২ দিনের সিতাকুন্ড ট্যুর (রিভিউ)

২ দিনের সিতাকুন্ড ট্যুর

লিখেছেন : Nahid Hossain

ভ্রমন স্থান :
১ম দিন : মহামায়া লেকে কায়াকিং + সিতাকুন্ড ইকোপার্কে সুপ্তধারা এবং সহস্রধারা ১ ঝর্না
২য় দিন : চন্দ্রনাথ পাহাড় + গুলিয়াখালী বীচ + বাশবাড়িয়া সী বীচ + কুমিরা ঘাট

১ম দিন :
প্ল্যান ছিল মনপুরা অথবা নিঝুম দ্বীপ যাব কিন্তু যখন ছোট ভাইরা প্রশ্ন করল “ওখানে কি দেখতে যাব??? গ্রাম জঙ্গল আর নদী তো গ্রামের বাড়িতে গেলেই দেখা যায়” তখন আর কোন উত্তর দিতে পারলাম না তাই নতুন প্ল্যান করলাম সিতাকুন্ড যাওয়ার যদিও সেটা সহজ ছিল না কারন আমাদের গ্রুপের ৬ জনের মধ্যে ১ জন ছিল মেয়ে আর বাকি ৫ জন ছেলে সদস্যের মধ্যে ১ জন ৯ম শ্রেনিতে এবং বাকি ২ জন ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে এবং আমি ছাড়া কারোরই আগে পাহাড়ে উঠার অভিজ্ঞতা নেই। সারা রাত্র জার্নি করে পরের দিন চন্দ্রনাথ পাহাড়ে ট্রেকিং করাটা সহজ হবে না তাই ২৬ তারিখ বিকালে রওনা দেয়ার প্ল্যান করলাম যাতে রাত্রে পৌছে হোটেলে কিছুটা সময় ঘুমিয়ে নিতে পারি কিন্তু সরাসরি বাসে সিতাকুন্ড গেলে বাস ভাড়া লাগবে ৪৭০ টাকা তাই বাসে ফেনী মহিপাল গিয়ে সেখান থেকে সিতাকুন্ড যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। ভ্রমনের দিন সকালে ছোট ভাইকে টিকিট কাটতে পাঠালাম কমলাপুরের স্টার লাইন কাউন্টারে কিন্তু বৃহস্পতিবার হওয়াতে স্টার লাইনের টিকিট না পেয়ে এনা পরিবহনে বিকাল ৫ টার টিকিট কাটলাম। ভাড়া – ২৭০ টাকা। আপনারা চাইলে মেইল ট্রেনেও সরাসরি সিতাকুন্ড যেতে পারেন সেক্ষেত্রে ভাড়া মাত্র ১১০ টাকা।
বিকাল ৫ টায় আমাদের যাত্রা শুরু হল ঢাকার কমলাপুর থেকে। ফেনী পৌছলাম রাত্র ১০.৩০। ফেনীতেই রাতের খাবার খেয়ে সিতাকুন্ড যাওয়ার বাসে উঠলাম তখন রাত্র ১১.৩০। বাসে আমরা যাত্রী ৮-১০ জন এবং পুরো বাস না ভরলে বাস ছাড়বে না তাই লোকাল বাস থেকে নেমে ঢাকা থেকে কক্সবাজার গামী অন্য একটি বাসে উঠলাম যেটাতে সিতাকুন্ড পর্যন্ত ভাড়া নিয়েছিল ১০০ টাকা যদিও লোকাল বাসে রেগুলার ভাড়া ৬০-৭০ টাকা। সিতুকুন্ড যখন পৌছালাম তখন রাত্র ১.৩০ এবং প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল। সিতাকুন্ডে হোটেল আছে মোট চারটি (সাইমুন, সৌদিয়া, জলসা, সন্দিপ) যার কোনটাই ভাল মানের না এবং বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার ভাড়াও অনেক বেশি নেয় তাই আগেই এক পরিচিত বড় ভাইয়ের মাধ্যমে ইপসা গেষ্ট হাউজের রুম বুক করে রাখি যেটা সিতাকুন্ড বাজার থেকে ১ কি.মি. দূরে। আমরা দিনপ্রতি ১৩০০ (৮০০ + ৫০০) টাকা করে ২ দিনের জন্য ২ রুম নেই। ১ রুমে ছিল ৪টি সিঙ্গেল বেড এবং আরেক রুমে ছিল ১টা ডাবল বেড।

