কম্বোডিয়া ভ্রমনের আদ্যোপান্ত

কম্বোডিয়া ভ্রমনের আদ্যোপান্ত

লিখেছেন : Arefin Shafi

কম্বোডিয়া দেশটির সাথে অনেকেই কেন জানি কলম্বিয়াকে গুলিয়ে ফেলেন।
নাম কাছাকাছি হলেও দুটি দুই মহাদেশে অবস্থিত।কম্বোডিয়া এশিয়া মহাদেশেরই ছোট একটি দেশ।ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ডের মধ্যবর্তী এই দেশটিতে রয়েছে প্রাগৈতিহাসিক কিছু স্থান।এশিয়দের তুলনায় তাই পশ্চিমা পর্যটকদের ভীড় তুলনামূলক ভাবে একটু বেশী। যারা ভ্রমনের জন্য থাইল্যান্ড বা সিঙ্গাপুর যাওয়ার প্ল্যান করছেন তারা হাতে দুই একদিন বাড়তি সময় নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন এই দেশটিতে। ভিসা নিয়ে তেমন কোন ঝামেলা পোহাতে হবেনা। থাইল্যান্ড কিংবা সিঙ্গাপুরে কম্বোডিয়ান দূতাবাসে ৪২০০টাকা ফি দিয়ে নিয়ে নিতে পারবেন ভিসা।যেহেতু বাংলাদেশে কম্বোডিয়ার কোন দূতাবাস নেই তাই আগে থেকে ভিসা নেয়ার কোন উপায় নেই। আর সম্প্রতি বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য অন এরাইভাল ভিসার সুবিধা দিয়েছে সে দেশের সরকার তাই সেখানে গিয়েও ভিসা নিতে পারবেন বাংলাদেশী পাসপোর্টধারী যে কেউ।
ব্যাংকক থেকে ৪৫ মিনিটের ফ্লাইট এবং সিঙ্গাপুর থেকে দেড় ঘন্টার ফ্লাইটে অন এভারেজ খরচ পড়বে ১১০০০-১৫০০০ টাকার মত।
এবার আসি সেখানে গিয়ে দেখার মত কি আছে।
রাজধানী নমপেন শহরটি ছোট হলেও বেশ সাজানো গোছানো পরিষ্কার। সে দেশে উবারের মতই গ্র্যাব এবং পাসএপ নামক এপগুলো ব্যাবহার করে চাইলেই শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ঘুরে আসতে পারবেন। খরচও তুলনামূলক ভাবে কম। ৪-৫ ডলার দিয়ে বেশ ভালো ঘোরা যাবে। আর শহরের দর্শনীয় স্থানগুলোও মোটামুটি কাছাকাছি হওয়ায় ভাড়া খুব বেশী গুনতে হবেনা আপনাকে।নমপেন শহরটি মেকং নদীর তীরে অবস্থিত এবং শহরের মধ্যখান দিয়েই বয়ে গেছে নদী। নদীর দুই ধারে রয়েছে দেশী বিদেশী বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, বার এবং পাব যা কিনা আপনাকে কিছুটা হলেও পাতায়া কিংবা ফুকেটের ওয়াকিং স্ট্রিট গুলোর ফ্লেভার দিবে!!
৬-৭ ডলার খরচে যে কেউ ভরপেট খেয়ে নিতে পারবেন।কম্বোডিয়ায় মুদ্রাস্ফিতীর কারণে সে দেশে ইউএস ডলারই সবজায়গায় ব্যাবহার হয়।দর্শনীয় জায়গা গুলোর মধ্যে রয়েছে রয়েল প্যালেস(এন্ট্রি ফি ১০ ডলার), গনহত্যার স্মৃতি সম্বলিত “কিলিং ফিল্ড” নামক বধ্যভূমি, বীর সৈন্যদের সন্মানে তৈরী wath Phnom নামক স্মৃতি সৌধ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্কয়ার, বেশ কিছু নয়নাভিরাম টেম্পল এবং ফুলের বাগান সম্বলিত পার্ক এবং রাস্তাঘাট।
আর রাজধানী থেক বেশ দূরে অবস্থিত ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অন্তর্গত Angkor যেখানে আপনি খুজে পাবেন সে দেশের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলো। ৪-৫ হাজার টাকায় ৪৫ মিনিটের ফ্লাইটে সহজেই পৌছাতে পারবেন সিয়েম রিপ নামক শহরে এবং সেখান থেকে স্পটটিও বেশ কাছে।
আর খাবারদাবার বেশ সুস্বাদু অনেকটা থাই খাবারের মতই এবং রাস্তার আশেপাশে খুজে পাবেন অনেক ধরনের খাবারের ফুড কোর্ট। ফুড লাভারদের জন্য নমপেন শহরটি হতে পারে একটি অনন্য স্থান।আর যারা কম খরচে ব্যাগভরতি করে শপিং করতে চান তাদের জন্য রয়েছে নাইট মার্কেট।মেয়েদের অর্নামেন্টস, জুতা, শো পিস, ঘড়ি থেকে শুরু করে নাইকি এডি্ডাসের রেপ্লিকা প্রোডাক্ট সহ বিশ্বখ্যাত সবকিছুরই ডামি আইটেম আপনি সেখানে পেয়ে যাবেন তাও অবিশ্বাস্য কম মূল্যে।
রথ দেখা আর কলা বেচার মত হাতে সময় থাকলে ঘুরে আসতে পারেন ভিয়েতনাম। অন এরাইভাল ভিসা সুবিধা সম্বলিত ভিয়েতনামে চাইলে বাসে চেপেও যাওয়া যায়। রাজধানী নমপেন থেকে ভিয়েতনামের হো চি মিন শহর যেতে লাগে ৪-৫ ঘন্টা এবং ভাড়া ২৫০০-৩০০০ টাকার মত। বাস ছাড়াও নদীপথেও বেশ ভালো সুযোগ রয়েছে যাওয়ার আর আকাশ পথ তো আছেই।একসাথে কয়েকটি দেশ ঘুরার এ এক অন্যতম সহজ উপায়।

