শুভলং

ভূস্বর্গ শুভলং

শুভলং কে বাংলার ভিয়েতনাম বললে মোটেই ভুল হবে না।
কেনো? তার প্রমাণ নিচের ছবিগুলো।

এখন আসি বিস্তারিত ভ্রমন নিয়ে। রাঙামাটি শহরে থেকে যদিও শুভলং ১ ঘন্টার দূরত্ব তবুও বেশিরভাগ মানুষই জায়গাটি সম্পর্কে খুব বেশি পরিচিত নয়।
বেশির ভাগ ভ্রমনার্থীরাই রাঙামাটি শহরের কাছাকাছি যেমন : কাপ্তাই লেক, ঝুলন্ত ব্রিজ ইত্যাদি স্পটগুলো ঘুরে এসে পড়েন এতে তারা এই নৈসর্গিক দৃশ্যগুলো থেকে বঞ্চিত হয়।
আবার অনেকে অসময়ে( যেমন: বর্ষাকালে) যান এতে পানির আসল নীল রং টা তারা পান না।
.
যাতায়াত ব্যবস্থা :
সব জেলার সাথে যেহেতু রাঙামাটির সরাসরি বাস যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই তাই চট্টগ্রাম থেকে যাতায়াত এর পদ্ধতি এখানে বলা হলো।
দেশের যেকোন জেলা থেকে চট্টগ্রাম বাস যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। প্রথমে বাসে করে চট্টগ্রাম চলে আসবেন। এছাড়া ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, চাঁদপুর হতে চট্টগ্রাম পর্যন্ত আন্তঃনগর ট্রেনেও আসতে পারবেন। যেভাবেই আসেন চট্টগ্রাম নেমে লোকাল বাস অথবা সিএনজি করে সরাসরি অক্সিজেন চলে যাবেন (২০ মিনিটের মত লাগবে)। এখান থেকে রাঙামাটির বাস ছেড়ে যায়।
.
সকাল, দুপুর, রাত সব সময়ই রাঙামাটির বাস পাবেন।
চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটি যাওয়ার জন্য পাহাড়ীকা বাস সিলেক্ট করবেন এতে দ্রুত যেতে পারবেন। অন্যান্য বাসও পাবেন তবে ওগুলো লোকাল।
চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটি প্রায় ২ ঘন্টার পথ। যাওয়ার পথে পাহাড়ী খাঁড়া, আকাঁবাকা রাস্তা দেখতে চাইলে একটু দিন থাকতে রওনা দিবেন।
.
রাঙামাটি পৌঁছে নিজের পছন্দমত হোটেল নিয়ে নেয়।
নিম্ন থেকে উচ্চ সব মানের হোটেলই পাবেন এখানে।
দুপুর বা বিকাল যখনই আপনি রাঙামাটি পৌঁছান না কেনো ঐদিন আশেপাশে ঘুরে পরদিন সম্পূর্ণ দিন রাখেন শুভলং এর জন্য কারণ শুভলং এর সৌন্দর্য ঠিকমতো অবলোকন করতে চাইলে একদিন সম্পূর্ণ আপনাকে ব্যয় করতেই হবে।
শহরে যেখানেই থাকেন পরদিন সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ুন।
পানি + হালকা নাস্তা চাইলে সাথে নিতে পারেন, পাহাড়ে উঠার সময় কাজে দিবে।
সকাল ৭:৩০, ৮:৩০, ৯ টায় শহরের রিজার্ভ বাজার ঘাট থেকে লংগদু, কাট্টলী, মাইনী এর লঞ্চ ছাড়ে যেকোন একটাতে উঠে পড়বেন প্রায় সবগুলো লঞ্চই শুভলং থামবে সেখানে নেমে পড়বেন।
আর প্রায় সবগুলো লঞ্চেই ছাদে উঠার ব্যবস্থা রয়েছে আসল মজা উপভোগ করতে আপনাকে অবশ্যই ছাদে জার্নি করতে হবে।
অগ্রিম টিকেট কাটার কোন জামেলা নেই ভিতরে টিকেট কাটার ব্যবস্থা রয়েছে।