রাত্রে ৪ ঘন্টার মত ঘুমিয়ে যখন ভোর ৭ টায় চন্দ্রনাথের জন্য বের হই তখন প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল। সিতাকুন্ড বাজারে নাস্তা করার সময় প্রচুর ট্রাভেলার দেখলাম যাদের বেশির ভাগই চন্দ্রনাথে যাবে। এই বৃষ্টিতে পাহাড়ের ছোট রাস্তায় বেশি মানুষ হাটলে কাদা বেশি হবে এবং আমাদের হাতে আরেকটা ‍দিন ছিল তাই আমরা চন্দ্রনাথ না গিয়ে মহামায়া ইকোপার্ক চলে গেলাম। সিতাকুন্ড বাজার থেকে মহামায়া লেক যাওয়ার জন্য লোকাল বাসে না উঠে লেগুনায় উঠলাম। ভাড়া জন প্রতি ৪০ করে নিল, সময় লাগল ৩০-৪০ মিনিট। ঠাকুরদিঘীর বাজারে নেমে রোড ক্রস করে আমরা ৮০ টাকা দিয়ে সি.এন.জি রিজার্ভ নিলাম মহামায়া ইকোপার্কের উদ্দেশ্যে। মহামায়া ইকোপার্কে এন্ট্রি টিকিট নিল ১০ টাকা। সকাল টাইমে ভীড় কম হওয়াতে যাওয়া মাত্রই বোট পেয়ে গেলাম। কায়াকিংয়ের ভাড়া ঘন্টা প্রতি ৩০০ টাকা আর স্টুডেন্ট হলে ২০০ টাকা। আমাদের গ্রুপে ৫ জন স্টুডেন্ট ছিল কিন্তু শুক্রবার হওয়াতে ২০০ টাকার পরিবর্তে ২৫০ টাকা চাইল। দামাদামি করে ৭০০ টাকায় ৩ টা কায়াকিং বোট নিলাম। চারদিকে পাহাড় আর লেকের স্বচ্ছ নীল পানিতে কায়াকিং করার অনুভূতি লিখে বোঝানো সম্ভব না। কায়াকিং করেই চলে আসবেন না। বামপাশের রাস্তা ধরে কিছুটা উপরে উঠলে অসাধারন একটা ভিউ পাওয়া যায়। কিছুটা সময় কাটিয়ে একই পথে চলে আসলাম সিতাকুন্ড বাজার। বাজারে হালকা নাস্তা করে ৫ টাকা দিয়ে লেগুনায় চড়ে ইকোপার্ক নামলাম। মেইনরোড ৫-১০ মিনিট হাটলে ইকোপার্কের গেট। আমরা মেইন রোড থেকেই ৬০০ টাকায় সি.এন.জি ঠিক করলাম, সহস্রধারা ১ এবং সুপ্তধারা দুটা ঝর্না ঘুরিয়ে আনবে। ইকোপার্কের প্রবেশ ফি জনপ্রতি ২০ টাকা এবং সি.এন.জি পার্কিং ফি ৫০ টাকা। প্রথমে গেলাম উপরের ঝর্না সহস্রধারায়। সি.এন.জি আমাদের নামিয়ে দিল ঝর্নার সিড়ির সামনে। তারপরে সিড়ি দিয়ে ১০-১৫ মিনিট নামার পর দেখা পেলাম সহস্রধারার। গত কিছু দিন বৃষ্টি হওয়ার কারনে ঝর্নায় পানি অনেক বেশি ছিল। ঝর্নাতে ৩০ মিনিট গোছল করে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে সি.এন.জি তে চলে গেলাম সুপ্তধারাপ সিড়ির কাছে। সুপ্তধারায় যাওয়ার জন্য বাশ নিলাম ২০ টাকা করে, যাওয়ার সময় বাশ ফেরৎ দিলে ১০ টাকা দিয়ে দিবে। সুপ্তধারা রাস্তাটা সহস্রধারার মত এতটা সহজ না। ৩ টা ঝিরি পথ পার হয়ে যেতে হয়। শেষের ঝিড়িতে বৃষ্টির কারনে কোমড় সমান পানি ছিল। সুপ্তধারার ঝর্নাটি প্রথম দেখে অবাক হলাম। এত অল্প সময় হাটার পর এরকম একটা ঝর্নার দেখা পাওয়া সত্যিই অবিচার যেখানে হাম হাম দেখার জন্য আমাদের ট্রেকিং করতে হয়েছিল ২-২.৫ ঘন্টা। ইউটিউবে দেখেছিলাম ঝর্নাতে ৩টি রাস্তা দিয়ে পানি পড়ে কিন্তু অতিরিক্ত বৃষ্টি থাকার কারনে ৬/৭ টি রাস্তা দিয়ে পানি পড়ছিল। ঝর্নার বিশলতা আপনাকে মুদ্ধ করবে। ‍ঝর্নার সামনে পানির অনেক স্রোত ছিল, সেটা পার হয়ে অপর পাশে ঝর্নার নিচ পর্যন্ত যাওয়া যায়। ঝর্না দেখতে দেখতে কখন যে ৪ টা বেজে গেল টেরই পেলাম না। হোটেলে ব্যাক করে দুপুরের খাবার খেতে খেতে বেজে গেল ৬.০০টা। বিকালে গুলিয়াখালী যাওয়ার প্ল্যন থাকলেও আর সম্ভব হল না। রাত্রে সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেলাম কারন পরের দিন ৪ টা স্পট ঘুরতে হবে।

