ব্যাকপ্যাকিং ইউরোপ পর্ব : বার্সেলোনা, স্পেন।

এক আনন্দ নগরের গল্প

আজকে আমি এক আনন্দ নগরের গল্প বলবো। এই শহরের নাম দিয়েছি আনন্দ নগরী। ধরেই নিয়েছি শহরের মানুষগুলোর মনে কোন দুঃখ নেই, হতাশা নেই, নেই অপ্রাপ্তির আক্ষেপ। স্প্যানিশ মিউজিকের তাল শুনে ঘুমিয়ে পড়া মদ্যপ সকাল এখানে ঝিমুনি নিয়ে আসে। শুরু হয় শান্ত চুপচাপ একটি দিনের যেখান থেকে শুরু হয় আনন্দময় রাতের প্রস্তুতি।

এই আনন্দ নগর সামন্ত বনিকদের ইচ্ছা অনিচ্ছার জলসাঘর না, এই আনন্দ নগর প্রানের উচ্ছল্লে উদ্দাম। বিকাল হতেই যেন এই নগরের মানুষদের আলস্য পেয়ে বসে। দাওয়ায় বসে পানিয় আর খাওয়া দাওয়ার আয়োজন, সাথে উপরি পাওনা হলো স্প্যানিশ গান বাজনা। এক শব্দ স্প্যানিশ না বুঝলেও ক্ষতি নেই, গান বাজনা শুনে আপনি অবশ্যই তালে তালে হাত পা মাথা দুলাবেন, এমনই সম্মোহনী শক্তি স্প্যানিশ মিউজিক এর।

আমি বার্সেলোনা’র কথা বলছি। ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তি স্পেনের ক্যাটালুনিয়া অঞ্চলের এই শহর মানেই ফুটবল , মেসি, নেইমার, ক্যাম্প নু নয়। ফুটবল ছাড়াও আর্ট কালচারের আরো কিছু বিষয় আছে, এইশহরে জন্মেছেন এন্টোনি গউডি, হুয়ান মিরো’র মতো বিখ্যাতআর্কিটেক্ট। মধ্যযুগে একটা রোমান শহর হিসেবে যার গোড়াপত্তন সেইশহরতো আর্ট আর আর্কিটেকচার এর তীর্থস্থান হবেই।

আমার চার দিনের বার্সেলোনা ভ্রমনের অনেকটা সময় কেটেছে শহরের বিল্ডিং ঘর বাড়ি দেখে। পুরোটা শহর জুড়ে আছে গউডি’র ডিজাইন করা অনেক বিল্ডিং যেগুলো ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করেছে। গোথিক স্টাইলের স্থাপত্য নকশার এই বিল্ডিংগুলো দেখলে অবাক হতে হয় অনেক। আমার মতো ভেতো বাঙালির দুই চোখ প্রচণ্ডবিস্ময় নিয়ে স্থাপত্যকলার কিছু বুঝে না বুঝে অদ্ভুত নকশার বিল্ডিঙগুলো ঘুরে দেখেছে সারাটা সময়। এর মধ্যে ‘লা সাগ্রাদা ফামিলিয়া’ চার্চটি গউডি’র এক অনবদ্য মাস্টারপিস। দেখলে মনে হয় কোন এক চিত্র শিল্পি আর ভাস্কর মিলে বানিয়েছে এই বিশাল স্থাপনা। নকশা বিহীন এক ইঞ্চি যায়গা খালি নাই পুরো স্থাপনার। এরকম আরো কিছু স্থাপনা হলো কাসা বাল্টো, কাসা মিয়া, গোথিক কোয়ার্টার, বেসিলিকা অফ সান্তা মারিয়া দেল মার, লা পেড্রেরা, পার্ক গুয়েল। সবগুলির অবস্থান মোটামুটি কাছাকাছি। শুধু কেম্প নূ শহর থেকে একটু দূরে, কিন্তু খূব সহজেই মেট্রো দিয়ে যাওয়া যায়।

আমি ছিলাম লা রাম্বালা স্ট্রীট এর প্লাসা রিয়েল এর কাবুল হোস্টেল এ। লা রাম্বালা স্ট্রিট এ কখনও রাত হয়না, টুরিস্টিক প্লেস হিসেবে যেকোনো সময় এই জায়গাটি জমজমাট। সারাটা সময় টুরিস্ট, ব্যাকপ্যাকার, হকার, স্ট্রিট ভেন্ডরদের হইচই যেন থামেইনা।

বীচ লাভারদের জন্য আছে এই শহরে আছে বিখ্যাত বারসেলোনেটা বীচ। সাদা বালুর মেডিটেরিয়ান বীচ। বেপারটাই অন্যরকম। আমাদের বীচগুলোর মতো অপরিকল্পিত না। ছোট বিচটিকে সাজিয়ে রেখেছে ছবির মতো সাথে আছে সকল আধুনিক সুযোগ সুবিধা। বীচের এক পাশে আছে ক্যাবল কার যা আপনাকে নিয়ে যাবে বীচ থেকে একটু দুরের পাহাড়ের চুড়ায়। এই যায়গা থেকে পুরো শহরটির একটি সুন্দর ভিউ পাওয়া যায়। এই ভিউ পয়েন্ট থেকে দেখলে বুঝা যায় শহরটি কত ছিমছাম সাজানো গুছানো।

বার্সেলোনা গিয়ে অবশ্যই মেডিটেরিয়ান খাবারের চেখে দেখবেন। সী ফুড খুব বিক্ষাত এই শহরে। খেতে পারেন পায়েলা, টরটিলা, পিস্টো আর বিন স্টু। প্রায় সব খাবার দোকানেই পাওয়া যায় এই খাবারগুলো। তবে ট্র্যাডিশনাল পায়েলা খেতে চাইলে একটু কষ্ট করে নামকরা রেস্টুরেন্ট খুজে বের করতে হবে যারা পায়েলা রান্নার বেপারে ওস্তাদ। রাস্তায় প্রচুর স্ট্রিট ফুড, ফ্রেশ ফ্রুট, জুস এসব পাওয়া যায় অবশ্যই চেখে দেখতে পারেন।

কিভাবে যাবেনঃ ঢাকা থেকে বার্সেলোনা ফ্লাইট আছে। অথবা খরছ একটু কমাতে চাইলে ঢাকা থেকে ইতালীর রোম (ঢাকা-রোম ভাড়া তুলনামুলক কম থাকে সবসময়), তারপর বাস ধরে আবার বার্সেলোনা।

থাকা-খাওয়াঃ ১০-১৫ ইউরোতে হোস্টেল পাবেন লা রাম্বালা স্ট্রিট এ। একটু দূরে থাকলে ভাড়া আরো কম পড়বে। ৫-৮ ইউরোতে খাওয়া। তবে একটু ট্র্যাডিশনাল খাওয়া খেতে হলে যেকোনো মোটামুটি মানের রেস্টুরেন্টে খরচ পড়বে ২০ ইউরোর কাছাকাছি।

হ্যাপি ট্রাভেলিং 🙂

লিখেছেন: আব্দুল্লাহ আল মামুন