ব্যাকপ্যাকিং ইউরোপ পর্ব : রোম, ইতালী।

ইতালি এমন একটি দেশ যা পুরোটা ঘুরে দেখতে মিনিমাম এক মাস সময় লাগবে। আমার যাত্রা শুরু হয়েছিলো রোম দিয়ে। প্রায় আড়াইহাজার বছরের পুরনো ইতিহাস কে বুকে আঁকড়ে ধরে আছে এই শহর।

যেকোনো পুরনো শহরকে খুব কাছ থেকে দেখার ভালো উপায় হলো সেই শহরের রাস্তায় হাঁটা। শহরের প্রতিটি রাস্তা, ইট, কাঠ, পাথর, ধুলিকনা সব ই যেন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে গল্প বলছে যেগুলো আমরা ছোট বেলায় ইতিহাসের বইতে পড়েছিলাম। সেই সব প্রেম, অপ্রেম, বীরত্ব কিংবা সাহসিকতার সব গল্প এই একটি শহরেই।
একবার ভেবে দেখুন এইযে রাস্তাটিতে যেখানে আপনি হাঁটছেন সেখানে কোন একসময় হেঁটেছিল রাফায়েল, সান্দ্রো বাতিচেল্লি, মাইকেল এঞ্জেলো, ব্রুমান্তের মতো মহান শিল্পীরা। রাস্তার পাশের কফি শপে যেখানে বসে দুদণ্ড জিরিয়ে নিচ্ছেন সেখানে কোন এক সময় আপনার মতই হয়তো একটু বসেছিলো ইতিহাসের সেই সব মহান শিল্পীরা। অথবা কলসিয়ামের পাশে গিয়ে একবার ভাবুন এই সেই আম্ফিথিয়েটার যেখানে দুঃসাহসী গ্ল্যাডিয়েটর রা লিপ্ত হতো সাহসের অগ্নি পরিক্ষায়। সেই এক অদ্ভুত শিহরন। আমি মন্ত্র মুগ্ধের মতো হয়ে যেতাম।

আর মাইকেল এঞ্জেলোর পিয়েতা কিংবা সিস্টাইন চ্যাপেলের লাস্ট জাজমেন্টের মতো মহান সৃষ্টির সামনে গিয়ে নিজেকে এক অদ্ভুত মায়াজালে হারিয়ে ফেলতে আপানি বাধ্য । এ এক সম্মোহনী মন্ত্রজাল, এর মায়া কাটানো মানুষের পক্ষে সম্ভব না।
এছাড়াও রোমে আছে পেন্থিওন, সেন্ট পিটারস বেসিলিকা, ট্রেভি ফাউন্টেইন, পিয়াজ্জা নাভোনা সহ আরও অনেক ঐতিহাসিক যায়গা যেখানে গিয়ে সহজেই নিজেকে নিজের মধ্যে হারিয়ে ফেলতে পারবেন, নিশ্চয়তা দিলাম।

যাওয়ার সময়ঃ

ইউরোপের জন্য সামার হল সবচেয়ে ভালো সময় যাওয়ার জন্য। সেই হিসেবে জুন থেকে সেপ্টেম্বর এর মধ্যে যেকোনো মাসে যেতে পারেন।

টাকা পয়সার হিসাবঃ আমার মতে ঘুরতে যাওয়ার জন্য টাকা খুব একটা বড় বাধা হয়না কখনো, ইচ্ছা আর সাহসটাই আসল। ঢাকা থেকে রোমের বিমান ভাড়ায় সবসময় কোন না কোন এয়ারলাইন্স ডিস্কাউন্ট দেয়। ভাড়া ৪০-৫০ হাজারের মধ্যে হবে রিটার্ন সহ। আর থাকা খাওয়ার জন্য হোস্টেল পাবেন ৮-১০ ইউরোতে। খাবেন ইতালিয়ান বিখ্যাত পিজ্জা আর রিসোটো। প্রতি বেলায় ৩-৪ ইউরোতে হয়ে জায়। আর যদি হাতে থাকে অফুরন্ত সময় তাহলে খালি শহরের রাস্তায় হাঁটবেন। আমি নিশ্চিত এই শহরের প্রেমে পড়বেনই।

ভিসাঃ

এই একটা ব্যাপার নিয়ে আলাদা একটা লিখা লিখবো ভাবছি। তবে ভিসার বেপারে যে ব্যাংক এ অনেক অনেক টাকা থাকতে হয় তা কিন্তু না। আমার আভিজ্ঞতায় বলে এমবাসি সবসময় ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করে যে আপনি গিয়ে আবার নিজ দেশে ফিরে আসবেন তো। এই একটা ব্যাপার নিশ্চিত হলে পৃথিবীর কোন দেশেই ভিসা অসম্ভব না। ইতালির জন্য VFS অথরাইজড এজেন্ট। অফিস গুলশানে। তাদের চেকলিস্ট অনুযায়ী কাগজপত্র জমা দিলে ভিসা না দেওয়ার কথা না।

হ্যাপি ট্রাভেলিং।

লিখেছেন: আব্দুল্লাহ আল মামুন