ঘুরে আসুন স্বাধীনতার সূতিকাগার মেহেরপুর জেলা থেকে



ঘুরে আসুন স্বাধীনতার সূতিকাগার মেহেরপুর জেলা থেকে।
কিভাবে যাবেনঃ
মেহেরপুরে বঙ্গবন্ধু সেতু ও পদ্মা নদী পারাপার হয়ে দুইভাবেই যাওয়া যায়। যারা বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে যাবেন তারা ঢাকার কল্যানপুর থেকে বাস পাবেন। কল্যানপুর থেকে এসি ও নন এসি বাস পাবেন। এসবি পরিবহন, জেআর , শ্যামলী, আর কে পরিবহন পাবেন।
আর যারা ফেরী পারাপার হয়ে যাবেন তারা বাস পাবেন গাবতলী থেকে। জে আর, রয়েল, এসএম, মেহেরপুর ডিলাক্স, চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স রয়েছে।
নন এসি ৪৫০ টাকা, এসি ইকোনোমিক ক্লাশ ৭০০, আর বিজনেস ক্লাশ ১০০০টাকা।
কি কি দেখবেনঃ



মুজিবনগর স্মৃতিসৌধঃ
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার মেহেরপুর সদর থানার (বর্তমান মুজিবনগর উপজেলা) বৈদ্যনাথতলা গ্রামের ঐতিহাসিক আম্রকাননে বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ঐতিহাসিক শপথ গ্রহণের স্থানে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে। উক্ত স্মৃতিসৌধ ও ঐতিহাসিক আম্রকানন যেকোন পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।
মুজিবনগর মানচিত্রঃ ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ স্থানের আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলার লক্ষ্যে উক্ত কমপ্লেক্সে একটি মানচিত্রের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন সেক্টরকে দেখানো হয়েছে। এই কমপ্লেক্স মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলীর স্মারক ম্যূরাল স্থাপন করা হয়েছে। সার্বিকভাবে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স, ঐতিহাসিক আম্রকানন, ঐতিহাসিক ছয় দফার রূপক উপস্থাপনকারী ছয় ধাপের গোলাপ বাগান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এক জীবন্ত প্রদর্শন হিসাবে বিবেচিত হবার দাবী রাখে।
মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সের ভিতরের অংশে মুক্তিযুদ্ধকালীন কিছু ঐতিহাসিক ঘটনার ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। স্মৃতি কমপ্লেক্সের বাইরের অংশে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ, মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ এবং পাকিস্থানি বাহিনীর আত্নসমর্পণ এর দৃশ্যসহ আরও ঐতিহাসিক ঘটনার ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। উক্ত ভাস্কর্যগুলির কয়েকটি এখানে দেওয়া হলো। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত উক্ত ভাস্কর্যগুলি যেকোন বিদগ্ধ পর্যটককে আকর্ষণ করবে।
মুক্তিযুদ্ধকালীন বিভিন্ন সেক্টরের অবস্থান বাংলাদেশের মানচিত্রে প্রদর্শন করে মানচিত্রটি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরস্থ মূল আঙ্গিনায় স্থাপন করা হয়েছে। সুদৃশ্য এ মানচিত্রটি মুক্তযুদ্ধকালীন বিভিন্ন সেক্টরের অবস্থান ও উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলী সম্পর্কিত এক প্রমাণ্যচিত্র।
এছাড়াও মুজিবনগর থেকে ইন্ডিয়া সীমান্তের তারকাটা দেখা যায়। বিজিবি অনুমতি নিয়ে দেখে আসতে পারবেন।
যেভাবে যাবেনঃ শহর বাস টার্মিনাল থেকে আধাঘন্টা অন্তর মুজিবনগরের উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায়। ভাড়া ২৫ টাকা। দুরত্ব ১৪ কিমি।
