ঘুরে আসুন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভাসমান হাট

ভিমরুলি হাট

ঘুরে আসুন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভাসমান হাট গুলো থেকে। ঝালকাঠী জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ভিমরুলি গ্রামের আঁকাবাঁকা ছোট্ট খালজুড়ে সারা বছরই বসে ভাসমান হাট। তবে পেয়ারার মৌসুমে হয় জমজমাট বাজার। সপ্তাহের প্রতিদিনই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বিকিকিনি।

পেয়ারা বোঝাই শত শত নৌকা। বিক্রেতারা এখানকার খালে খুঁজে বেড়ায় ক্রেতা। আর ক্রেতাদের বেশিরভাগই হল পাইকার। বড় ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে তারা বাজারে আসেন। ছোট ছোট নৌকা থেকে পেয়ারা কিনে ঢাকা কিংবা অন্য কোনো বড় শহরে চালান করে দেন।

ভিমরুলি হাট খালের একটি মোহনায় বসে। তিন দিক থেকে তিনটি খাল এসে মিশেছে এখানে। অপেক্ষাকৃত প্রশস্ত এ মোহনায় ফলচাষিরা নৌকা বোঝাই ফল নিয়ে ক্রেতা খুঁজে বেড়ান। ভিমরুলির আশপাশের সব গ্রামেই ভরপুর পেয়ারা বাগান। এসব বাগান থেকে চাষিরা নৌকায় করে সরাসরি এই বাজারে পেয়ারা নিয়ে আসেন।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভাসমান হাট

পেয়ারার মৌসুম শেষ হলে আসে আমড়ার মৌসুম। এ অঞ্চলে আমড়ার ফলনও সর্বত্র। আর সবশেষে আসে সুপারি। একটু কম হলেও বছরের অন্যান্য সময়ও ব্যস্ত থাকে এই হাট। ফল ছাড়াও এখানের প্রধান পণ্য বিভিন্ন রকম সবজি।

ভাসমান বাজারের উত্তর প্রান্তে খালের উপরের ছোট একটি সেতু আছে। সেখান থেকে বাজারটি খুব ভালো করে দেখা যায়। আকর্ষণীয় দিক হল এখানে আসা সব নৌকাগুলোর আকার আর ডিজাইন প্রায় একইরকম। মনে হয় যেন একই কারিগরের তৈরি সব নৌকা।

ভিমরুলির বাজারের সবচেয়ে ব্যস্ত সময় হল দুপর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা। এ সময়ে নৌকার সংখ্যা কয়েকশ ছাড়িয়ে যায়। ঝালকাঠী জেলা সদর থেকে মোটরবাইকে এই হাটে আসতে সময় লাগে প্রায় আধাঘণ্টা। আর ইঞ্জিন নৌকায় আসলে সময় লাগে এক ঘণ্টা।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভাসমান হাট

কুড়িয়ানা নৌকাহাট

এ হাটটি স্বরূপকাঠীতে। ভিমরুলির থেকে ইঞ্জিন নৌকায় জায়গাটিতে আসতে সময় লাগবে ঘণ্টাখানেকের মতো। এ হাটের বিক্রি হয় নৌকা। জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে কারিগররা এখানে তাদের তৈরি করা নৌকা বিক্রি করতে আসেন। বিশাল এলাকাজুড়ে শত শত নৌকায় পরিপূর্ণ হয় এ হাট। সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিন বসলেও শুক্রবারে ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম বেশি ঘটে।

বিক্রেতারা বড় একটি নৌকার উপরে ছোট ছোট অনেক নৌকা এনে খালে ভাসিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় থাকেন। ১ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায় পাওয়া যায় বিভিন্ন আকারের নৌকা। সারাবছর হাট বসলেও জুন থেকে সেপ্টেম্বর, হাটের পরিসর বাড়ে। কারণ বর্ষায় এই অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় পানি বেড়ে যাওয়ায় চলাচলের জন্য নৌকার প্রয়োজন পড়ে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভাসমান হাট

আটঘরের হাট

কুড়িয়ানা থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে আটঘর পেয়ারার হাট। এটিও ভাসমান বাজার। বিভিন্ন জায়গা থেকে ছোট ছোট নৌকায় পেয়ারা নিয়ে চাষিরা এখানে হাজির হন। বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গেই নৌকা বোঝাই পেয়ারা বিক্রি হয়ে যায়। কারণ পাইকাররা এখানে চাষিদের জন্য অপেক্ষায় থাকেন।

এ বাজারটিও আকারে বেশ বড়। আশপাশেই দেখা যাবে বড় বড় পেয়ারার বাগান, মাঝে ছোট ছোট নালা। চাষিরা ছোট নৌকা নিয়ে নালার মধ্যে ঢুকে গাছ থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করেন। এছাড়া এ বাজারের পান চাষিরাও আসেন পান বিক্রি করতে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভাসমান হাট