সাবধানতা-
এক সপ্তাহের ভ্রমনে কম্বোডিয়ার লোকজনকে খুব বেশী মিশুক বলে মনে হয়নি। ইংরেজির অতটা প্রচলন নেই। তাই চলাচলে কিছুটা সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে অটোরিক্সা এবং স্থানীয় গাইডদের থেকে সাবধান।৫ ডলারের জায়গায় ১০০ ডলার পর্যন্ত হাকতে এরা দ্বিধা করেনা এবং বিদেশী কাউকে দেখলে সাধারন দোকানীরাও বেশ দাম হাকায় যা ব্যাক্তিগত ভাবে আমাকে বেশ অবাক করেছে।এছাড়াও র‍য়েছে ছিনতাইকারী এবং পকেটমারের আনাগোনা। স্থানীয় একজন তাই আগে থেকেই বলে দিলো রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলা এবং মানিব্যাগ এর ক্ষেত্রে যেন সাবধান থাকি।

কম্বোডিয়া দেশটি বাংলাদেশ থেকে খুব বেশী ভেডেলপড না তবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিক দিয়ে দেশটি হতে পারে আমাদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তাই কেউ ভ্রমনে গেলে অনুরোধ থাকবে রাস্তার ধারের ডাস্টবিন গুলো যেন আমরা ব্যাবহার করি। ভালো মন্দ মিলিয়ে যেমন মানুষ তেমনি ভালো মন্দ মিলিয়েই একটি দেশ। তাই নেগেটিভ দিকগুলোর দিকে নজর না দিলে ভ্রমনের জন্য কম্বোডিয়া হতে পারে চমৎকার একটি স্থান ।