বরিশালের ভাসমান পেয়ারা বাজার + বোনাস

লক্ষ্য ছিল ভাসমান পেয়ারা বাজার, গুটিয়া মসজিদ, দুর্গাসাগর দিঘি । আমরা ছিলাম ৫ জন । ইদানিং নৌপথে ভ্রমণটা খুব উপভোগ করছি । এজন্য বাসা থেকে সরাসরি চলে গেলাম সদরঘাট, ভাড়া জনপ্রতি ৩০ টাকা । লঞ্চঘাটে প্রবেশ পথে ৫ টাকা করে টিকেট নিতে হয় । উপস্থিত লঞ্চগুলার মধ্যে কীর্তনখোলা১০ লঞ্চই আমাদের পারফেক্ট মনে হল । দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি বিশাল প্রকৃতির এবং সবসময় ছাঁদে যেতে পারবেন । রাতের খাবার বাসা থেকেও নিতে পারেন অথবা লঞ্চঘাটের বাইরেও খেতে/কিছু কিনে নিতে পারেন । লঞ্চে সাধারণত দাম বেশি ।

সবার শেষে রাত ৯.৩০ লঞ্চটি সদরঘাট ছেড়ে যায় এবং ভোর ৪.৩০ দিকে বরিশাল লঞ্চঘাট পৌঁছে । বলে রাখা ভালো, ডেক ভাড়া ১৫০ করে নিয়েছিল । বরিশাল পৌঁছে খাবার হোটেলে ফ্রেশ হয়ে, সকালের নাস্তা সেরে নিলাম । পড়টা, ডিম ভাজি, সবজি । জনপ্রতি ৫৫ টাকা করে পরেছিল । তারপর মাহেন্দ্রা (অনেকটা সিএনজির মতো) তে করে জনপ্রতি ৫০ টাকা করে চলে গেলাম বানাড়িপাড়া । ওইখান থেকেই ভাসমান পেয়ারা বাজার ঃ- আটঘর-কুরিয়ানা-ভিমরুলি বাজার ও পেয়ারা বাগান দেখার জন্য মোটামুটি বড়সড় ট্রলার নিলাম । সাথের ৪ সঙ্গীরা পানি ভুতে আক্রান্ত বলে, ছোট ট্রলার নেওয়ার সাহস পাইনি । ভাড়া ১২৫০/৫=২৫০ টাকা (৫-৬ ঘণ্টা) । এই ট্রলারে অনায়াসে ১০-১৫ জন যেতে পারবেন । ট্রলার মামার ফোন নাম্বার- ০১৯৯৩১৮৮৯৫৬ (হারুন ভাই) ।

“নদী-পুকুর-খাল, তিনে মিলে বরিশাল” এটার প্রমাণ এই ট্রলার ভ্রমনেই পেয়ে যাবেন । নদী পেরিয়ে ট্রলার ঢুকবে খালে । দুইপাশের প্রকৃতি আপনাকে বিমোহিত করবেই । তারপর ঢুকবে আরও সরু খালে । আটঘর-কুরিয়ানা বাজার শেষে গেলাম পেয়ারা পার্কে । পার্কে ঢুকে ২০ টাকায় ইচ্ছা মতো পেয়ারা খেতে পারবেন । তবে, খাবারযোগ্য পেয়ারা খুব কমই হাতের নাগালে পাবেন । আমি মাত্র ২ টা খেতে পারছি, অবশ্য, ওইখানে বসে সময় কাঁটাতে ভালো লাগে ।

পেয়ারা পার্ক শেষে আমরা গেলাম বিখ্যাত ভিররুলি পেয়ারা বাজার । দুচোখ ভরে দেখালাম ভাসমান পেয়ারা বাজারের রূপ । চা ও সাদা মিষ্টি টা খেতে ভুলবেন না । আসার পথে কুরিয়ানার বিখ্যাত বৌদির হোটেলে দুপুরের খাবার খেতে পারেন, যদিও তেমন দুপুর না হওয়াতে আমরা খাইনি । আসার সময় আমরা কিছুটা অন্য বাগানের পথ ধরে বানাড়িপাড়া ফিরলাম । তারপর মাহেন্দ্রাতে করে দুর্গাসাগর দিঘি । ভাড়া জনপ্রতি ৩০ টাকা । দুর্গাসাগর প্রবেশ টিকেট ২০ টাকা । আড্ডা ও সময় কাটানোর জন্য অনেক ভালো একটা জায়গা । অহরহ বহুত জুটির ভালোবাসা বিনিময়, এখানে দেখতে পাবেন! দিঘিতে গোসল করে, কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম । মাংস-ভাত-ডাল-ভর্তা জনপ্রতি ১৪০ টাকা ।