২য় দিন:
ভোর ৫ টা বাজে ঘুম থেকে উঠেও হোটেল থেকে বের হতে বেজে গেল ৬.১৫। ৫.৩০ থেকেই বৃষ্টি নামতে শুরু করল। আস্তে আস্তে বৃষ্টি এবং মনের ভয় দুটোই বাড়তে শুরু করল। আজকে চন্দ্রনাথে না উঠে আর উপায় নেই। সকালের নাস্তা শেষ করে ১২০ টাকায় সি.এন.জি নিলাম পাহাড়ের নিচ পর্যন্ত। বৃষ্টির মধ্যে কিভাবে উঠব ১২০০ ফুট তা ভাবতে ভাবতে পৌছে গেলাম পাহাড়ের পাদদেশে। ৫০০ টাকা দিয়ে একটা গাইড ঠিক করলাম। যদিও গাইডের দরকার নেই (পাহাড়ে পড়ে থাকা স্যালাইন, বোতল ও বিস্কুটের প্যাকেট ধরে এগুতে থাকলে চন্দ্রনাথ চূড়ায় পৌছে যাবেন) কিন্তু দলের সবাই প্রথম বার পাহাড়ে ট্রেকিং করবে তাই রিস্ক নিতে চাই নি। সাথে থাকা ৬ টা ১.২৫ লিঃ পানির বোতল গাইডের কাধে দিয়ে এবং ২০ টাকা দিয়ে বাশ কিনে আমরা শুরু করি মিশন চন্দ্রনাথ। ৩০ মিনিট হাটার পর পেলাম একটা ঝর্না যার দু পাশে দুটো রাস্তা উপরে উঠে গেছে। দুটো দিয়েই চূড়ায় যাওয়া যায়। বামপাশের রাস্তাটায় সময় বেশি লাগলেও কষ্ট কম হয় তাই বাম পাশ দিয়ে উঠা শুরু করলাম। গ্রুপে চন্দ্রনাথ নিয়ে যতগুলো পোষ্ট দেখেছিলাম সবগুলোতেই বলা ছিল চন্দ্রনাথের ট্রেকিং টা অনেক কষ্টের। তাই গাইডকে শুরুতেই বলে রেখেছিলাম যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে আর কত দূর বলতে হবে “এইতো, আর অল্প একটু” । 😁😄😄 দুইবার ১০ মিনিট করে রেষ্ট নেবার পর এবং অর্ধেক পানি শেষ করার পর আমরা যখন বিরুপাক্ষ মন্দির পৌছলাম তখন আমাদের শরীর এবং মন দুটোর শক্তিই প্রায় শেষ। একটা পর্যায়ে যখন আমি গাইডকে জিজ্ঞাসা করলাম ” মামা আর কত দূর” তখন সে আমাকেও বলল “এইত, আর অল্প একটু😀😃” বিরুপাক্ষ থেকে অল্প একটু করতে করতে আমরা ৩০ মিনিটের মত ট্রেকিং করে পৌছে গেলাম চন্দ্রনাথের চূড়ায়। চূড়ায় উঠার পর যে ভিউ টা পেলাম সেটা মনে হয় আমার দেখা শ্রেষ্ঠ ভিউ। চারপাশে সাদা মেঘ তুলার মত ভাসতে দেখলাম, চন্দ্রনাথের চূড়াটাকে মনে হচ্ছিল সাদা মেঘের সমূদ্রে ভাসমান একটা দ্বীপের মত। ১ ঘন্টা মন্দিরেরে আশেপাশে সময় কাটানোর পর যখন নীচে নামার সময় হল তখন মনে হচ্ছিল এখানে একটা ঘর বানিয়ে থেকে যাই। আরও ৩টা স্পট ঘুরতে