বরিশালের প্রধান প্রধান দর্শনিয় স্থান

আসাদুজ্জামান নাঈম এর ফেইসবুক টাইমলাইন থেকে নেয়া

বরিশালের প্রধান দর্শনিয় স্থান সম্পর্কে আলোকপাত। আশাকরি বরিশালে ভ্রমনের জন্য পরিষ্কার ধারনা পেয়ে যাবেন

# শাপলার_রাজ্য – শাপলা বিল,সাতলা
# ভাসমান_পেয়ারা_বাজার – আটঘর,কুরিয়ানা
# শের_ই_বাংলার_বাড়ি – চাখার
# গুঠিয়া_মসজিদ
# দূর্গাসাগর_দীঘি
# যানজট_মুক্ত_বরিশাল_সিটি

স্বল্প খরচে, অল্প সময়ে কিভাবে এতো জায়গা ঘুরবেন?
আসুন তাহলে শুরু করি যাত্রা। ঢাকা সদরঘাট থেকে রাত সাড়ে ৮ টায় টাইইটানিক গুলো বরিশালের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।টাইটানিক বললাম বিশ্বাস হলো না? তাহলে ছবিগুলো ভালো করে দেখুন। এই লঞ্চ গুলো টাইটানিকের থেকে কম না। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে বরিশালের যেকোনো একটি টাইটানিকে উঠে বরিশাল লঞ্চঘাটে নামুন।তবে আমি সাজেস্ট করব সুন্দরবন -১০,সুন্দরবন-১১ অথবা পারাবাত-১২ লঞ্চে যেতে। পোষ্টে সুন্দরবন-১০ লঞ্চের ছবি দেয়া আছে।
লঞ্চ ভাড়া-
ডেক – ২০০ টাকা
সিঙ্গেল কেবিন -৮০০ থেকে ৯০০
ডাবল কেবিন – ১৬০০ থেকে ১৮০০
ফেমিলি কেবিন – ২০০০ থেকে ৪০০০
সেমি ভিআপি – ৩০০০ থেকে ৫০০০
ভিআইপি-৪০০০ থেকে ৬০০০

একটি সিঙ্গেল/ডাবল কেবিনে কি ৫-৬ জন যায়?

হ্যা, যায়।এক্ষেত্রে লঞ্চ কতৃপক্ষ শুধু এক জনের টিকিট দিবে( ডাবলের ক্ষেত্রে দুই জনের) অতিরিক্ত যারা থাকবে তাদের ডেকের টিকিট কাটতে হবে।

ব্যতিক্রম কিছু না হলে ৫ টার মধ্যেই লঞ্চ বরিশাল পৌছাবে। লঞ্চে ফ্রেশ হয়ে লঞ্চ ঘাটের আশেপাশে অবস্থিত হোটেলে হালকা খেয়ে নিতে পারেন। তবে না খাওয়াটাই বেটার কারন ঐ দিকের সৌন্দর্য যে তাহলে মিস হয়ে যাবে। হ্যা, ঠিকই ধরছেন শাপলা রাজ্যের সৌন্দর্য মিস হয়ে যাবে। কারন সাতলার বহু মানুষের জীবিকা এই শাপলা। সকালে শাপলা তুলে বিক্রি করেই তাদের সংসার চলে।

 

