আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যান

আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যান

লিখেছেন : Md Rasheduzzaman 

আলতাদীঘি আমার এক গোপন ভালোবাসার নাম। ঋতু বদলের সাথে সাথে এর প্রকৃতিও বদলায়।যতবার যাই ততবার নতুন রূপে আবিষ্কার করি প্রিয় জায়গাটা। কিছুদিন আগে এক মেঘলা দিনে শেষবার আলতাদীঘি দেখে আসলাম।জীবনে প্রথম একসাথে কয়েক কোটি ফুটন্ত পদ্ম ফুল দেখলাম। মনে মনে চাই এই জায়গাটা লুকায়ে রাখতে। কেউ যেনো এইখানে না আসে।কারণটা সবাই জানেন কিন্তু এতো সুন্দর নিজের মাঝে ধরে রাখা খুব কষ্টকর তাই শেয়ার দিলাম। শুধু একটা অনুরোধ কোনো জায়গার পরিবেশ নস্ট করবেন না নোংরা আবর্জনা ফেলবেন না।

আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যান” রাজশাহী সামাজিক বন বিভাগের আওতাধীন নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলায় পাইকবান্ধা রেঞ্জের অধীন ধামইরহাট বিটে অবস্থিত। রাজশাহী হতে ১১০ কিঃমিঃ উত্তরে নওগাঁ জেলা সদর হতে ৬০ কিঃমিঃ, জয়পুরহাট জেলা সদর হতে ২৭ কিঃমিঃ পশ্চিমে বগুড়া জেলা সদর হতে ৮০ কিঃমিঃ পশ্চিমে এবং ধামইরহাট উপজেলা হতে উত্তরে প্রায় ৫ কিঃমিঃ এর মধ্যে এই বনাঞ্চল তথা জাতীয় উদ্যানটির অবস্থান। আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যানের মোট আয়তন ২৬৪.১২ হেক্টর।

শালবন এলাকার মাঝে ৪২.৮১ একর আয়তনের একটি বিশাল দিঘী বিদ্যমান আছে। এর নাম আলতাদিঘী। নওগাঁ জেলার এই দিঘীর ন্যায় বৃহৎ ও মনোমুগ্ধকর দিঘী আর নেই।দিঘীটির দৈর্ঘ্য ১.২০ কিঃমিঃ, প্রস্থ ০.২০ কিঃমিঃ। দিঘীটির উত্তর, দক্ষিন, পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে বন বিভাগের সৃজিত বাগান ও প্রাকৃতিক শালবাগান রয়েছে, পূর্ব পার্শ্বে কিছু সাঁওতাল উপজাতীর বসবাস রয়েছে। আলতাদিঘীর চতুর্পাশের বাগান, প্রাকৃতিক শালবন এবং সাঁওতাল আদিবাসীদর ভিন্নধর্মী জীবনাচারন দিঘীটির গুরুত্ব ও সৌন্দর্য্য আরও বৃদ্ধি করেছে যা উপভোগ করার জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রচুর দর্শনার্থী আলতাদিঘী পরিদর্শনে আসেন। বর্তমানে দিঘীতে চিত্ত বিনোদনের জন্য কোনরকম সুযোগ সুবিধা নেই।

আনুমানিক ১৪০০ খ্রীষ্টাব্দে এ অঞ্চলের রাজা বিশ্বনাথ জগদল রাজত্ব করতেন। সেই সময় এতদাঞ্চলে পানির অভাব প্রকট ধারন করেছিল। কথিত আছে একদিন রানী স্বপ্নে দেখলেন যে, উক্ত এলাকার পানির সমস্যা নিরসনের জন্য একটি বৃহৎ দিঘী করতে হবে। সেই মতে রাণী রাজাকে বললেন আমি পায়ে হেটে যাব এবং যতক্ষন পর্যন্ত আমার পা ফেটে রক্ত না বের হবে ততক্ষন পর্যন্ত হাঁটতে থাকব। আমি যতদুর পর্যন্ত হাঁটব ততবড় একটি দিঘী খনন করে দিতে হবে। রাণীর কথামত পাইকপেয়াদা বাঁদিসহ রাণী হাঁটতে শুরু করলেন। হাঁটতে হাঁটতে রাণী বহুদুর চলে যাচ্ছিলেন। তখন পাইক পেয়াদারা চিন্তা করল রাণী যদি হাঁটতে থাকেন তাহলে রাজার পক্ষে এতবড় দিঘী খনন করা সম্ভব হবে না। তাই তারা হাঁটার এক পর্যায়ে রাণীর পিছন থেকে রাণীর পায়ে আলতা ঢেলে দিয়ে চিৎকার করে উঠে বলল রাণীমা আপনার পা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। তখন রাণীমা উক্ত স্থানে বসে পড়লেন। রাজা বিশ্বনাথ জগদল সে পর্যন্ত উক্ত দিঘীটি খনন করলেন। রাণীর পায়ে আলতা ঢেলে দেওয়ার প্রেক্ষিতে দিঘীটির নামকরণ করা হয় “আলতাদিঘী”।

যেভাবে যাবেন …আলতাদীঘি নওগাঁ জেলায় হলেও জয়পুরহাট শহর থেকে সবচে সহজে যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে জয়পুরহাট সরাসরি কিছু বিলাস বহুল বাস ও ট্রেন সার্ভিস চালু আছে। জয়পুরহাট থেকে ধামুরহাটগামী লোকাল বাস, অটো রিক্সা বা মাইক্রো নিয়ে সরাসরি ৪০ মিনিট লাগবে আলতাদীঘি যেতে। সেখানে আর একটি দর্শনীয় স্থান “ধ্বংসপ্রাপ্ত জগদল বিহার” (১০ মিনিটের রাস্তা) দেখতে যেতে পারবেন। আর জয়পুরহাট আসলে বিখ্যাত “পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারও” দেখতে পারবেন যদি হাতে কিছু সময় থাকে।
(লেখাটির কিছু তথ্য নওগাঁ জেলা পোর্টাল থেকে নেয়া )

হ্যাপি ট্রাভেলিং