না দেখিলে চরম মিস – তৈদুছড়া ঝরনা, খাগড়াছড়ি

সবার জন্য এই জায়গা নয় আগেই বলে রাখি। তবে এতো অল্প টাকায় আর এতো অল্প সময়ে এতো এডভেঞ্চার দেশে কি, বিদেশেও মনেহয় খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। সেদিন হঠাত পুরনো ছবি দেখতে দেখতে মনে হল এই জায়গার পোস্ট তো কখনো দেখিনা, সবাই খালি বান্দারবানের ঝরনা দেখতে যায় ।

বেশ কিছু বছর আগের কথা, আলুটিলা গুহা আর রিছং ঝরনা তো সবাই যায় আমরাও কয়েকজন বন্ধু মিলে গিয়েছিলাম দেখতে,গুহা দেখে ঝরনায় ঝাঁপা ঝাঁপি করে, প্যান্ট ছিঁড়ে একদিন কাটিয়ে দেই। যারা আলুটিলার আলোর রশ্মি দেখতে চান,তাদের অবশ্যই সকাল ৯ টার আগে সেখানে যেতে হবে।***

পরের দিন ঠিক করি তৈদুছড়া দেখতে যাব। “আগে যদি জানতাম রে বন্ধু পথ এতো দুর্গম, ছাড়িতাম কি হোটেল আমি ছাড়িতাম না রুম !”
চার জনের মধ্যে আমার স্বাস্থ্য মাশাল্লাহ সবচে ভাল।যাইহোক আমার কোন ধারনাই ছিলনা পথ আর দূরত্ব সম্পর্কে, বন্ধুরা বলে আমি সাথে রওনা দেই। স্বাস্থের সাথে সাহসও আমার অনেক ভাল, তাই পরে আর কোন সমস্যা হয়নি। চান্দের গাড়ির ছাদে করে দীঘিনালা পৌছাই । বাস স্ট্যান্ডে নেমে দেখি কমলা বিক্রি করছে একজন, সেগুলো নাকি খাগড়াছড়ির বাগানের , কিনে নেই এক ডজন। তৈদুছড়া যাওয়া আসায় আপনার লাগবে ৫ ঘণ্টা কম বেশি।সকাল ৯ টায় হাটা শুরু করে ফেরত এসেছিলাম বিকাল ৫ টায়, মাঝে ছবি তোলার বেপার ছিল তাই আমাদের সময় বেশি লাগে ।

পাহাড়ি উঁচু নিচু পথ, হাঁটু পানি, কোমর পানি ভেঙ্গে আর খাড়া পাহাড় বেয়ে যেতে হবে এখানে।শহর থেকে প্রথমে দীঘিনালা যেতে হবে, দীঘিনালা বাস স্ট্যান্ড থেকে যেতে হবে আবার দিঘিনালা বাজার, সেখান থেকে একজন গাইড ঠিক করে হাটা শুরু করতে হবে, গাইড ছাড়া এখানে যাওয়া অসম্ভব প্রায়। পথে কোন জনবসতি নেই। তাই খাবার, পানি আর ফাস্ট এইড কিট আগে থেকেই সাথে নিই যেতে হবে। পথ ছিল ভয়ঙ্কর সুন্দর আর ভয়ঙ্কর বিপদজনক, আমার স্যান্ডেল পথে ছিঁড়ে যায়, একজনের নখ উল্টে যায়। কিছু কিছু জায়গা পাড় হয়েছি এক দের ফুট রাস্তা সাথে খাড়া পাহাড় আর এক পাশে খাড়া খাদ নেমে গেছে ১০০-২০০ ফিট।আবার কথাও ৯০ ডিগ্রি পাহাড় গাছের শীকর, ঘাস, মাটি ধরে বেয়ে উঠতে হয়েছে। রোদ ছিল খুব, পাহাড় গুলো পাড় হবার সময় গরমে প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছিল, আবার কখন যেতে হচ্ছিল প্রচণ্ড পিচ্ছিল ঝিরিপথ দিয়ে, যেমন পিচ্ছিল পথ ততই সুন্দর, কোথাও কোন মানুষ নেই, শুধু রঅ বিউটি ।

হাঁটতে হাঁটতে দেখবেন ঝিরিপথের স্বচ্ছ পানিতে ছোট ছোট মাছ ছোটাছুটি করছে। কোথাও পাহাড়ের ফাটল দিয়ে পরিষ্কার পানি বের হচ্ছে , বাঁশ দেয়া, বাঁশ চুইয়ে কলের মত পানি পরছে, চাইলে সেই পানি খেতে বা নিয়ে আসতে পারবেন বোতলে করে।কখনো সুরঙ্গের মত ঝিরিপথ বড় বড় পাথর আর গাছ দিয়ে ঢাকা, প্রায় অন্ধকার। কোথাও পাহাড়ি ঢলে বয়ে আনা মরা গাছ পরে ব্রিজ এর মত হয়ে আছে, তার উপর দিয়ে পাড় হতে হবে আপনাকে। আবার বড় বড় পাথর পরে আছে, তার নিচ দিয়ে পানি বইছে, সেটা ডিঙিয়ে যেতে হবে আপনার। ঝিরিপথের কোথাও হাঁটু পানি কোথাও বুক সমান পানি আবার কোথাও অনেক গভীর, ওই জায়গাগুলো পাড় হবার জন্য পাহাড়ে উঠতে হচ্ছিল। এখানে যাবার কয়েকটা পথ আছে , কষ্টের পথই সবচে সুন্দর। প্রথম ঝরনাটি প্রায় ৭০ ফুট উঁচু।

ঝরনার পানি পাহাড়ের গাঁয়ে পরে তা পাহাড় বেয়ে নিচে এসে ছোট একটি হ্রদের মিলে গিয়েছে। প্রথম ঝরনার ডানপাশ দিয়ে পাহাড়ের বেয়ে উঠলেই দ্বিতীয় ঝরনাটি। এখানে ৯০ ডিগ্রি এঙ্গেলে পাহাড় বেয়ে ১০০ ফুটের মত উপরে উঠতে হবে স্পাইডার ম্যানের মত । উপরে উঠলেই সামনে পড়বে দ্বিতীয় ঝরনা মুখ যেখান থেকে প্রথম ঝরনার পানি পড়ছে। ঝিরি পথ ধরে হাটতে থাকলে সামনেই দ্বিতীয় ঝরনাটিতে। এই পথটি ভয়ঙ্কর সুন্দর আর অনেক বেশি পিচ্ছিল, এখানে আপনাকে খুব সাবধানে পাথরের দেয়াল ধরে ধরে আস্তে আস্তে আগাতে হবে। বড় বড় পাথর আর পানি পেরিয়ে যেতে হবে দ্বিতীয় ঝরনাটিতে । এটি প্রায় ১০০ ফুট উঁচু। এখানে সারা বছরই পানি থাকে।

আমাদের জনপ্রতি খরচ হয়েছিল সবমিলিয়ে এক রাত দুই দিনে ১৭০০ টাকা । কষ্ট ছিল ১০০% রোমাঞ্চ ছিল ২০০% ।

লিখেছেনঃ Rafaat Pronoy