সাতভাইখুম

সাতভাইখুম

লিখেছেন : Mohammad Nurul Alam

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানের থানচিতে অবস্থিত আমিয়াখুমের ঝর্ণা। এখান থেকে সামান্য উপরে উঠলেই শুরু হয় ছোট-বড় অনেক পাথর দিয়ে সাজানো পাথুরে রাস্তা। খুব সাবধানাতর সাথে রাস্তুটুকু পার করার পরে সামনে পড়বে বিশাল আকৃতির পাথরের পাহাড় আর তার মাঝে সবুজ, শান্ত ও স্বচ্ছ জলধারা। আর এখান থেকেই শুরু সাতভাইখুম। অনেকে একে ভেলাখুমও বলে। পরের পথটুকু যেতে হবে বাঁশের ভেলায় করে। ভেলায় চড়ে যাত্রা শুরুর পর আপনার মনে হবে, হঠাৎ যেন কোনো এক পাথুরে দুর্গের মধ্যে প্রবেশ করলেন। এবার শুধু বাকরুদ্ধ হয়ে অবাক মুগ্ধ চোখে দেখার পালা। আর সেই সাথে অনুভব হবে দুপাশের আকাশ ছোঁয়া পাথরের পাহাড় যেন গাম্ভী্রয্য নিয়ে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছে সবুজ অরণ্যে। অরণ্য রাজ্যে আপনাকে আলিঙ্গন করছে আর সবুজ টলটলে জলপথ যেন আপনাকে উষ্ণ সংবর্ধনা জানাচ্ছে। সাতভাইখুম এর রূপ-সৌন্দর্যের বিবরণ দিতে সকল উপমা ব্যবহার করলেও হয়তো এর সৌন্দর্য বর্ণনায় কার্পণ্য করা হবে। সাতভাইখুমের সবুজ অরণ্য, জলপথের গিরিপথ আর পাথুরে পাহাড়ী রাজ্য থেকে ফেরার পথে আপনার সঙ্গী হবে দুরন্ত, দুর্গম আর ভয়ানক রোমাঞ্চকর ভ্রমণের দারুণ এক অনুভুতি।

 যেভাবে যাবেন: 

ঢাকা থেকে বান্দরবানের যে কোনো বাসে প্রথমে বান্দরবান।ঢাকা থেকে রাতের বাসে রওনা দিলে সকালে বান্দরবান শহরে গিয়ে পৌঁছে যাবেন। তারপর বান্দরবান শহর থেকে চান্দের গাড়ি কিংবা বাসে থানচি। এখানে আপনার দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগবে। থানচি থেকে বোটে চড়ে রেমাক্রি। রেমাক্রি পৌঁছাতেও দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগবে। রেমাক্রি থেকে নাফাকুম হয়ে, নাইক্ষ্যং ঝিরি ধরে জিনা পাড়া পৌঁছাবেন। এখানে আপনার সময় ব্যয় হবে প্রায় চার ঘণ্টায়। এতেই প্রথম দিন রাত হয়ে যাবে। সেই রাত জিনাপাড়ায় আপনাকে অবস্থান করতে হবে। জিনাপাড়া থেকে পরের দিন হেঁটে দেবতা পাহাড় দিয়ে আমিয়াখুম পৌঁছে যাবেন। সময় লাগবে মাত্র দুই ঘণ্টা। সেখান থেকে ভেলায় চড়ে সাতভাইখুম।

 খরচাপাতি 

বান্দরবান থেকে থানচি যেতে চান্দের গাড়ির ভাড়া পড়বে জন প্রতি তিনশত টাকা। আর চার হাজার টাকায় আপনি গাড়ি রিজার্ভ নিতে পারেন। একটি চান্দের গাড়িতে ১৪ থেকে ১৫ জন যাতায়াত করতে পারবেন। গাড়ির ড্রাইভাররা একটু বেশি ভাড়া চাইবে। আপনাকে একটু দামাদামি করে নিতে হবে।

থানচি থেকে রেমাক্রি পর্যন্ত আপ ডাউন বোট ভাড়া ৪৫০০টাকা। সাথে দুইজন মাঝির খাওয়ার খরচ। এটা সেনাবাহিনীর দ্বারা নির্ধারিত ভাড়া। রাস্তা দুর্গম হওয়ার কারণে এখানে আপনাকে গাইডের সাহায্য নিতে হবে। শুধু নাফাকুম পর্যন্ত গাইড ভাড়া দুই হাজার টাকা। তবে গাইডের মানভেদে টাকার পরিমান কম বেশি হতে পারে। এখানে আপনি রেজিস্টার্ড এবং লোকাল গাইড পাবেন। এখানেও দামা দামি করে নিবেন। আমিয়াখুম পর্যন্ত গেলে ৫০০০টাকা প্লাস নিবে। রেজিস্টার্ড গাইডগুলো হয়ত অনুমুতি না থাকায় আমিয়াখুম যেতে চাইবে না। তবে কিছু আনরেজিস্টার্ড লোকাল গাইড পাওয়া যেতে পারে যারা আপনাকে গাইড প্রদান করবে।

জিনাপাড়ায় থাকার জন্য জনপ্রতি একশত টাকা গুনতে হবে। থাকার জন্য খুব ভালো ব্যবস্থা না থাকলেও নিরাপত্তা ভালো। খাওয়ার জন্য নিজের থেকে আগে ব্যবস্থা রাখলে ভালো। খাওয়া দাওয়ার জন্য চাল-ডালসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য শহর থেকে কিনে নিয়ে গেলে খুবেই ভালো হবে। যেখানে থাকবেন সেখানেই রান্না করার জন্য হাড়ি-পাতিলের ব্যবস্থা আছে। তবে জিনাপাড়া ছাড়া রাত্রি যাপনের জন্য আরও জায়গা আছে। জিনাপাড়ার পাশেই আছে থুইসাপাড়া। তবে থুইসাপাড়ার মানুষজন খুবই বাণিজ্যিক। রান্নার জন্য আপনাকে হাড়ি-পাতিল দিলেও তাও খেকে ভাড়া নিবে। এই পাড়া দিয়ে যেতে চাইলেই ওদের লোককে গাইড হিসেবে নিতে হবে। সাতভাইখুমে পরিত্যাক্ত ভেলায় চড়লে সেই ভেলার ভাড়ার টাকাও এরা চাইবে। তাই এই থুইসাপাড়া এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।

ঘুরতে গিয়ে আমরা যেন পরিবেশকে নোংরা না করি।