# শাপলার_রাজ্যে_ভ্রমন
খাবার কিনে নিয়ে মাহেন্দ্র / আলফা রিজার্ভ করুন।
মাহেন্দ্র / আলফা নামই হুনলাম প্রথম, এইডা আবার কই খুজমু?
চিন্তা নেই ওরাই আপনাকে খুজে নিবে।লঞ্চ ঘাট থেকে বেরোতেই দেখবেন তাদের লাইন তারা বলবে ” ভাইজান বা আফা মাহিন্দ্রা/আলফা লাগবে।
তারপর কথাবার্তা বলে দামদর ঠিক করে নিবেন। আশাকরি হাজার টাকায়ই পেয়ে যাবেন। এক গাড়ীতে আট জন যাওয়া যায়। তাই ৬-৮ জন এক সাথে ঘুবতে যাওয়া ভালো। দের ঘন্টার আগেই সাতলা পৌছে যাতে পারবেন (যদি কোনো কারনে রিজার্ভ গাড়ী না পাওয়া যায় তাহলে মেইন রাস্তায় উঠুন অটোতে করে নোথুল্লাবাদ বাস স্ট্যান্ড চলে যান, ঐ যায়গা থেকে সরাসরি সাতলা বাস যায়) এর পর নৌকা রিজার্ভ করে নিন। একটি ছোট নৌকায় ৩-৪ জন ওঠা যায়। ঘন্টা খানেক ঘুরলে দুইশ টাকার মধ্যে হয়ে যাবে। উপভোগ করুন ভেনিসের শাপলার বিল।(এপ্রিল থেকে অক্টোবর/নভেম্বর পর্যন্ত কম বেশি শাপলা থাকে,বেস্ট টাইম সেপ্টেম্বর- নভেম্বর)

#ভাসমান_পেয়ারা_বাজার
শাপলা রাজ্য ভ্রমণের শেষে যে কেউকে জিজ্ঞেস করবেন স্বরুপকাঠীর যাওয়ার ছোট লঞ্চ বরিশালের ভাষায় টেডি লঞ্চ / ট্রলার কোথা থেকে ছাড়বে। ওখান থেকে টেডি লঞ্চ অথবা ট্রলারে করে স্বরুপকাঠী চলে আসুন ৪০-৫০ টাকা ভাড়া জন প্রতি( যদি স্বরুককাঠির ট্রলার না পাওয়া যায় তাহলে বানারিপাড়ার ট্রলারে বানারিপাড়া চলে আসুন। বানারিপাড়া হতে ১০ টাকা বাস ভাড়া দিয়ে স্বরুপকাঠি চলে যান)।
স্বরুপকাঠী থেকে ট্রলার রিজার্ভ করে নিন ভাসমান পেয়ারা বাজার দেখার জন্য। ৭০০-১০০০ টাকার মধ্যে ট্রলার পেয়ে যাবেন সব জায়গা ঘুরে দেখতে পারবেন।(আর কিছু দিন পর পেয়ারার সিজন)

এর পর দুপুরের খাবার সেরে নিন।

# শের_ই_বাংলার_বাড়ি_ভ্রমন
স্বরুপকাঠী থেকে বরিশালের বাসে উঠে গুয়াচিত্রা নেমে পরুন, ১৫ টাকা ভাড়া।গুয়াচিত্রা নেমে ভ্যান গাড়িতে ১০ টাকা জন প্রতি ভাড়া দিয়ে চাখার যান। চাখার রয়েছে শের-ই-বাংলা জাদুঘর এবং তাঁর রেস্ট হাউজ,ফজলুল হক কলেজ (দক্ষিন বাংলার এক কালের অনত্যম সেরা কলেজ) এছাড়া বেশি কিছু নেই চাখার। ও হ্যা, চাখারের মিষ্টি খেতে ভুলবেন না( মা মিষ্টান্ন ভান্ডার ট্রই করতে পারেন)।

# গুঠিয়া_মসজিদ
চাখার হতে আবার গুয়াচিত্রা চলে আসুন। তারপর বরিশালগামী বাস অথবা মাহিন্দ্র ধরে গুঠিয়া চলে যান ১৫-২০ টাকা ভাড়া। এরপর সন্ধায় উপভোগ করুন দক্ষিণ বাংলার বৃহৎ মসজিদের সৌন্দর্য।

যারা এক দিনের ট্যুর দিবেন তারা বেশি না করে ৭ টার সময় বা তার আগেই বেরিয়ে পরুন। বরিশালের উদ্দেশ্যে নয় গুঠিয়া বাজারের উদ্দেশ্যে।একটা মাস্ট ট্রাই আইটেম বাকি আছে, দেশ বিখ্যাত গুঠিয়ার সন্দেশ। গুঠিয়া বাজার থেকে সন্দেশ কিনে/খেয়ে রওনা দিন বরিশালের উদ্দেশ্যে, ২৫-৩০ টাকা ভাড়া।তারপর লঞ্চ ঘাট থেকে লঞ্চ ধরে ঢাকায়।

