পদ্মাতীরের ময়নাপাড়ার মাঠ

এই সুন্দর লেখাটি লিখেছেন Toyebul Azhar

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আজ থেকে প্রায় একশত উনিশ বছর আগের বর্ষাকালে, ১৮ জুন তারিখে এ কীর্তনটি রচনা করেছিলেন— ‘কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি, কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক / … মেঘলা দিনে … দেখেছিলেম ময়নাপাড়ার মাঠে কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ’।No photo description available.
১৯৫৭ সালে প্রকাশিত ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থে জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেন— ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে-সবচেয়ে সুন্দর করুণ / সেখানে সবুজ ডাঙ্গা ভ’রে আছে মধুকূপী ঘাসে অবিরল’।
জীবনে বহু সুন্দর জায়গা দেখেছি, হাতে সাজানো পার্ক, ড্রয়িংরুম, রিডিংরুম দেখেছি। কিন্তু একসাথে রবীন্দ্রনাথের ‘ময়নাপাড়ার মাঠ’ আর জীবনানন্দের ‘সবচেয়ে সুন্দর করুণ’ জায়গাটি কোথাও খুঁজে পাই নি। ‘সবুজ ডাঙা ভ’রে আছে মধুকূপী ঘাসে অবিরল’ও চোখে দেখি নি। কিন্তু আমার মন আর চোখ খুঁজেই গেছে সবচেয়ে সুন্দর করুণ মধুকূপী ঘাসে অবিরল ‘ময়নাপাড়ার মাঠ’কে।
অবশেষে সেই শুভক্ষণটি এলো ৯ জুলাই ২০১৬ খ্রিস্টাব্দ তারিখের অপরাহ্নে। হরিরামপুর পদ্মাপাড় আন্ধারমানিক ঘাট থেকে পূর্ব দিকে প্রায় ৩ কিমি দূরে নৌকা থেকে থেকে নেমে জিওব্যাগের বাঁধ ধরে হাঁটতে শুরু করলাম। একদিকে পদ্মার পলিমাখা জল আর অন্যদিকে দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ খোলা মাঠ। আকাশ ছেয়ে উঠলো কাজল কালো মেঘে। হঠাৎ পূবালী বাতাসে ধানের ক্ষেতে ঢেউ খেলিয়ে গেল। মন বলে উঠলো, এই তো সেই ‘সবচেয়ে সুন্দর করুণ মধুকূপী ঘাসে ঢাকা মাঠ’। এই তো সেই ময়নাপাড়ার মাঠ। সাথে সাথে সেই অভূতপূর্ব দৃশ্যের কয়েকটি ছবি তুলি (পোস্টে যুক্ত) এবং ফেসবুকে আপলোড দিয়ে লিখে দিই ‘ময়নাপাড়ার মাঠ’। মূলত ৯ জুলাই ২০১৬ তারিখের আগে ময়নাপাড়ার মাঠ নামে জায়গার অস্তিত্ব পদ্মাপাড়ে ছিল না।
এরপর ধীরে ধীরে ‘ময়নাপাড়ার মাঠ’ নামটি ফেসবুকে জনপ্রিয় হতে থাকে। কেউ একজন চেকড-ইন অপশনে ময়নাপাড়ার মাঠ সংযুক্ত করেন। আজ যখন মানিকগঞ্জের অন্য উপজেলা কিংবা ঢাকা শহর থেকেও ভ্রমণপিপাসু মানুষ ময়নাপাড়ার মাঠ ঘুরে এসে ছবিপোস্ট করেন তখন ভাবি ‘পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর করুণ’ স্থান বলেই হয়তো আমার কল্পনার ‘ময়নাপাড়ার মাঠ’ নামটি দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ছে …
আপনি চাইলে ঘুরে যেতে পারেন। তবে অবশ্যই জুন-অক্টোবরের মধ্যে।
No photo description available.
[ময়নাপাড়ার মাঠ প্রাকৃতিকভাবেই অনেক পরিচ্ছন্ন একটা জায়গা। তাই ময়লা, আবর্জনা ফেলার বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন হবার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ রইলো।]
গন্তব্যযাত্রা —
রুট-১ : ঢাকা গাবতলী থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক হয়ে মানিকগঞ্জ সদর, সেখান থেকে রিক্সাযোগে বেউথা ঘাট, বেউথা ঘাট থেকে রিজার্ভ হ্যালোবাইকে হরিরামপুর থানার পেছনে বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন পদ্মাপাড় অথবা গাবতলী থেকে ভিলেজ লাইন বাসে সরাসরি ঝিটকা বাজার মোড়, সেখান থেকে হ্যালোবাইকে হরিরামপুর থানার পেছনে বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন পদ্মাপাড়। মানিকগঞ্জ সদর থেকে ১৮ কিমি দূরে হরিরামপুর থানার পেছনে পদ্মা নদীর তীর ধরে পূর্বদিকে হেঁটে অথবা ভাড়াকৃত ট্রলারযোগে ২ কিমি গেলেই ময়নাপাড়ার মাঠ।
রুট-২: ঢাকা গাবতলী থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক হয়ে সাভারের হেমায়েতপুর থেকে বামদিকে সিঙ্গাইর রোড হয়েও হরিরামপুর পৌঁছানো যাবে।
উভয় রুটে গাবতলী থেকে গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় লাগবে ২.৩০-৩ ঘন্টা। লোকেশন চিনতে বা অন্য কোন সহযোগিতা আবশ্যক হলে আমাকে টেক্সট করতে পারেন। রাতে থাকার জন্য হরিরামপুরে জেলা পরিষদের আধুনিক ডাকবাংলো আছে। হরিরামপুরের মানুষজন খুব অতিথিপরায়ণ।

নোট : কৈ যান এ প্রকাশিত আর্টিকেল ছবি বিভিন্ন গ্রূপ, পেজ, ইন্টারনেট থেকে নেয়া, শুধুমাত্র তথ্য এবং ধারণার জন্যই “কৈ যান” সংরক্ষণ করে থাকে, লেখার সাথে তথ্য, দাম, তারিখ অমিল থাকলে “কৈ যান” দায়ী থাকবে না। ধন্যবাদ