Hallstatt – এ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট

Hallstatt – এ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট (লেখকঃ Rafat Limon )

Hallstatt এর সাথে আমার প্রথম পরিচয় কোন এক টেলিভিশনের দোকানে।।। দোকানের ডিসপ্লেতে রাখা কোন এক টিভির ওয়ালপেপারে আমি Hallstatt কে প্রথম দেখি।।। তখন এই জায়গার নাম না জানলেও hallstatt এর সেই আইকনিক ভিউর ছবিটা মাথায় গেথে যায়।।

অতঃপর ইন্টারনেটে কিঞ্চিত গবেষণা করে জানতে পারলাম Hallstatt অস্ট্রিয়ার মাঝখানে লেকের পাড় আর পাহাড়ের ঢালে মাত্র ৮০০ জনসংখ্যার ছোট্ট ছবির মত এক্টা গ্রাম।।। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো এইটাকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষনা করে।।। টুরিস্ট স্পট হিসেবে Hallstatt এত বিখ্যাত হয় যে ২০১২ সালে চায়না নিজেদের দেশে এই জায়গার এক রেপ্লিকা তৈরী করে ফেলে।।।

Hallstatt
Hallstatt

আইকনিক ভিউ বাদেও Hallstatt ঐতিহাসিকভাবে খুবই সমৃদ্ধশালী জায়গা।।
পৃথিবীর অন্যতম পুরাতন সল্ট মাইনিং এর উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা এই সেটেলমেন্ট এর বয়স নাকি প্রায় ৭০০০ বছর!!! আইরিশ কিংবা স্কটিশদের যে সেল্টিক ল্যাংগুয়েজ /কালচার তারও উৎপত্তিও এই এলাকায়।।। আঠারোশ শতকের শেষের দিয়ে রাস্তা বানানোর আগ পর্যন্ত এই এলাকা মোটামুটি দূর্গম ছিল বিধায় বহিঃশক্তির আক্রমন থেকে বরাবরই নিরাপদ ছিল।।

২০১৮ সালে অস্ট্রিয়ান এমব্যাসি থেকে সেনজেন ভিসা করালেও ওইবছর অস্ট্রিয়া যাওয়া হয় নাই।। ২০১৯ এ যখন আবার ভিসা করাতে গেলাম, তখন এমব্যাসির লোকজন আমাকে ক্যাক করে ধরে বসলো।।। গতবছর অস্ট্রিয়া যাওয়ার প্রমান কিনবা না গেলে অস্ট্রিয়া থেকে ভিসা করিয়ে অস্ট্রিতেই কেন যাই নাই এইসব জিজ্ঞাসা করা শুরু করল।।। একসময় মনে হচ্ছিলো ভিসাই দিবে না।। যাই হোক অনেক কপচাকপচির পর ভিসা পাই।।। এবার তাই আর কোন রিস্ক না নিয়ে ভিয়েনা থেকে ইউরোপে ঢুকি।। ভিয়েনার পরে অস্ট্রিয়ার অন্য কোন জায়গায় না গিয়ে চলে যাই ব্রাতিসলাভা।। সেখান থেকে প্রাগ – ক্রাকো- বুদাপেস্ট-জাগরেব-স্প্লিট-মোস্টার-সারায়েভো-ব্লেদ হয়ে আবার অস্ট্রিয়ার সালজবার্গ এ আসি।।।

ব্লেদ থেকে সালজবার্গ ট্রেন রাত ১২ঃ৩৬ তে ।।। সকালেই হোস্টেল ছেড়ে দিয়ে হোস্টেলের লাগেজ রুমে জিনিসপত্র রেখে ব্লেদ এলাকার আউটর্স্কাটের পাহাড়ে সাইক্লিং, লেকে সুইমিং ইত্যাদি করে দিন পার করছি।।। রাত দশটায় ব্লেদ থেকে ট্রেন স্টেশনের লাস্ট বাস হওয়ায় ট্রেন আসার ঘন্টা আড়াই আগেই স্টেশনে গিয়ে বসে থাকতে হলো।।।
লিসি ব্লেদ স্টেশনটা একেবারেই ছোট।। স্টেশনের সাথে একটা মাত্র বার।।। বারে জনা তিনেক মাতাল আর বারটেন্ডার ছাড়া পুরা স্টেশনে মধ্যরাতে আমি একা।।। গ্রীষ্মকাল হলেও রাতের ঠান্ডার কারনে চাদর পেচিয়ে জুবুথুবু হয়ে বসলাম।। বড় ব্যাগপ্যাক্টা বেঞ্চে রেখে নিজের মূল্যবান জিনিসগুলা ডেপ্যাকে হাতের সাথে পেচিয়ে নিলাম, যাতে বাইচান্স মাতালগুলা এ্যাটাক করলেও এইগুলা নিয়েই দৌড় দেয়া যায়।।। এই দিনেই ট্রেন আধা ঘন্টা লেট হইতে হইল।।। মাতাল গুলো রেললাইনে দাড়িয়ে প্রসাব করা, হেড়ে গলায় গান গাওয়ার মত মতলামি করতে লাগ্লো।।।
যাই হোক কোন দূর্ঘটনা ছাড়াই ট্রেনে উঠলাম।।।
সারাদিনের ক্লান্ত শরীর নিয়ে মিনিট দশেকের মধ্যেই গভীর ঘুমে চলে গেলাম।। সকলে ঘুম ভাঙ্গলে দেখি ট্রেন কোন এক স্টেশনে থেমে আছে।।। চোখ কচলাতে কচলাতে গুগল ম্যাপ খুলে দেখি সালজবার্গ পৌছে গিয়েছি।।।