হবে তাই দেরি না করে নামতে শুরু করলাম। নামার সময় দেখলাম অনেকেই এই সিড়ি পথ দিয়ে উঠছে আর ওয়াদা করছে আর কোনদিনে উঠবে না চন্দ্রনাথে। প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী পাহাড়ের চূড়ায় উঠে অথচ কোথাও কোন সাইনবোর্ড বা দিক নির্দেশনা দেখলাম না। ঝর্নার পথে যেখানে ২ টা রাস্তা দুদিকে উঠে গেছে সেখানে একটা দিক নির্দেশনা দিয়ে দিল মানুষ গুলোর এত কষ্ট হত না। ৫০ মিনিট নিচে নামার পর আমরা চলে আসলাম পাহাড়ের নিচে। ৫০০ টাকায় সি.এন.জি ভাড়া করে আমরা গুলিয়াখালীর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। সি.এন.জি থেকে নেমে ১৫ মিনিট হাটার পর আমরা সমূদ্রের কাছে গেলাম। কিছুক্ষন ছবি তুলার পর আমরা যখন ফিরতি পথে হাটা শুরু করলাম ততক্ষনে জোয়ারের পানি ঢুকে ফেরার রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের ভাগ্য ভাল ছিল ওখানে একটা বোট ছিল। জনপ্রতি ২০ টাকা দিয়ে পাড়ে চলে আসি। গুলিয়াখালী থেকে গেষ্ট হাউজে ফিরে এসে রুম ছেড়ে দেই এবং বাশবাড়িয়ার, কুমিরা ঘাটের জন্য বের হই । দুপুরের খাবার থেয়ে জনপ্রতি ১৫ টাকায় লেগুনাতে বাশবাড়িয়া বাজার চলে যাই । সেখান থেকে ৯0 টাকায় সি.এন.জি নিয়ে বাশবাড়িয়া সৈকতে যাই। বাশবাড়িয়ার মূল আকর্ষন হচ্ছে সমূদ্রের উপর ব্রীজ যেটা এখন বন্ধ। এলাকার চ্যায়ারম্যান এবং বসুন্ধরা গ্রুপ ব্রীজের মালিকের বিরুদ্ধে কেস করাতে কবে খুলবে তারও কোন ঠিক নেই। সেখানে বেশি সময় না কাটিয়ে আমরা চলে যাই কুমিরা ঘাটে। বাশবাড়িয়া বাজার থেকে ১0/১৫ টাকায় বড় কুমিরা বাজার যেতে হয়। বড় কুমিরা বাজার থেকে ১০ টাকায় ঘাটে যেতে হয়। বিকালটা কাটানোর জন্য এর থেকে ভাল কোন প্লেস মনে হয় না আছে। ব্রীজের শেষ মাথায় সমূদ্রের কাছে বসে কিছু সময় কাটালে সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। সন্ধ্যার আগেই রওনা দেই সিতাকুন্ড বাজারের উদ্দেশ্যে। বাজার থেকে লোকাল বাসে ৭০ টাকা ভাড়া দিয়ে ১.৪0 মিনিটে আমরা ফেনী চলে আসি। ফেনীতে এসে ঢাকায় যাওয়ার জন্য এনার এসি বাসের টিকিট কাটি। ভাড়া ৪০০ টাকা। স্টার লাইনের এসির ভাড়া ৩৫০।

