কম খরচে বগালেক কেওক্রাডং

কম খরচে বগালেক কেওক্রাডং এখন এক হাইপ তোলা জায়গা।

বন্ধুরা সবাই অনেক দিন যাবত যাওয়ার প্লান ছিলো।
এরপর একদিন হুট করে চলেই গেলাম এই অপরুপ জায়গায়।
আমরা গিয়েছিলাম করোনা মহামারী পরিস্থিতির আগে,ফেব্রুয়ারিতে।
তাও হয়ত অনেকের উপকারে আসবে তাই পোস্টা করা। আমাদের ট্যুরটি ছিল বাজেট ট্যুর। আমি খুব সংক্ষেপে আমাদের ট্যুর প্লান শেয়ার করছি।
আমরা মোট ১২জন ছিলাম(৫জন মেয়ে ৭জন ছেলে)
যেসব জায়গা কভার করেছিলাম ঃ
ঢাকা থেকে সৌদিয়া নন এসি বাসে আমরা বান্দরবান রওনা হই। এছাড়া শ্যামলী, গ্রীন লাইন, হানিফ সহ বিভিন্ন বাস রয়েছে।
১ম দিন
ভোরবেলা বান্দরবান নেমে “হোটেল হিলভিউ”তে সবাই ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করি। এর ভিতরে আগে থেকে বুকিং করে রাখা চাঁদের গাড়ির ড্রাইভার ফয়সাল ভাই চলে আসেন।
সময় নষ্ট না করেই আমরা চলে যাই স্বর্ণমন্দির সেখানে কিছুক্ষণ থেকে রওনা করি নীলাচল। এখানে ঘুরেফিরে রুমার উদ্দেশ্য রওনা। রুমা থেকে গাইড নিয়ে সেখানের কিছু ফর্মালিটিস শেষ করে বার বি কিউ করার জন্য মুরগি এবং প্রয়োজনীয় মসলা নিয়ে(সেখানে ট্রেকিং এর শু ওপাওয়া যায়) দ্রুত বগালেকের উদ্দেশ্য রওনা করি। বগালেকে চেক ইন করি সিয়াম দিদির লেকসাইড কটেজ এ। ( আগে থেকে বলে রাখসিলাম গাইড কে বলে) । রাতে গাইড আমাদের জন্য বার বি কিউ করে দেন।
চাইলে বগালেক এ নামাও যায় আর এখন হয়ত boat ও চালু হয়েছে
স্বর্ণমন্দির, বান্দরবন
স্বর্ণমন্দির, বান্দরবন
২য় দিন ঃ
ভোরবেলা সকলে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করেই রউনা হই কেওক্রাডংয়ের উদ্দেশ্যে । আমরা ব্যাগ হালকা করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়েছিলাম, বাকিটা সিয়াম দিদির রুমে রেখে আসছিলাম ফ্রিতেই। এতে ট্রেকিং এ সুবিধা হয়েছিল। আমাদের গ্রুপে একদম নতুন ট্রেকার ছিল ( ছেলে / মেয়ে) , এতে আমাদের সময় লেগেছিল কেওক্রাডং যেতে ৩-৪ ঘন্টা। মাঝে দার্জিলিং পাড়ায় হাল্কা খাবার খেয়েছিলাম। ট্রেকিং এর সময় ভালো গ্রিপ সহ শু এবং সাথে পানি, ড্রাই ফ্রুটস নিয়ে গেলে ভালো।এছারা কিছুক্ষণ পর পর কিছু ছাওনি আছে যেখানে পানি,সরবত এসব পাওয়া যায়।
সেদিন দুপুরের ও রাতের খাবার কেওক্রাডং এই এক রেস্তরাঁয় করা হয়।
রাতে ছেলেরা তাবু এবং মেয়েরা কটেজে ছিলাম। ভাল কটেজের জন্য আপনি গাইড কে দিয়ে আগে থেকে বলে রাখলে সুবিধা পাবেন।
কেওক্রাডংয়ের রাতের তারা ভরা আকাসের দৃশ্য টি মিস করবেন না।
কেওক্রাডংয়ের চূড়ায়
কেওক্রাডংয়ের চূড়ায়
৩য় দিন ঃ ভোরবেলা ফ্রেশ হয়ে দার্জিলিং পাড়ায় এসে আমরা জুমের ভাত এবং ব্যাম্বু চিকেন ট্রাই করি। এরপর ফিরতি রাস্তায় চলে আসি বগালেক, পথিমধ্যে চিংড়ি ঝর্নায় কিছুক্ষন সময় কাটাই।
বগালেক এ আমাদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকা চাঁদের গাড়িতে করে রওনা হই শাংু নদী ও রিঝুক ঝর্ণার দিকে। সেখানে নৌকার জন্য ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে নৌকা নিয়ে ঝর্নায় যাই এবং একই নৌকায় ঘাটে ফিরি। আবার চাঁদের গাড়িতে করে রুমাতে এসে গাইড দাদা কে বিদায় দিয়ে লাঞ্চ করে রওনা হই শৈলপ্রপাত হয়ে বান্দরবান শহরের উদ্দেশ্য। সন্ধ্যা নাগাদ বান্দরবান এ এসে আমরা চাঁদের গাড়ি বিদায় দেই। রওনা দেই ঢাকার উদ্দেশ্যে।