তারপর বিকেলের দিকে চলে গেলাম গুটিয়া মসজিদ । দিঘি টু গুটিয়া মসজিদ ১৫-২০ টাকা নিবে । এক কথায়, এতো সুন্দর মসজিদ আমি নিজ চোখে আর দেখিনি । এলাকার এক মুরুব্বীর সাথে পরিচয় হওয়াতে মসজিদের ভিতর, মাদ্রাসা সব ঘুরিয়ে দেখালেন উনি । আসরের নামাজ মসজিদে পড়ার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার । বিশাল এলাকা জুড়ে মসজিদের পুকুর, অনেক উঁচু মিনার, ভিতর-বাহিরের কারুকাজ আমাকে বিমোহিত করেছে । মসজিদ এরিয়ার বাইরে গুটিয়ার সন্দেশ পাওয়া যায় । খেতে ভালো, তবে, আহামরি নয় ।

তারপর মাহেন্দ্রা করে চলে আসলাম বরিশাল লঞ্চ ঘাটে । ৪০ টাকা নিয়েছিল । বাইরে হালকা খাবার খেয়ে রাতের জন্য খাবার নিয়ে নিলাম । লঞ্চঘাট প্রবেশ ৫ টাকা । ডেক ভাড়া ১৫০ টাকা । লঞ্চ ছাড়ল ৯.৩০ টায় এবং সদরঘাট পৌঁছলাম সকাল প্রায় ৭ টার দিকে । বেশি দেরি হওয়ার কারণ হল, কিছুক্ষণ চরে আঁটকে থাকা এবং সম্ভবত পানির বিপরীতমুখী টান । লঞ্চঘাট থেকে বাহির হয়ে হালকা সকালের নাস্তা খেয়ে নিলাম, ৪০ টাকা করে । তারপর লঞ্চঘাট টু বাসা ৩০ টাকা ।

দৃষ্টি আকর্ষণঃ-

১। আমরা বেশি আগে যাওয়াতে আটঘর-কুরিয়ানার পেয়ারা বাজার অনেকটাই মিস করেছি । সাজেশন থাকবে, ৯ টার দিকে ট্রলারে উঠবেন । তাহলে সবকয়টা পেয়ারা বাজার ভালমতো পাবেন । সাধারণত ১০-১ টা পর্যন্ত পেয়ারা বাজার সবচেয়ে ভালো জমে ।

২। গুটিয়া মসজিদ ঢুকার রাস্তা সাধারণত বিকেল ৩-৪.৩০ এবং সকাল-দুপুরের নামাজ পর্যন্ত অফ থাকে । বিকেলের দিকে গুটিয়া মসজিদ গিয়ে, সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকার চেষ্টা করবেন । তাহলে দিন ও রাতের আলাদা সৌন্দর্য দেখতে পাবেন । রাতে মসজিদটি অনেক সুন্দর আলোকিত । মুসলিম হলে নামাজ পড়তে ভুলবেন না ।

৩। ডেকের ও কেবিনের ভাড়া, মানুষের ভিড় অনুযায়ী পরিবর্তিত হয় । ঈদ অথবা ছুটির দিনের আগে ভাড়া বেশি পরবে । তখন ডেক ভাড়া ২০০-২৫০ এবং কেবিন সিঙ্গেল ৯০০-১২০০ এবং ডাবল ১৬০০-৫০০০ টাকা পরবে । অন্যসব দিনে কেবিন সিঙ্গেল ৫০০-৬০০ এবং ডাবল ১০০০-১২০০ দিয়েও পাবেন ।

৪। সাধারণত সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের পর পেয়ারা বাজার তেমন জমবে না । তাই, কারো এই বছরে ইচ্ছা থাকলে, এই সময়ের মধ্যে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ ।

বিশেষ সতর্কতাঃ- ময়লা-আবর্জনা পানিতে অথবা যেকোনো স্থানে না ফেলে, নির্ধারিত স্থানে ফেলুন । ট্যুরিস্ট স্পট গুলো আমাদের সম্পদ । তাই, সৌন্দর্য রক্ষার দায়িত্বও আমাদেরই ।

Picture CREDIT : Amdad Hossain