আমঝুপি নীলকুঠীঃ নীল চাষ ও নীলকরদের দীর্ঘ ইতিহাস মেহেরপুর বুকে জড়িয়ে রেখেছে। আমঝুপি নীলকুঠি ১৮১৫ সাল অথবা এরও কিছুকাল পরে স্থাপিত হয়েছে। এখানে দেখবেন নীলকুঠি, কাজলা নদী, আমবাগান। বর্ষাকালে যদি যান তবে আসার পথে চাদবিল গ্রামের বিশাল বিল দেখে আসবেন।
কিভাবে যাওয়া যায়: মেহেরপুর জেলা সদর থেকে সড়ক পথে দূরত্ব ৭ কি: মি: । বাস, ব্যাটারিচালিত রিকশা এর সাহায্যে ২৫ মি: সময়ে আমঝুপি নীলকুঠিতে পৌঁছানো যায়।
ভাটপাড়ার নীলকুঠি, সাহারবাটিঃ ১৮৫৯ সালে স্থাপিত ধ্বংস প্রায় এই নীলকুঠিটি ইট, চুন-শুরকি দ্বারা নির্মাণ করা হয়।এর ছাদ লোহার বীম ও ইটের টালি দিয়ে তৈরী। এই কুঠির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কাজলা নদী।
কিভাবে যাওয়া যায়: মেহেরপুর জেলা সদর থেকে সড়ক পথে দুরত্ব ১৭ কি: মি: । বাস, ব্যাটারিচালিত রিকশা এর সাহায্যে ৪০মি: সময়ে ভাটপাড়া নীলকুঠিতে পৌঁছানো যায়।
তেরোঘরিয়া বিলঃ বর্ষাকালে এ বিল আপনার মন কে প্রশস্ত করবে। চারিদিকের অথৈ পানি, আর সারাটা বিল জুড়ে রয়েছে পদ্ম ফুল, পানকৌড়ির, বক দের আনাগোনা আপনাকে মুগ্ধ করবে। চাইলে নৌকা তে করে সারাটা বিল ঘুরে দেখতে পারবেন। শহর থেকে ১২ কিমি দুরের এই বিলে যেতে চাইলে ব্যাটারিচালিত রিকশা করে যেতে হবে।
শহরের মধ্যে দেখার মতঃ
=> পৌর ঈদ্গাহঃ একটা ঈদ্গাহ যে দেখার মত কিছু হতে পারে মেহেরপুর পৌর ঈদ্গাহ না আসলে বুঝবেন না।
=> পৌর কবরস্থানঃ এখানে আসলে আপনার মনে হবে না এটা একটা কবর স্থান। এত সুন্দর ও পরিপাটি এই কবরস্থাব যে আপনার এখানে আসলে মনে হবে কোনো এক পার্কে এসেছি। সুদর্শন প্রাচীর নির্মাণসহ প্রাচীরের গায়ে টাইলস্ ও পাথরের উপর আরবী এবং বাংলা কোরআন, হাদীসের বাণী রয়েছে। এছাড়া এ কবরস্থানের সমস্ত জায়গায় ফুলের বাগান দ্বারা সজ্জিতকরণসহ কবর স্থানের মধ্যে ওজুখানা ও মসজিদ নির্মাণ করা আছে। আপনার মন কে ভালো করতে বাধ্য এই পরিবেশ।
=> মেহেরপুর শহীদ স্মৃতিসৌধঃ ১৯৭১ সালে যে সব বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং যাঁরা পাকিস্থানি সৈনিদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছে তাঁদের স্মৃতি রক্ষার্থে মেহেরপুর পৌর কবরস্থানের পাশে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে প্রতি বছর মহান স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে মাল্যদান করে তাঁদের শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করা হয়ে থাকে।
এছাড়াও দেখবেন গড়পুরকুর, শহীদ শামসুজ্জোহা পার্ক, পৌরসভা, টিএন্ডটি রোডের মেহেরপুর গেট, মেহেরপুর হল সহ আরো অনেক কিছু।
থাকার ব্যাবস্থাঃ মেহেরপুর জেলা সদরে সার্কিট হাউজ, পৌর হল, ফিনটাওয়ার আবাসিক হোটেল, মিতা আবাসিক হোটেল, কামাল আবাসিক হোটেলে, ইসলামিয়া আবাসিক হোটেলে আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। আর যারা এক রাত মুজিবনগর কাটাতে চান তাদের জন্য মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ পর্যটন করপোর্রেশনের হোটেলে আবাসনের সুব্যবস্থা আছে। এ ছাড়া জেলা পরিষদের স্থাপিত ডাকবাংলোয় ৩টি ভিআই পি কক্ষে আবাসনের ব্যবস্থা আছে।
আর হ্যা ফেরার পথে অবশ্যই কাশারী বাজারের বাসুদেব এর দোকানে রসকদম্ব ও সাবিত্রী নিতে ভূলবেন না। এছাড়াও বড়বাজার মোড়ে গিয়াস মিষ্টান্ন ভান্ডার এর চমচম ও কালোজাম খেতে ভূলবেন না। আর স্বাদের ব্যাপারটা নাহয় খেয়েই আমায় বলিয়েন।