মনু মিয়াঁর জমিদার বাড়ি, উয়ারি-বটেশ্বর ও বেলাবো জামে মসজিদ

ডে লং ট্যুর (মনু মিয়াঁর জমিদার বাড়ি, উয়ারি-বটেশ্বর ও বেলাবো জামে মসজিদ)

১ দিনের ঘোরা ঘুরির জন্য আজকের যাত্রা নরসিংদী। ১ দিনের ট্যুরের জন্য খুব সকালে রওনা দিতে হবে। সেই মোতাবেক সকাল সকাল বের হলাম। ৮ টায় গিয়ে পৌঁছালাম কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে। ৮.৩০ এ ধরতে হবে চট্টগ্রামগামী কর্ণফুলী এক্সপ্রেস। গন্তব্য ঘোড়াশাল। টিকিট কেটে সিটে গিয়ে বসলাম। ২ জনের সিট হলেও লোকাল ট্রেনে ৩ জন করে বসে। সবাইকে অবাক করে ট্রেন যথা সময়ে ছাড়ল, কিন্তু যথা সময়ে পৌঁছাবেনা এটা নিশ্চিত। ২ জনের সীটে ৩ জন বসে বেশ অসুবিধাই হচ্ছিলো।

এর মধ্যে পাশের যাত্রীর ফোন আসলো। তার কথা বার্তায় বুঝলাম তার গার্লফ্রেন্ডর সাথে দেখা করতে আসছিলেন। কিন্তু দেখা হয়নি। হঠাৎ তিনি বললেন, তুমি কি আসতে পারবে? তাহলে আমি নেক্সট স্টেশনে নেমে যাবো। আমি ভাবলাম যাক এবার আরাম করে বসা যাবে! নেক্সট স্টেশন আসলো নামার কোন নাম গন্ধ নেই। আবার নেক্সট স্টেশন আসলো তিনি আবার নামবো নামবো করে আবারও নামলেন না। ধুর নামবো নামবো করে করে সব স্টেশন পার করে প্রায় ঘোড়াশাল চলে এলো। তিনি যাবেন ফেনী। পাকা ১.৪০ ঘণ্টায় ঘোড়াশাল পৌঁছালাম।

স্টেশন অনেক ওপরে। নিচে নেমে নাস্তা সেরে রিক্সা নিয়ে বললাম, মনু মিয়াঁর বাড়ি চলো। ২০ টাকা দিয়ে ১০ মিনিটেই পৌঁছে গেলাম। রাস্তার সাথেই পাশাপাশি ২ টা বাড়ি। ১ম বাড়ির দরজা খোলা কেউ নেই। ধীর লয়ে ভিতরে গেলাম। কেয়ার টেকার এসে বলল, কাকে চাই? বললাম, ঢাকা থেকে এসেছি বাড়িটা ঘুরে দেখতে চাই। বলল, বাড়িতে স্যার (মালিক) আছে ১০ মিনিটের মধ্যে দেখে বের হন। সাথে মধু নিয়ে যাওয়া উচিৎ ছিল। কর্কশ কণ্ঠে কথা বললে বলতাম, এই নিন আগে মধু খান তারপর কথা বলুন!

যেহেতু এই জমিদার বাড়ি ব্যক্তি মালিকানাধিন সুতরাং কিছু বলার সুযোগ নেই। ১০ মিনিটেই ঘুরে দেখলাম। ২ টা সান বাঁধান পুকুর ঘাট বাগান। বাড়ির সামনে বিশাল আঙিনা সবুজে সবুজে মোড়ান। দেখলাম আর ছবি তুললাম। সময় শেষ বের হয়ে দেখি বাড়ির সাথে ছোট্ট একটা মসজিদও আছে। এবার পাশের বাড়িতে যাওয়ার পালা। এবাবা দরজা তো বন্ধ। কেউ নেই। এখন উপায়! এই বাড়িটা বেশি জোশ। না দেখে গেলে তো মিস। কি আর করার। কিছুক্ষণ ওয়েট করার পর কেয়ার টেকারের দেখা পেলাম।