পুরো ট্যুরের ছবি দেখতে পারেন নিচের লিঙ্কে
https://www.facebook.com/Nahidcr7hossain/posts/2066660786884778

পুরো ট্যুরে আমাদের খরচ হয়েছিল ২৭৬০ টাকা। গাইড না নিলে এবং এসি বাসে না আসলে ২৫০০ টাকায় হয়ে যেত।

যারা যাওয়ার প্ল্যান করছেন তাদের জন্য খরচের একটা আনুমানিক হিসাব দিয়ে দিলাম
বাস : –
ঢাকা – সিতাকুন্ড – নন এসি ৪৭০ টাকা
ঢাকা – ফেনী, মহিপাল – নন এসি ২৭০, এসি – ৩৫০ (স্টারলাইন) ৪০০ (এনা) — কমলাপুর, সায়দাবাদ থেকে প্রতি ৩০ মিনিট পর পর বাস আছে
ট্রেন – চট্টগ্রাম মেইল ভাড়া – ১১০

হোটেল : – ৪ টি হোটেল আছে সিতাকুন্ড বাজারে (সাইমুন, সৌদিয়া, জলসা, সন্দিপ)।শুক্র, শনি বাদে গেলেে এবং দামাদামি করলে ভাড়া কমে পাবেন। কুমিরা ঘাটের সামনে একটা হোটেল আছে যেটায় ভাড়া কম কিন্তু সেটা থেকে অন্যান্য জায়গায় ঘুরতে কষ্ট হবে।
সব থেকে ভাল হয় যদি কোন পরিচিত লোকের মাধ্যমে গেষ্ট হাউজের ব্যবস্থা করতে পারেন। গেষ্ট হাউজের পরিবেশ হোটেলের তুলনায় অনেক ভাল।

খাওয়া :-
সিতাকুন্ড বাজারে সবথেকে ভাল হোটেল সৌদিয়া
সকালের নাস্তা – ৩০ – ৪০
দুপুরের খাবার – ৫০ – ১০০
রাতের খাবার – ৫০ – ১০০
নাস্তা – ৪০ – ৫০

মহামায়া লেক :-
সিতাকুন্ড বাজার – ঠাকুরদিঘী বাজার – লেগুনা – ৪০ ( বাসে ভাড়া আরও কম কিন্তু সময় লাগবে বেশি)
ঠাকুরদিঘী বাজার – মহামায়া লেক – সিএনজি – 5
এন্টি ফি – ১০
কায়াকিং চার্জ – 150 (সবার জন্য ) 100 (স্টূডেন্টদের জন্য)
মহামায়া লেক – ঠাকুরদিঘী বাজার – সিএনজি – 15
ঠাকুরদিঘী বাজার – সিতাকুন্ড বাজার – লেগুনা – ৪০

সিতাকুন্ড ইকোপার্ক :-
সিতাকুন্ড বাজার – ইকোর্পাক গেইট – লেগুনা – ৫/১০
২টা ঝর্নায় যাওয়া ও আসা – সিএনজি – ৫০০ – ৬০০ টাকা রিজার্ভ
এন্টি – 20
সিএনজি পার্কিং – ৫০ (প্রতি সিএনজি)
লাঠি – 10
ইকোপার্ক – সিতাকুন্ড বাজার – ৫/১০

চন্দ্রনাথ পাহাড় :-
সীতাকুণ্ড বাজার – চন্দ্রনাথ পাহাড় – সিএনজি – ২০
বাশ – ১0
গাইড – ৫০০ (প্রয়োজন নেই কিন্তু গ্রুপে মেয়ে সদস্য বেশি হলে অথবা যারা প্রথমবার ট্রেকিং করছেন তারা নিতে পারেন)
চন্দ্রনাথ পাহাড় – সিতাকুন্ড বাজার – সিএনজি – ২0
স্যালাইন + শুকনো খাবার – ৫০ – ৭০ জনপ্রতি

গুলিয়া খালী সী বীচ :-
সিতাকুন্ড বাজার – গুলিয়াখালী – সিএনজি – ৩০/৩৫
ব্রীজ পারাপার – ৫
গুলিয়াখালী – সিতাকুন্ড বাজার – সিএনজি – ৩০/৩৫

বাশবাড়িয়া :-
সিতাকুন্ড বাজার – বাশবাড়িয়া বাজার – লেগুনা – ১৫
বাশবাড়িয়া বাজার – বীচ – সিএনজি – ১৫/২০
বীচ – বাশবাড়িয়া বাজার – সিএনজি – ২০
ব্রীজে উঠার টিকিট – ২০/৩০ (আপাতত বন্ধ)

কুমিরা ঘাট :-
বাশবাড়িয়া বাজার – বড় কুমিরা বাজার – লেগুনা – ১০/১৫
বড় কুমিরা বাজার – কুমিরা ঘাট – অটো -১০
কুমিরা ঘাট – কুমিরা – ১০
কুমিরা – সিতাকুন্ড বাজার – সিএনজি – ৩০/৩৫

 শুক্র, শনি বাদে গেলে এবং দামাদামি করে উপরের অনেক ক্ষেত্রেই খরচ কিছুটা কমাতে পারবেন… 

পুরো ট্যুরের জন্য ধন্যবাদ জানাই স্বপন ভাইকে যে আমাদের ইপসা গেষ্ট হাউজে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন এবং টিওবি গ্রুপের ওই সব মেম্বারদের যারা সিতাকুন্ড নিয়ে পূর্বে পোষ্ট করেছেন …

