রোজ গার্ডেন !!! পুরানো ঢাকা যদিও চাপা অলিগলি, হৈ হুল্লোড় আর ব্যস্ততা ও রিকশার জ্যামের জন্য বিখ্যাত, তারপরেও কিছু কিছু জায়গা আছে যেগুলো একটু ভিন্ন রয়েই গেছে। রোজ গার্ডেন এরকম একটা জায়গা। ১৯৩১ সালে হৃষীকেশ দাস নামে এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী পুরানো ঢাকার হৃষীকেশ রোডে ২২ বিঘা জমির উপর একটি বাগানবাড়ি তৈরি করেন। বাগানে প্রচুর গোলাপ গাছ থাকায় এর নাম হয় রোজ গার্ডেন। এছাড়া বাগানটি সুদৃশ্য ফোয়ারা, পাথরের মূর্তি ইত্যাদি দিয়ে সাজানো আছে।
ইতিহাস:
রোজ গার্ডেন এর রয়েছে একটি অসাধারণ ঘটনা যা বাংলাদেশের জন্মের সাথে যার সম্পর্ক আছে। ১৯৪৯ সালের ঘটনা, বঙ্গবন্ধু তখন জেলে। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলির কে. এম. দাস লেন রোডের রোজ গার্ডেন প্যালেসে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠিত হয়। যার সভাপতি ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক হন টাঙ্গাইলের শামসুল হক। পরবর্তীকালে ১৯৫৫ সালে মওলানা ভাসানীর উদ্যোগে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগঠনটির নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ করা হয়।
১৯ শতকের বলধার জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী তার বাগানবাড়ি নির্মাণ করেন, যা বর্তমানে বলধা গার্ডেন নামে পরিচিত। এখানে নিয়মিত গানের আসর বসতো। উচ্চবিত্তদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল জায়গাটি। জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী নিজে নাট্যকার ছিলেন। বিনা আমন্ত্রণে ঢাকার একজন ধনী ব্যবসায়ী হিসেবে হৃষীকেশ দাস একদিন বলধার এক অনুষ্ঠানে যান। সনাতন হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী নিম্ন বর্ণের হওয়ায় তাকে অপমান করা হয়। এ অপমান থেকে একই রকম বাগানবাড়ি নির্মাণ করে এর প্রতিশোধ নিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হন হৃষীকেশ দাস। আর এভাবেই বলধার জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরীর বাগানবাড়ির আদলে নির্মিত হয় রোজ গার্ডেন।
১৯৩০ সালের দিকে হৃষীকেশ দাস রোজ গার্ডেনের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের দুর্লভ সব গোলাপ গাছে সুশোভিত করেন উদ্যানটি। গোলাপ বাগান সমৃদ্ধ বাড়ি হওয়ার কারণেই এর নাম হয় ‘রোজ গার্ডেন’। এদিকে, উচ্চাভিলাষী বাড়ি নির্মাণ এবং বাগান তৈরির বিশাল খরচের ভার সামলাতে তাকে নিতে হয় প্রচুর ঋণ, আর এই ঋণের দায়ে হৃষীকেশ দাস তার আত্মসম্মানের প্রতীক এই বাগানবাড়িটি ১৯৩৬ সালে ব্যবসায়ী খান বাহাদুর মৌলভী কাজী আব্দুর রশীদের কাছে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। সত্তর সালের দিকে ‘রোজ গার্ডেন’ লীজ দেয়া হয় ‘বেঙ্গল স্টুডিও’কে। ১৯৮৯ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ‘রোজ গার্ডেন’কে সংরক্ষিত ভবন বলে ঘোষণা করে। ১৯৯৩ সালে বাড়িটির অধিকার পান কাজী রকিব।
রোজ গার্ডেন বর্তমানে নাটক ও টেলিফিল্ম শুটিং স্পট হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। রোজ গার্ডেনের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য এখন নাটক ও টেলিফিল্মের অনুষ্ঠানগুলোতেই দেখা যায়। এখানে সপ্তাহের প্রায় সময়ই শুটিং হয়।
সময়সূচী:
প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত রোজ গার্ডেন দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। রোজ গার্ডেনের কোন সাপ্তাহিক বন্ধ নেই। তবে শুটিং চলাকালীন সময়ে দর্শনার্থীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। তাই এখানে ঢুকতে পারাটা একটু অনিশ্চিত।
কোথায়:
ঢাকা শহরস্থ সূত্রাপুর থানা এলাকাধীন ১৩ নং কে.এ. দাস লেন এই ঠিকানায় রোজ গার্ডেন অবস্থিত। GPS Coordinate : 23.71832, 90.42646
কীভাবে যাবেন:
মতিঝিল, গুলিস্তান, সায়দাবাদ বা ইত্তেফাক মোড় – এই সবগুলো জায়গা থেকেই রিকসায় ১৫/২০ টাকার ভেতর আসা যাবে এই টিকাটুলির রোজ গার্ডেনে।
রোজ গার্ডেন ঘুড়ে বেড়ানোর পর চাইলে ঘুরে আসতে পারেন সাউথ টাউন জামে মসজিদ থেকে। সাউথ টাউন জামে মসজিদ কেরানীগঞ্জ নতুন জেলখানার বিপরীতে “সাউথ টাউন” আবাসিক এরিয়ার ভিতরে। বিস্তারিত জানতে পড়তে পারেন : সাউথ টাউন জামে মসজিদ
You must be logged in to post a comment.