কথা বার্তায় বুঝলাম বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড়! বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে তাকে ম্যানেজ করে কিছুক্ষণের জন্য ভিতরে ঢুকলাম। এক কথায় দারুন। খুব পরিপাটি করে সাজানো। ঘুরে ঘুরে ছবি তুললাম। টিওবি’র জন্যও ছবি তুললাম। জমিদার বাড়ি বলে আমাকে চা খেতে দিবে এমন কোন কথা নেই। তাই দেরি না করে বেরিয়ে গেলাম। এবার গন্তব্য উয়ারী-বটেশ্বর দুর্গ নগরী। ঘোড়াশাল থেকে গেলাম মরজাল। ১/১.৩০ ঘণ্টার রাস্তা। মরজাল গিয়ে দুপুর হয়ে গেল। সবুজ বাংলা হোটেলে ছোট মাছ, শুঁটকী ভর্তা আর ব্যাম মাছ দিয়ে ভাত খেলাম। সাথে এখানকার কিছু বিখ্যাত মিষ্টি খেলাম। সব মিলিয়ে বিল হলো মাত্র ১৩০/- টাকা। খাওয়া শেষ এবার যাওয়ার পালা।

অটো রিক্সাতে উঠলাম ৩০ টাকা দিয়ে ৩০ মিনিটে উয়ারী-বটেশ্বর নামিয়ে দিল। রাস্তায় একটা সাইন বোর্ড আছে ওখানেই নামতে হবে। এখান থেকে ২/৩ মিনিট হেঁটে গেলাম দুর্গ নগরীতে। এ কি! তেমন কিছুই তো নেই। খনন করে আবার বন্ধ করে দিয়েছে। চার দিকে কিছু ছবি একটা কুড়ে ঘর খনন কাজের ড্যামি আর একটা গর্তের উপর দোচালা টিন দেয়া। এই সর্বশেষ অবস্থা। আজকের দিনে আমি একাই পর্যটক, জন মানব নেই বললেই চলে। সাথে একটা বাড়ি আছে। ওই বাড়ি থেকে একজন কে ডেকে নিয়ে এসে কয়টা ছবি তুলে মনের দুঃখের কথা মন্তব্য খাতায় নিলে চলে গেলাম। (মন্তব্য খাতায় একজন লিখেছে আসা যাওয়ার টাকাই উঠলনা)। তো চলুন যেখানে গেলে টাকা উসুল হবে। এখান থেকে চার্জার চালিত রিক্সাতে করে ৪০ টাকা দিয়ে নামলাম বেলাবো জামে মসজিদের সামনে। মসজিদটা সত্যি দারুণ। চাইলে নামাজও পড়ুন। এখন পরন্ত বিকেল। কিছু নাস্তা পানি করে এখান থেকে মরজালের সি.এন.জি করে ৩০/- টাকা দিয়ে মরজাল ফিরলাম। মরজাল থেকে ঢাকাগামী অনেক গাড়ি পেয়ে যাবেন। অনন্যা যাতায়াত এগুলো গেটলক মেইল গাড়ি। যায় যাত্রাবাড়ি/সায়েদাবাদ পর্যন্ত। ভাড়া ১০০/- টাকা।

গুলিস্থান ও মহাখালী হতে বাস পাবেন। বাসে যেতে জ্যাম হতে পারে বিধায় ট্রেনে যেতে পারেন। সকাল ৮.৩০ টায় কমলাপুর হতে চট্টগ্রামগামী কর্ণফুলী এক্সপ্রেসে উঠে পরুন। জমিদার বাড়িটি কোন বিনোদন স্পট নয়, ব্যাক্তি মালিকানাধীন রেসিডেন্স। সুতরাং গ্রুপ নিয়ে যাওয়া একদমই ঠিক হবে না। আর আপনি একা গেলেই যে ভিতরে এলাও করবে এমনটাও নয়। নির্ভর করছে আপনার ম্যানেজিং কেপাসিটির উপর। তাহলে ঘুরতে থাকুন…….
আর পরিবেশ পরিছন্ন বজায় রাখুন।