[নোট:এক দিনের ট্যুরে গেলে এইসব যায়গা ছাড়া অন্য কিছু ঘুরে দেখতে পারবেন না। যা দেখবেন তাও সব কিছু পর্যাপ্ত সময় নিয়ে দেখতে পারবেন না,দৌড়ের উপর থাকা লাগবে। আর লঞ্চ মিস হয়ে যেতে পারে তাই এক দিনের ট্যুরে গেলে আসার সময় বাসে আসা বেটার তাহলে। রাত ১১ বা ১২ টার বাসে টিকেট কাটলে দৌড় একটু কমবে।]

যারা এক দিনের ট্যুর দিয়ে গেলো তো গেলো যারা রয়ে গেলো তারা গুঠিয়া বাজার থেকে সন্দেশ খেয়ে নিবেন।
আজ আর দরকার নেই। বাস ধরে বরিশালে গিয়ে হোটেল নিয়ে নিন। সদর রোডে ভালো মানের কিছু হোটেল রয়েছে ১২০০-২০০০(আনুমানিক) মধ্যে হয়ে যাবে।আর কমে চাইলে লঞ্চ ঘাটের ঐ দিকে কিছু হোটেল রয়েছে।

পরের দিন সকালে –

# দূর্গা সাগর ট্যুর
নথুল্লাবাদ থেকে স্বরুপকাঠীগামী বাস অথবা মাহেন্দ্রতে করে দূর্গা সাগর গিয়ে নামুন, ২০-২৫ টাকা ভাড়া। ১০ টাকার টিকিট কেটে ভিতরে প্রবেশ করুন। মনোরম পরিবেশ রয়েছে ভিতরে।চাইলে গোসল করে নিতে পারেন।

এরপর বরিশাল শহরের মধ্যে এবং আশেপাশে সুন্দর সুন্দর যায়গা ঘুরে আসুন। বিবির পুকুর, বেলেস পার্ক,দপদপিয়া ব্রিজ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এছাড়াও প্রাচ্যের বিখ্যাত কলেজ ব্রজমোহন কলেজ, ৩০ গোডাউন নদীর পার। আপনি চাইলে আপনার ভ্রমনকে আরও একটু নতুনত্ব দিতে পারেন গ্রীন লাইন ওয়াটার ওয়েজের মাধ্যমে ঢাকায় ফিরে। এক্ষেত্রে নরমাল সময় আগের দিন টিকিটা কাটলে ভালো।গ্রীন লাইন ৩ টায় বরিশাল থেকে ছেড়ে ৯ টায় ঢাকা আসে। এটি সুন্দর একটি যান ভ্রমনের জন্য।
অন্যথায় রাতে লঞ্চে করে ঢাকায় চলে আসুন।

আলাদা আলাদা যেতে চাইলে
শাপলা বিল – পোস্টে যেমন দেয়া আছে অমনেই যাবেন তারপর ব্যাক করবেনা আবার।অন্য রুটেও যাওয়া যায় তবে ঐ রুটের লঞ্চ ছোট,ঐ রুটে না যাওয়াই ভালো।

ভাসমান পেয়ারা বাজার-বরিশাল থেকে বাসে আথবা মাহেন্দ্রতে স্বরুপকাঠী। বাকি সব সেইম।

চাখার,গুঠিয়া মসজিদ এবং দূর্গাসাগর – বরিশাল থেকে মাহেন্দ্র বা বাসে যেতে পারবেন।

কেউ কেউ হয়ত জীবনে প্রথম বারের জন্য উপভোগ করতে পারবেন যানজট এবং দুর্গন্ধমুক্ত সিটি।

চাইলে একই সাথে কুয়াকাটা ট্যুর দিয়ে আসতে পারেন। বরিশাল থেকে ২৭০ টাকা বাস ভাড়া।

 বি:দ্র: আপনরা ভ্রমনে গিয়ে ময়লা আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলবেন না। 

ম্যাপ / ডাইরেকশন এর জন্য ক্লিক করুন