খরচ

খরচ ঃ আমরা ছিলাম ১২ জন।
বাস ভাড়া ঃ ৬২০+৬২০ ( নন এসি পার পার্সন) ।
সকালের নাস্তা ঃ ৫০ ( পার পার্সন)।
স্বর্নমন্দির + নীলাচল প্রবেশ ঃ ৫০+ ৫০ পার পার্সন।
চাঁদের গাড়ি রিজার্ভ ঃ ১২৫০০ ( উনি আমাদের পুরো ট্যুর এ সাথে ছিলেন, শুধু বগালেক টু কেওক্রাডং আমরা ট্রেক করেছি, এছাড়া বাকি সব প্লেস ঘুরবে এমন চুক্তি করে নিয়েছিলাম। )
গাইড ঃ ২৬০০ ( গাইডের থাকা খাওয়া বাদে, থাকা খাওয়া আপনার দিতে হয়। এটা ওখানের ফিক্সড নিয়ম)
বগালেক খাবার ঃ ১৫০ পার পার্সন । ( বিভিন্ন প্যাকেজ আছে)
বগালেক থাকা ঃ ১৫০ পার পার্সন। ( ছেলে মেয়ে সেম কটেজ কিন্ত পার্টিশন করা ছিল আমাদের)
কেওক্রাডং খাওয়া ঃ ১৫০ ( ডিম সব্জি আলুভর্তা) থেকে তাদের বিভিন্ন প্যাকেজ শুরু।
কেওক্রাডং থাকা ঃ ৩০০ টাকা পার পার্সন।
বার বি কিউ ঃ আমরা মুরগি – মসলা এবং আনুসঙ্গিক ৭০০ টাকার বাজার করেছিলাম।
রিঝুক ঝর্নায় বোট ঃ ১৫০০ করে দুইটা বোট নিয়েছিলাম ৩০০০ টাকায়। (১২ জন)
ফিরতি দিন রুমায় লাঞ্চ ঃ ১২০ টাকা পার পার্সন।
কেওক্রাডং এ গোসলঃ ৫০ টাকা এক বালতি পানি।
মোবাইল চার্জফি বগালেকে ঃ ২০-৩০ টাকা।
কেওক্রাডং এ ডিভাইস চার্জ দিতে ফি দিতে হয়নি।
বগালেক এ এখন বোট রাইড করা যায়। ৩০ মিনিট ১০০ টাকা, ৪ জন।
সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে।
উল্লেখ্য ঃ আমাদের চাঁদের গাড়ির ড্রাইভার + গাইড অনেক ভাল মানুষ ছিলেন। এই রুটে আপনার ট্যুরের অনেক কিছুই এই লোকদের উপর নির্ভর করে।
ড্রাইভার ফয়সাল ভাই ঃ +8801867542082
গাইড সিয়াম বম ঃ 01868199418
বিঃদ্রঃ পাহাড়িদের সাথে দয়া করে ভাল ব্যাবহার করবেন। ময়লা আবর্জনা দয়া করে ওদের দেওয়া নির্দিষ্ট স্থানে ফেলবেন।