পুরো ট্যুরের ছবি দেখতে পারেন নিচের লিঙ্কে
https://www.facebook.com/Nahidcr7hossain/posts/2066660786884778

বিৎদ্রঃ
১) সিতাকুন্ড যাওয়ার আগের দিন জানতে পারলাম সিতাকুন্ডে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। টেনশন হচ্ছিল এই বৃষ্টিতে কিভাবে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে উঠব। কিন্তু ট্যুর শেষে এখন মনে হচ্ছে বৃষ্টি না থাকলে ট্যুরটা এতটা মজার হতনা। বৃষ্টি হলে ঝর্নার পানি এবং সৌন্দর্য দুটোই বেড়ে যায়। বৃষ্টির কারনে চন্দ্রনাথের পাহাড়ে ট্রেকিং করাটাও তেমন কষ্টের মনে হয়নি। উল্টো রোদ থাকলে হয়ত কষ্ট বেশি হত।
২) গুলিয়াখালী, বাশবাড়ীয়া এই দুটো জায়গায় বিকালে ভাটার সময় যাবেন, আমরা দুপুর ১২টায় গুলিয়াখালী গিয়েছিলাম যখন জোয়ার শুরু হয় যে কারনে বেশি সময় কাটাতে পারিনি।
৩) চন্দ্রনাথ, খৈয়াছড়া, নাপিত্তাছড়ায় ট্রেকিং করার জন্য গুলিস্থান থেকে পিয়ারসন অথবা পেগাসাসের ট্রেকিং জুতা কিনে নিতে পারেন। দাম পড়বে ১৩০/১৪০ টাকা।
৪) ট্রেকিং এর সময় জোক ধরলে ভয়ের কিছু নেই। পাহাড়ে জোক ধরাটা স্বাভাবিক ব্যাপার তাই আতঙ্কিত না হয়ে শক্ত কিছু দিয়ে জোকটাকে সরিয়ে ফেলুন অথবা ট্রেকিং এ যাবার পূর্বে লবন কিনে নিন। ( আমি ট্রেকিং শেষে যখন হোটেলে ফিরে এসে গোসল করছিলাম তখন পায়ে জোক পাই, রক্ত পড়া কোন ভাবে বন্ধ করতে পারছিলাম না পরে ছোট ভাইয়ের পরামর্শ অনুযায়ী একটু ভেসলিন লাগিয়ে দিলাম আর রক্ত বন্ধ হয়ে গেল)
৫) শুক্রবার, শনিবার বাদে যাওয়ার প্লান করুন। কম দামে হোটেল পাবেন। শুক্রবার প্রচুর ট্রাভেলার চন্দ্রনাথে ভ্রমনে যায় তাই এই দিনটিতে না যাওয়াই ভাল।
৬) ৫/৬ জনের গ্রুপ পারফেক্ট কারন সেখানে প্রায় সব জায়গাতে যাওয়ার জন্য আপনাকে সিএনজি নিতে হবে।

চন্দ্রনাথে যাওয়ার সময় পাহাড়ের পুরো রাস্তাটায় স্যালাইনের প্যাকেট, পলিথিন, চিপস, বিস্কাটের প্যাকেট ও বোতল পড়ে থাকতে দেখলাম। ইকোপার্কের সুপ্তধারা ও সহস্রধারা ঝর্নার সিড়িপথের দুপাশে অসংখ্য চিপসের প্যাকেট, বোতল ও খাবারের প্যাকেট পড়ে ছিল।
একবার ভাবুন প্রতিদন হাজার হাজার মানুষ এই জায়গাগুলোতে ভ্রমনে যাই। সবাই যদি একটি করে প্যাকেট বা বোতল ফেলে আসি তাহলে ৫/১০ বছর পর এ জায়গাগুলোর কি অবস্থা হবে। তাই যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা বন্ধ করুন।
চন্দ্রনাথে উঠার সময় দেখলাম অনেকেই ট্রেকিং এর সময় এবং মন্দিরের সামনে উচ্চস্বরে আওয়াজ এবং চিৎকার করছিল। একজন চিৎকার করলে তারটা শুনে আরও দুচার জন চিৎকার করে গলার জোড় প্রমান করছিল। ভুলে যাবেন না চন্দ্রণাথ শুধু একটা পাহাড় না, এটা একটা ধর্মীয় উপাসনা স্থান।