লঞ্চ ছাড়ার ১৫/২০ মিনিট পর থেকে আস্তে আস্তে খাঁড়া পাহাড়গুলো কাছে আসতে থাকবে আর নীল পানির উপর সূর্য্যের আলো তৈরি করবে চোখ ধাঁধানো দৃশ্যের। মাঝে মাঝে পানকৌড়ির ঝাঁক পানির ভিতর থেকে উঠে আসতে দেখা যায়। পাশাপাশি চোখে পড়বে ডিঙি নৌকায় জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য।
.
আরো ২০/২৫ মিনিট গেলে আস্তে আস্তে আরো খাঁড়া কালো পাথরের পাহাড়গুলো যখন বের হবে তখন মনে হবে সত্যিই আপনি ভিয়েতনামের সমুদ্র তীরবর্তী খাঁড়া পাহাড়গুলোর মাঝখান দিয়ে যাচ্ছেন।
প্রায় ১ ঘন্টা পর শুভলং ঘাটে যখন লঞ্চ দাড়াবে তখন নেমে যাবেন। ওখানে পাশেই রয়েছে শুভলং বাজার, সেখানে পর্যাপ্ত পরিমান খাবার হোটেল রয়েছে। হালকা নাস্তা থেকে শুরু করে দুপুরের লাঞ্চও ইচ্ছা করলে এখানে সারতে পারবেন খরচ খুব একটা বেশি পড়বে না।
.
হালকা নাস্তা করে উঠা শুরু করুন মেইন আকর্ষণ শুভলং পাহাড়ে। প্রথমে কিছুদূর সিঁড়ি থাকলেও পরে আপনাকে সিঁড়ি ছাড়া মাটির খাড়াই পারি দিতে হবে তাই ভাল গ্রিপ পাওয়ার জন্য ট্র্যাভেল সু অথবা কেডস পরে যাবেন।
যতই উপরে উঠতে থাকবেন দূরের পাহাড়, শুভলং বাজার, কাপ্তাই লেকের দৃশ্য ততই প্রশস্ত হতে থাকবে।
৪০-৪৫ মিনিটের মধ্যেই আপনি চূড়ায় পৌঁছে যাবেন।
প্রকৃত দৃশ্য আপনি এখান থেকেই পাবেন।
দূরের পাহাড়, পাহাড়ের ভিতরে দিয়ে আঁকাবাঁকা লেক, লেকের মধ্য দিয়ে লঞ্চের চলাচল, মাঝে মাঝে আবার পানি দু’ভাগ করে স্পিডবোর্ডের ছুটাছুটি, চূড়া থেকে শুভলং বাজারের দৃশ্য দেখে মনে হবে আসলেই এটা দেশের বাইরের কোন জায়গা।
.
পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে পুলিশ ক্যাম্প এবং বসার জায়গা। এখানে চাইলে আপনি ঘন্টা খানেক বসে প্রতৃতিকে মন ভরে উপভোগ করতে পারবেন।
.
এবার ফেরার পালা। সাধারণত ২ টার পর থেকে ফেরার লঞ্চ পাওয়া যায়। লংগদু, মাইনী, কাট্টলী থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চগুলো ২ টার পর শুভলং ঘাটে পৌঁছে যেকোন একটায় উঠে পড়ুন পূর্বের মত দৃশ্য অবলোকন করতে করতে ঘন্টা খানেক পর রাঙামাটি পৌঁছে যাবেন।
.
যাতায়াত খরচ চট্টগ্রাম হইতে:
★রেলস্টেশন /কদমতলী বাসস্ট্যান্ড টু অক্সিজেন – লোকাল বাস- ১০/- জন প্রতি।
আর সিএনজি রিজার্ভ – ৮০-১০০/-।
★অক্সিজেন টু রাঙামাটি – ১২০/- জন প্রতি(পাহাড়ীকা)
★ রাঙামাটি টু শুভলং(লঞ্চ) – ৪০/- জনপ্রতি।
.
সতর্কতা :
পাহাড়ে উঠার সময় যথেষ্ঠ সতর্কতা অবলম্বন করুন। তাড়াহুড়ো করবেন না কারণ এখন শুকনো মৌসুম ছোট ছোট আলগা পাথর ও ধুলোর মধ্যে পা পিছলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আর লেকের পানিতে বোতল/কাগজ ফেলে লেকের পরিবেশ নষ্ট করবেন না।