন । ভ্রমণ সংক্রান্ত কোনো কিছু জানার থাকলে আমাকে নক করবেন ।