Hallstatt
Hallstatt

সালজবার্গ বড় স্টেশন।।। স্টেশনে নেমে প্রথমেই সারাদিনের জন্য নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো ডেপ্যাকে ভরে ব্যাকপ্যাক রেখে আসলাম লাগেজ লকারে।। ইউরোপিয়ান ট্রেনস্টেশনের লাগেজ লকারগুলো খুবই কাজের৷৷ ৫/১০ ইউরোতে সারাদিন লাগেজ রাখা যায়।।। প্রব্লেম একটাই, ওয়ান টাইম ইউজ।।। মানে একবার বন্ধ লকার খুললে আর রাখা যাবে না।।।
সালজবার্গ থেকে Hallstatt যেতে মাঝে Attnang puchheim একবার ট্রেন চেইঞ্জ করতে হয়।।।
Attnang Puchheim থেকে Hallstatt পুরো রাস্তাটাই ভয়াবহ রকমের সুন্দর।।।বার বার মনে হচ্ছিলো যে মাঝের যে কোন স্টপেজে নেমে Traunsee লেকের পাড় ধরে হেটে যেতে।।।
Altmunster, Traunkirchen bahnhof, traunkirchen ort bahnhof, ebensee landungsplatz bahnhof যে কোন এক্টা স্টেশনে নেমে পরের স্টেশন পর্যন্ত হেটে যাওয়া worth…

ট্রেন ছাড়াও বাসে বা প্রাইভেট কারে করে Hallstatt যাওয়া যায়।।। ট্রেনে গেলে লেকের ওপাড়ে নেমে বোটে করে এপাড়ে আসতে হবে৷।। আর বাসে বা প্রাইভেট কারে গেলে সরাসরি Hallstatt যাওয়া যাবে।।

বরাবরের মতই সকাল থেকে আমার ভ্রমন সংগী বৃষ্টি।।। সেই Mostar থেকে আমার পিছন পিছন ঘুরতেছে।।। মন মত এক্টা ছবিও তুলতে পারতেছি না।।
মন খারাপ করে রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম।।। মন খারাপ হইলে সাধারণত খাওয়া দাওয়া করলে আমার মন ভালো হয়ে যায়।।।
কিন্তু খাবারের দাম দেখে মন আরো বেশি খারাপ হয়ে গেলো।।। 😃🤣
একদিকে খরচের জন্য বুক ভরা কষ্ট অন্যদিকে বার্গার খাওয়ার আনন্দ নিয়ে কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হলাম।।। পুরো গ্রাম খুবই ছোট৷।৷ বোটে করে যেখানে নেমেছি ওইটা মাঝামাঝি বলা চলে।।। মার্কেটপ্লেস, গির্জা, লোকালদের আবাসিক এলাকা দেখতে দেখতে গ্রামের দক্ষিন মাথায় হাজির হলাম।। দক্ষিনের রাস্তায় বৃষ্টির মধ্যে পাহাড়ি রাস্তায় সাইকেল রেস হচ্ছে।।। কতক্ষন দাড়িয়ে সাইকেল রেস দেখে আবার হাটা শুরু করলাম।।। পাহাড় বেয়ে এক্টা অফবিট হাইকিং ট্রেইল দেখে ওইটা ধরে হাটা শুরু করলাম।।। ঘন্টা দুই রবিনহুডের শেরউড জংগলের মত পাহাড়ি জংগলে হাইকিং করে পাহাড়ের উপর থেকে Hallstatt এর ভিউ দেখে আবার ব্যাক করলাম বিকালে।।। বৃষ্টি এক্টু থামাতে ফটাফট আইকনিক ভিউর কয়েক্টা ছবি নিয়ে আরেকটা বার্গার সমেত বোটে ফিরতি পথ ধরলাম।।।

Hallstatt
Hallstatt

Hallstatt এর মধ্যে strolling করা বাদেও অনেক কিছু করার আছে এই এলাকায়।।
Ice Cave, salt mine কিনবা Bone house cemetery দেখা কিনবা পাহাড়ের উপর হাইকিং করে 5 fingers ভিউ পয়েন্ট থেকে লেক দেখা কিনবা alpine হাইক।।।
যদিও টাকা, সময় আর সর্বোপরি খারাপ আবহাওয়ায় ইচ্ছার অভাবে আমি শুধু Hallstatt এমাথা ওমাথা strolling করে বেড়িয়েছি।।।

থাকার জন্য Hallstatt খুবি খরুচে জায়গা।।। সালজবার্গ থেকে ডে ট্রিপ দেয়াটা বেটার।।। তবে সবচেয়ে ভাল হয় Hallstatt এর কাছাকাছি Bad Ischl বা Bad Goisern এই দুটো স্টেশনের যে কোন এক্টাতে থাকা এবং দুইদিনের প্ল্যান করা।। এইসব এলাকায় সাইকেল ভাড়া নিয়ে সাইক্লিং কিনবা হাইকিং কিনবা কিছু না করে কফির মগ হাতে করে কোন একজায়গায় বসে থাকাও প্রশান্তি।।।

সবশেষে, দেশে বিদেশে সবজায়গায় পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।।। নির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা ফেলুন।। অন্যকে নির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা ফেলার জন্য অনুরোধ করুন।।