সিলেট ট্যুরের ফিরিস্তি

সিলেট ট্যুরের ফিরিস্তি

জাফলং,রাতারগুল ও বিছনাকান্দি।সাথে বোনাস হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়,শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,শাহজালালের মাজার,পাঠানটুলী চা বাগান।
যাত্রা শুরুঃ
আমরা ছিলাম চারজন। ৩০ আগস্ট সকাল দশটায়,শেরপুর থেকে ময়মনসিংহ রওনা হই। বিকেল থেকে সন্ধা পর্যন্ত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরে,রাত সাড়ে আটটায় বাসে করে সিলেট রওনা হই।টিকিট আগেই কাটা ছিল,জনপ্রতি ৪৫০/- টাকা ভাড়া।
রাত তিনটা-সাড়ে তিনটার দিকে সিলেট,কদমতলি স্টেশনে পৌঁছাই।
কিছুক্ষণ বাস কাউন্টারে অপেক্ষা করে ভোর পাঁচটার দিকে হেঁটে হেঁটে কদমতলি থেকে সিলেটের প্রবেশ মুখ কীন-ব্রিজ পাড় হই।শরীর যথেষ্ট চাঙ্গা ছিল বিধায়, ব্রিজের ওপার(বন্দর) গিয়ে আবারো হাঁটা ধরি।মিনিট দশেক হেঁটে হোটেল পানসিতে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করি।
খাওয়া শেষে সিএনজি করে মদিনা মার্কেট চলে যাই,বন্ধুর মেসে।সে ঈদের ছুটি শেষে আমাদের সাথেই তার ক্যাম্পাসে( SUST) ফিরছিল এবং সিলেট ঘুরে দেখাবে করে আমাদের নিয়ে যাচ্ছিলো।

১ম দিনঃ
কদমতলি বাস স্টেশন থেকে কিছুক্ষণ পরপর বাস ছেড়ে যায় জাফলং এর উদ্দেশ্যে। অনেকেই এটা জানেন না।যারা খরচ কমাইতে চান,তারা বাসে করে জাফলং যেতে পারেন।ভাড়া জনপ্রতি ৬৫ টাকা করে।আমরা বাসে গিয়েছিলাম।
ঘণ্টা দুই জাফলং লাফালাফি-ঝাপাঝাপি করে,১০ টাকা নৌকা ভাড়া দিয়ে চলে গেলাম সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্না।
সন্ধা সাতটায় জাফলং থেকে আবারো ৬৫ টাকা ভাড়া দিয়ে,বাসে করে সিলেট শহরে আসি।

২য় দিনঃ
সকাল নয়টার দিকে ১৩০০ টাকায় সিএনজি রিজার্ভ করলাম,রাতারগুল ও বিছনাকান্দি কাভার করার জন্য।
প্রথমেই গেলাম রাতারগুল।নৌকা ঘাট থেকে ৭৫০ টাকায় নৌকা ভাড়া করে,দুই ঘণ্টার মত অবস্থান করলাম রাতারগুলে।
রাতারগুল থেকে সিএনজি করে চলে গেলাম বিছনাকান্দি নৌকা ঘাটে।মানুষের ব্যাপক সমাগম দেখে,নৌকা ভাড়া ৩০০০ করে নিচ্ছিল সেদিন।নরমালি নৌকা ভাড়া ১২০০ টাকার মত।আমরা চারজন ছিলাম বলে,অন্য একটা গ্রুপের সাথে এড হয়ে নৌকায় উঠি।চারজনের ১০০০ টাকা লেগেছে।
পাঁচটার দিকে বিছনাকান্দি থেকে ব্যাক করে,সন্ধায় শহরের ভেতরেই শাহজালালের মাজারে গেলাম।কিছুক্ষণ মাজারে ঘুরে রাত নয়টার দিকে গেলাম,শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।

৩য় দিনঃ
সারাদিন প্রায় শুয়ে বসে কাটিয়ে দিলাম শেষ দিনটা।দুপুরে বন্ধুর মেসে নিজেরাই রান্না-বান্না করলাম।খাওযার পর একটা ঘুম দিয়ে বিকেলে গেলাম পাঠানটুলী চা বাগানে।রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজের পেছনেই বাগনাটা,বেশ বড়সড়ই।
রাত আটটার দিকে চলে গেলাম কদমতলি স্টেশনে।উদ্দেশ্য,ট্রেনে করে ঢাকায় ফিরবো।ট্রেনের টিকিট না পেয়ে অগত্যা সিলেট থেকে ঢাকার মেইল ট্রেন “সুরমা মেইল”এ উঠে পড়লাম ১২০ টাকা জনপ্রতি টিকিট কেটে।

খরচঃ
ময়মনসিংহ–সিলেট কদমতলি বাস স্টেশনঃ ৪৫০/- জনপ্রতি।
কদমতলি বাস স্টেশন–জাফলংঃ ৬৫/- জনপ্রতি।
পরদিন সিএনজি ভাড়া,সারাদিনের জন্যঃ ১৩০০/- সম্মিলিত।
রাতারগুল নৌকা ভাড়াঃ ৭৫০/- সম্মিলিত।
বিছনাকান্দি নৌকা ভাড়াঃ ৩০০০/- সম্মিলত, আমাদের চারজনের জন্যঃ ১০০০/- লেগেছে।
শেষদিন,কদমতলি–ঢাকাঃ ১২০/- জনপ্রতি(সুরমা মেইল)।
.
থাকা ও খাওয়া খরচ নিজেদের মত পড়বে।যেমন চাইবেন তেমনই পাইবেন।খাবারের দাম খুব বেশি না সিলেটে।তবে জাফলং মামার বাজারে খাবারের দাম একটু বেশি।

সবমিলিয়ে সেই ৩০ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, আমাদের জনপ্রতি খরচ পড়েছে ১৯৬০/- টাকা করে।থাকার খরচটা আমাদের পুরোপুরি বেঁচে গেছে,বন্ধুর মেসে ছিলাম বলে।

ঢাকা‌‌<–>সিলেট, ট্রেনের শিডিউল দেওয়া হলোঃ
পারাবত এক্সপ্রেসঃ
ঢাকা থেকে সকাল ৬.৩৫,সিলেট থেকে বিকেল ৩.০০ টা।
জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসঃ
ঢাকা থেকে দুপুর ১২.০০ টা,সিলেট থেকে সকাল ৮.৪০।
কালনি এক্সপ্রেসঃ
ঢাকা থেকে বিকেল ৪.০০ টা,সিলেট থেকে সকাল ৭.০০ টা।
উপবন এক্সপ্রেসঃ
ঢাকা থেকে রাত ৯.৫০,সিলেট থেকে রাত ১১.০০ টা।

এটা ট্রেন ছাড়ার সময়।”সোভন চেয়ারের” ভাড়া(এডাল্ট) ৩৪০/- করে।সাথে বাচ্চা থাকলে চাইল্ড টিকিট কেটে নিতে পারবেন।

সতর্কতাঃ
যখন নৌকা করে বিছনাকান্দি মেইন পয়েন্ট থেকে ঘাটে ফিরছিলাম, অনেককেই দেখলাম নৌকাতে বসে প্যাকেটে করে খাবার খাচ্ছে আর প্যাকেটটা নদীতেই ফেলছে।কলার ছাল,বিস্কিটের প্যাকেট, পানির বোতল, যত্রতত্র ফেলবেন না।আমাদের দেশ,আমাদের মাটি,আমাদেরই পরিবেশ,রক্ষনাবেক্ষনের দায়ীত্বও আমাদের।