নরসিংদীতে একদিন

নরসিংদীতে একদিন।

লিখেছেন  : প্রজ্ঞাশ্রী দে

ঢাকা থেকে নরসিংদী ট্রেনে করে এক ঘন্টার দূরত্ব শুনে,তিন বান্ধবীর ঘোরার প্ল্যান শুরু করলাম।যেহেতু শীতের সকাল,বরাবরের মতো উঠতে দেরী করলাম সাথে ট্রেনও মিস।তারপর এয়ারপোর্ট থেকে বাসে আমাদের যাত্রা শুরু।

সকাল আটটায়,পি.পি.এল সুপার গাড়িতে করে নরসিংদীর পাঁচদোনা মোড়ে নামলাম দুই ঘন্টায়।বাজারে নাস্তা সেড়ে, প্রথমে গেলাম বাজার থেকে সামনেই অবস্থিত পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআনের প্রথম বাংলা অনুবাদক ভাই গিরিশচন্দ্র সেনের বাড়িতে।বাড়ির ভেতরে একটি জাদুঘর আছে। জাদুঘরটি বেলা এগারোটায় খুলে।তারপর পাঁচদোনা মোড়ে এসে অটোতে করে ঘোড়াশালের পলাশে মনুমিয়া জমিদার বাড়িতে।আসল নাম ঘোড়াশাল জমিদার বাড়ি হলেও এটি মনুমিয়ার বাড়ি নামে অধিক পরিচিত।বাড়িটির প্রধাণ বৈশিষ্ট্য পুরো বাড়িটি সাদা রংয়ের ,পরিচ্ছন্ন এবং খোলা-মেলা। বাড়িতে ঢুকলেই পাশে রয়েছে মসজিদ,সামনে মাঠ পেরিয়ে পুকুর আর প্রাচীন গাছের সারি।ঐখান থেকে বাজারে এসে আবার অটোতে করে চললুম ডাঙা বাজারে,গন্তব্য লক্ষণ সাহার জমিদার বাড়ি।আইনজীবি আহম্মদ আলী বাড়ির একটি অংশ জমিদার বংশের উত্তরাধীকার নারায়ন সাহার কাছ থেকে ক্রয় করেন।তিনি স্ত্রীর নাম অনুসারে বাড়িটির নামকরণ করেন জামিনা মহল।পেশায় উকিল থাকায় বাড়িটি স্থানীয়ভাবে উকিল বাড়ি নামে পরিচিত।এর পাশেই ছোট্ট আরেকটি অর্ধনির্মিত প্রাচীন বাড়ি।জমিদার বাড়ির পেছনে রয়েছে বাগান ও সান বাধানো পুকুর ঘাট ও একটি মঠ।জমিদার বাড়িটিতে নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতার ব্যবাস্থা করলে এটি একটি ভালো পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হতে পারতো।জমিদার লক্ষ্মণ সাহার বাড়ি থেকে হাতের বামে অল্প দূরে রয়েছে আরেকটি অপরিত্যক্ত পুরোনো বাড়ি।বাড়িটিকে গুগল পর্যটন তথ্য হিসেবে কুণ্ডু সাহার বাড়ি বলা হচ্ছে কিন্তু স্থানীয়দের থেকে এরকম কোনো তথ্য পাইনি।জমিদার বাড়ি থেকে অটোতে করে ফেরত আসলাম পাঁচদোনা মোড়ে।দুপুরে ক্ষুধা নিবারণ করলাম হোটেলে নিম্ন মানের খাবার দিয়ে।এরপরের নতুন গন্তব্য উয়ারি বটেশ্বর।২০০০ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় শিল্পকলা চর্চার আন্তর্জাতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে উয়ারীতে উৎখননে প্রাপ্ত মসৃণ মৃৎপাত্র, রোলেটেড মৃৎপাত্র, নব্ড মৃৎপাত্র প্রভৃতির দুটি কার্বন-১৪ পরীক্ষা করে উয়ারীর বসতিকে খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০ অব্দের বলে নিশ্চিত করা হয়।পঁয়তাল্লিশ মিনিট বাস যাত্রা শেষ করে নামলাম মরজালে।মরজাল থেকে বিশ মিনিট অটোতে করে বটেশ্বর প্রত্নতত্ত সংগ্রহশালাতাতে নামলাম।কিন্তু কপাল মন্দ, সেটি বেলা তিনটাতেই বন্ধ হয়ে যায়।কি আর করা,আবার মরজাল এসে নরসিংদীর মিষ্টি খেয়ে গাড়িতে সাড়ে তিনঘন্টার যাত্রা শেষে বাড়ি ফিরলাম।

যাতায়াত- আমার মনে হয়, গুগল এবং স্থানীয়দের থেকে ভালো তথ্য না পাওয়ায়, আমাদের প্ল্যানে সমস্যা ছিলো, এজন্য আমাদের সময় বেশি লেগে গেছে। কিন্তু আরো সহজে সময় বাঁচিয়ে ঘোরা সম্ভব।প্ল্যান হওয়া উচিত ছিলো,জমিদার বাড়ি- গিরিশচন্দ্র সেনের বাড়ি-উয়ারি বটেশ্বর। মহাখালি থেকে ঘোড়াশালে বাসে যাওয়ার জন্য পি.পি.এল সুপার,উত্তরা,বাদশাহ রয়েছে।ভাড়া প্রতি ৮০ টাকা।কেউ চাইলে সরাসরি পাঁচদোনা নেমে পছন্দ অনুযায়ী গন্তব্য ঠিক করতে পারেন।ঘোড়াশাল বা পাঁচদোনা থেকে অটোতে করে পলাশ,মনুমিয়া জমিদার বাড়ি।অটোতে পলাশ থেকে ডাঙা, লক্ষণ সাহার জমিদার বাড়ি।ভাড়া রিজার্ভ ১৫০ টাকা।ডাঙা থেকে পাঁচদোনা।পাঁচদোনা থেকে হাঁটা পথেই গিরিশচন্দ্র সেনের বাড়ি।পাঁচদোনা থেকে মরজালের বাস ভাড়া প্রতি ১৫ টাকা। মরজাল থেকে বটেশ্বরের অটো ভাড়া প্রতি ৩০ টাকা।মরজাল থেকে ঢাকার বাস তিতাস বা উত্তরার ভাড়া প্রতি ১২০ টাকা।

আমার মতে,জায়গাগুলো একটা আরেকটার থেকে দূর হওয়ায় কয়েকজন একসাথে ঘোরা নিরাপদ ও সাশ্রয়ী।এই এলাকায় যা আছে সব লোকাল বাস, অটোর রাস্তা খুব একটা ভালো না তাই যাতায়াতে কষ্ট হওয়া স্বাভাবিক।

ঘোরার সময় নিজ কতৃক পর্যটন স্থান যাতে নষ্ট না হয়,সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।